যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

যে কাজ দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয়

মৃত্যুর কথা স্মরণ করলে দুনিয়ার আকর্ষণ কমে যায়। আখেরাতের স্মরণ অন্তরে জাগরুক হয়। নেক আমলে আগ্রহ বাড়ে। তাই কোরআনে বারবার মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে মানুষ কিছুতেই মৃত্যু থেকে পালাতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُلۡ اِنَّ الۡمَوۡتَ الَّذِیۡ تَفِرُّوۡنَ مِنۡهُ فَاِنَّهٗ مُلٰقِیۡكُمۡ ثُمَّ تُرَدُّوۡنَ اِلٰی عٰلِمِ الۡغَیۡبِ وَ الشَّهَادَۃِ فَیُنَبِّئُكُمۡ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ বল যে মৃত্যু হতে তোমরা পলায়ন করছ তা অবশ্যই তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে। তারপর তোমাদেরকে অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্পর্কে পরিজ্ঞাত আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তারপর তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করতে। (সুরা জুমআ: ৮)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,[

 

كُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَكُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী। (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)

হাদিসে মৃত্যুর কথা আলোচনা করতে, মৃত্যু স্মরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

أكثِرُوا ذكرَ هادِمِ اللذَّاتِ . يعني : الموتَ তোমরা স্বাদ হরণকারী বিষয় অর্থাৎ মৃত্যুর আলোচনা বেশি বেশি কর। (সুনানে তিরমিজি: ২৩০৭)

আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবর জিয়ারত করতে নির্দেষ দিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে, এটা দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয় ও পরকালের কথা স্মরণ করায়। অর্থাৎ মৃত্যুর কথা স্মরণ করার কারণে আখেরাতের স্মরণও অন্তরে জাগরুক হয়।

কবরস্থানে গিয়ে অতিরিক্ত আবেগ প্রকাশ ও শরিয়ত-নিষিদ্ধ কাজকর্ম ঠেকাতে একবার রাসুল (সা.) কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে তিনি বলেন,

كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُزَهِّدُ فِي الدُّنْيَا وتذكر الْآخِرَة আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত কর। কারণ কবর জিয়ারত দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয় ও পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজা: ১৫৭১)

রাসুল (সা.) মাঝে মাঝেই সাহাবিদের কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করতেন। কবরবাসীদের সালাম দিতেন, তাদের জন্য দোয়া করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবিজি (সা.) কবরবাসীদের এভাবে সালাম দিতেন ও দোয়া করতেন,

السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবূরি ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আসারি। অর্থ: হে কবরবাসী, তোমাদের ওপর শান্তি বৰ্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিন, (পরকালের যাত্রায়) তোমরা আমাদের আগে গেছ আর আমরাও তোমাদের অনুসরণ করবো। (সুনানে তিরমিজি: ৫৯৬)

আমাদেরও উচিত মাঝে মাঝে কবরস্থানে যাওয়া। কবরবাসীদের সালাম দেওয়া, তাদের জন্য দোয়া করা। মৃত্যু যে অবশ্যম্ভাবি এবং কবরই আমাদের চূড়ান্ত ঠিকানা তা সর্বান্তকরণে উপলব্ধি করা, বারবার স্মরণ করা। এতে আমাদের অন্তরে দুনিয়ার আকর্ষণ কমে গিয়ে আখেরাতের স্মরণ জাগরুক হবে যা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে সহায়ক। নেক আমলের জন্য সহায়ক।