যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

সব ধরনের নেশাদ্রব্যই কি হারাম?

এ আয়াতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজে অংশগ্রহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাহলে কি অন্য সময় নেশাজাতীয়দ্রব্য গ্রহণ করা যাবে?

না কোনো অবস্থায়ই নেশাজাতীয় কোনো দ্রব্যই গ্রহণ করা যাবে না। ইসলামে নেশাজাতীয় দ্রব্য কম হোক বেশি হোক গ্রহণ করা হারাম। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এটি সুস্পষ্ট। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণের পরিমাণের কথা সুস্পষ্ট করে বলেছেন। নেশার পরিমাণ ও নেশা গ্রহণ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সব ধরণের নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য হারাম। যে দ্রব্যের এক ফারাক (মশক) পরিমাণ (পানে) নেশা সৃষ্টি হয়, তার এক আঁজল (হাতের কোশ) পরিমাণও হারাম। (তিরমিজি)

২. অন্য বর্ণনায় এসেছে, এক ঢোক পরিমাণ (নেশা) পান করাও হারাম।

৩. হজরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে দ্রব্যের বেশি পরিমাণ (পান করলে) নেশার সৃষ্টি করে, তার অল্প পরিমাণও (পান করা) হারাম। (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)

মনে রাখা জরুরি নেশা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় মহামারি। যুবক সমাজ থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব বয়সের অনেক মানুষ নেশায় আসক্ত। গাঁজা, আফিম, চরশ, বাংলা মদ, গুল, মরফিন, কোকেন, বিয়ার, ওয়াইন, হেরোইন প্যাথেড্রিন, মারিজুয়ানা, ডেক্রপরটেন, প্যাথেলিন, ইকসটামি, এলএসডি, ইলিকসার, চোলাইমদ, হুইস্কি, চুয়ানি, তাড়ি ভদকা, শ্যাম্পেন, কোডিনসহ বিভিন্ন ধরণের ড্রাগ নেয়াসহ ইত্যাদি যাবতীয় নেশায় আসক্ত। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মোতাবেক এসব নেশাদায়ক দ্রব্যসহ আরো যেসব জিনিস গ্রহণ করলে মানুষ নেশায় আসক্ত হয়ে, তা গ্রহণ করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।

নেশার সঙ্গে সংযুক্ত যারা অভিশপ্ত নেশাজাতীয় দ্রব্যের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে এমন ১০ ব্যক্তির ওপর রাসুলুল্লাহ অভিশম্পাত করেছেন। তারা হলো- ১. যে নির্যাস বের করে, ২. প্রস্তুতকারী, ৩. পানকারী বা ব্যবহারকারী, ৪. যে পান করায়, ৫. আমদানিকারক, ৬. যার জন্য আমদানি করা হয়, ৭. বিক্রেতা, ৮. ক্রেতা, ৯. সরবরাহকারী, ১০. লভ্যাংশ ভোগকারী। (তিরমিজি)

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,

৩ শ্রেণির লোকের জন্য জান্নাত হারাম করা হয়েছে।

তারা হলো-

১. মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি;
২. পিতামাতার অবাধ্য সন্তান;
৩. সেই বেহায়া ব্যক্তি, যে নিজ পরিবারে অশ্লীলতাকে স্বীকৃতি দিয়ে জিইয়ে রাখে। (মেশকাত)

নেশা করার বিভিন্ন দ্রব্য সম্পর্কেও হাদিসের সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্ক করেছেন, নিশ্চয়ই আমার উম্মতের কিছু লোক মদ পান করবে, তারা সেটার ভিন্ন নামকরণ করে নেবে। (মেশকাত)

তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম নেশার পরিমাণ সম্পর্কেও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ঘোষণা করেছেন। তাহলো- প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই খামর; বা মদ এবং প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই হারাম।; (মেশকাত)
;যে জিনিস অতিমাত্রায় গ্রহণে নেশা হয়, তার সামান্য পরিমাণও হারাম। (মেশকাত)

উল্লেখ্য, যেসব তামাকজাত দ্রব্যের নিকোটিন স্নায়ুতন্ত্রের নিকোটিনিক রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে নেশার সৃষ্টি করে, অনুভূতিকে প্রভাবিত করে; ইসলামে তাও নিষিদ্ধ। কারণ এসব তামাকজাত দ্রব্যে কেউ আসক্ত হলে যেমন সে ইচ্ছা করলেও তা সহজে ছাড়তে পারেনা। আবার তামাকজাত দ্রব্য তথা বিড়ি-সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ সব দ্রব্যের কারণে ক্যান্সার, হার্ট, ফুসফুস আক্রান্ত ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সে কারণে এসব গ্রহণ করাও ইসলামে সুস্পষ্ট হারাম।সুতরাং কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী যা কিছু মস্তিষ্কের সঙ্গে মিশে জ্ঞান-বুদ্ধিকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে তা-ই হারাম। চাই তা কম হোক বা বেশি হোক। তরল পদার্থ হোক কিংবা কঠিন পদার্থ হোক। এসব নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যের নাম যাই হোক; মূলত এগুলো সবই এক এবং এসবের বিধানও এক।আল্লাহ তাআলা বিশ্বজুড়ে মানবজাতিকে তামাকজাত দ্রব্যসহ নেশা সৃষ্টিকারী সব জিনিস থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। তাওবাহ-ইসতেগফারের মাধ্যমে এসব হারাম কাজ থেকে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।