সাদকায়ে জারিয়া। যে সাদকা বা দানের ফজিলত মৃত্যুর পরও থাকে চলমান। হাদিসে পাকে সাদকায়ে জারিয়ার অন্যতম কয়েকটি খাতের কথা এসেছে। কিন্তু গাছ লাগানোও কি সাদকায়ে জারিয়া? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?
গাছ লাগানো সাদকায়ে জারিয়ার আমল। হোক তা ফলজ, বনজ কিংবা উপকারি যে কোনো কাজ। যে গাছ থেকে মানুষ, পশু-পাখি কিংবা পরিবেশের উপকার হয়ে থাকে। তাই গাছ লাগানো তথা বৃক্ষরোপন পরকালের জন্য হতে পারে একটি সাওয়াবের গাছ পাওয়ার আমল।যদি কেউ মানুষ কিংবা প্রাণীকূলের উপকার সাধনের লক্ষ্যে ফলজ বা বনজ গাছ রোপণ করে এবং এর মাধ্যমে সাওয়াব আশা করে, তবে এটি একটি উত্তম সাদাকায়ে জারিয়াহ; যার সাওয়াবের ধারা ব্যক্তির মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকবে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তাহলে তা ওই ব্যক্তির জন্য সাদাকাস্বরূপ। (বুখারি, মুসলিম)
কেননা দুনিয়ার জীবনে করে যাওয়া কাজ যদি মানুষের মৃত্যুর পরও অন্য কারো উপকারে আসে; সেটিই হলো সাদকায়ে জারিয়ার আমল। তাছাড়া হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়; তবে তিন প্রকার আমল ছাড়া-
১. সাদাকায়ে জারিয়াহ।
২. এমন ইলম বা জ্ঞান যার দ্বারা অন্যের উপকার হয়।
৩. পুণ্যবান সন্তান; যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে। (মুসলিম)
হাদিসের এই দৃষ্টিকোন থেকে গাছ লাগানোসহ মসজিদ-মাদরাসা, রাস্তা-ঘাট ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাও সাদকায়ে জারিয়ার অন্যতম খাত। এসব খাতে দানের উপকারিতা স্থায়ী বা দীর্ঘ মেয়াদী হয়। তাই এগুলো সাদাকায়ে জারিয়াহ।বনায়ন বা গাছ লাগানোর উপকারিতা ও সাওয়াব পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় যে ব্যক্তি ফলজ ও বনজ গাছ রোপন করে; সে গাছের ছায়া, অক্সিজেন এবং গাছের ফল দ্বারা মানবকূলসহ পাখ-পাখালি উপকৃত হয়। যতদিন এ ধারা অব্যাহত থাকবে ততদিন পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে। এর সাওয়াব তার আমলনামায় লেখা হতে থাকবে। এ সম্পর্কেও রয়েছে হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা। তাহলো-
১. হজরত জাবির রাদিয়ল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলিম যদি বৃক্ষরোপণ করে আর তার কোনো ফল কোনো ব্যক্তি খায় তবে ওই ফল তার জন্য সাদকা, কোনো ভয়ংকর জন্তু-জানোয়ার খেলেও তা তার জন্য সাদকা, যদি কোনো ব্যক্তি চুরি করেও খায় তা তার জন্য সদকা, কোনো পাখিও খায় তাও তার জন্য সদকা। এমনকি যদি কোনো ব্যক্তি তা কেটে ফেলে তাও তার জন্য সাদকা। (মুসলিম)
২. অন্য হাদিসে রয়েছে,কোনো ব্যক্তি বৃক্ষরোপণ করে তা ফলবান হওয়া পর্যন্ত তার পরিচর্যা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফল যদি নষ্টও হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তাকে সাদকার নেকি দেবেন। (মুসনাদে আহমাদ)
৩. হাদিসে আরও বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করে, আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তাকে ওই বৃক্ষের ফলের সমপরিমাণ প্রতিদান দেবেন। (মুসনাদে আহমাদ)
গাছ লাগানোর গুরুত্ব আরও অনেক বেশি। যা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসেই প্রমাণিত- হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কেয়ামত এসে গেছে; আর তখনও হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে। (বুখারি, আদাবুল মুফরাদ, মুসনাদে আহমাদ)
উল্লখিত হাদিসের আলোকে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, গাছ লাগানোও সাদকায়ে জারিয়া। কেননা এ গাছ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে। এ গাছ থেকে দীর্ঘদিন প্রকৃতি-পরিবেশ, মানবকুল, পশু-পাখি উপকৃত হতে থাকে। যার ফলে গাছ রোপনকারী বিনিময়ে পেতে থাকে সাদকার প্রতিদান।সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মৃত্যুর আগে সাওয়াবের উদ্দেশে গাছ লাগানো। গাছ লাগানোর মাধ্যমে সাদকায়ে জারিয়ার আমল বেশি বেশি করা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গাছ লাগানোর মাধ্যমে সাদকায়ে জারিয়ার আমল করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।