কালেমা। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- ছোট্ট একটি বাক্য। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের মূলমন্ত্র। যে বাক্য পড়ার মাধ্যমে মানুষ বহু বিশ্বাস থেকে এক আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। কিন্তু কালেমা কেন পড়বেন? কালেমা পড়ার উপকারিতা ও সুসংবাদই বা কী? এ সম্পর্কে হাদিসের দিকনির্দেশনাই বা কী?
নবুয়তি মিশনের প্রথম কাজ হলো- কালেমা ঘোষণা। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই- এ ঘোষণার মধ্যেই যে রয়েছে মানুষের দুনিয়া ও পরকালের সার্বিক উপকারিতা ও চূড়ান্ত মুক্তি! এ কালেমার আমলে রয়েছে অনেক উপকারিতা ও সুসংবাদ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের প্রধান কাজই ছিল- কালেমার দাওয়াত। এ কালেমা গ্রহণেই প্রকৃত ঈমানের স্বাদ পায় মানুষ। সুনিশ্চিত মুক্তি ও জান্নাত পাওয়ার উপায়ও এটি। কিন্তু কেন?
কালেমা নাজাতের উপায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি এ কালেমা গ্রহণ করবে, যা আমি আমার চাচা (আবু তালিবের) কাছে পেশ করেছিলাম আর তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সেই কালেমা ওই ব্যক্তির নাজাতের উপায় হবে। (মুসনাদে আহমাদ)
কালেমা পড়লেই মিলবে মুক্তি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে; একদিন না একদিন এ কালেমা অবশ্যই তার উপকারে আসবে। যদিও এর আগে তাকে কিছু শাস্তি ভোগ করতে হবে। (মুসনাদে বাযযার, আত-তাবারানি)
কালেমায় মিলবে সুপারিশ হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন একদিন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কেয়ামতের দিন আপনার শাফাআত দ্বারা কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- হাদিসের প্রতি তোমার আগ্রহ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তোমার আগে এ বিষয়ে কেউ জিজ্ঞাসা করবে না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার শাফাআত দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে ওই ভাগ্যবান ব্যক্তি যে অন্তরে ইখলাসের সঙ্গে কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে। (বুখারি, মুসনাদে আহমাদ)
কালেমা পড়ার অসিয়ত হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নুহ আলাইহিস সালাম তাঁর ইন্তেকালের সময় দুই ছেলেকে ডেকে বলেছেন, আমি তো অক্ষম হয়ে পড়েছি। তাই আমি তোমাদের অসিয়ত করে যাচ্ছি। দুটি বিষয়ে আদেশ এবং দুটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। তাহলো- শিরক এবং অহংকার থেকে নিষেধ করছি।
দুটি বিষয়ের আদেশ করছি-
১. (কালেমার) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আমল করা)। কেননা আসমান ও জমিনসমূহ এবং এর মাঝে যা কিছু আছে সব কিছু যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর (কালেমা) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অপর পাল্লায় রাখা হয়, তবে কালেমার পাল্লাই বেশি ঝুলে যাবে (ভারি হবে)।
আর যদি সব আসমান-জমিন (সাত আসমান ও সাত জমিন) এবং এর মধ্যকার যা কিছু আছে (এ সব), একটি হালকা বা গোলাকার করে তার উপর এ কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ রাখা হয়, তবে তা ওজনের কারণে তা ভেঙ্গে যাবে।
২. আর আমি তোমাদের আদেশ করছি সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামাদিহি (পাঠ করার জন্য); কেননা এটা প্রত্যেক বস্তুর তাসবিহ; এর দ্বারাই প্রত্যেক বস্তুকে রিজিক দেয়া হয়। (মুসনাদে আহমাদ)
>কালেমায় জাহান্নাম হারাম হজরত ইতবান বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, কেয়ামতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে।& (মুসনাদে আহমাদ, বুখারি, মুসলিম, বায়হাকি ও দূররে মানসুর)
কালেমা : সর্বোত্তম জিকির কালেমা- লা ইলাহা ইল্লাহ দুনিয়ার সর্বোত্তম জিকির। যুগে যুগে সব নবি-রাসুলই এ কালেমার দাওয়াত দিয়েছেন। এ কারণেই সর্বোত্তম জিকির হলো- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। যে জিকিরের বিনিময় চূড়ান্ত মুক্তি ও সুনিশ্চিত জান্নাত। এ কালেমার প্রতি একনিষ্ঠ বিশ্বাসই ঈমানের সর্বোচ্চ চুড়া। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, যে ব্যক্তি ইখলাসের সঙ্গে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ইবনে হিব্বান)
সর্বোপরি কথা হলো আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা বা তাওহিদের কালেমা- লা ইলাহা ইল্লাহ-ই মানুষের দুনিয়া ও পরকালের মুক্তির একমাত্র উপায়। যা মানুষকে কোরআন-সুন্নাহর বিধিনিষেধ মেনে চলতে সহায়তা করবে। আল্লাহর পথে চলার সঠিক পথের মূলমন্ত্র। যে বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল দুনিয়া আগমনকারী সব নবি ও রাসুল আলাইহিস সালাম আজমাইন। আর কোরআন-সুন্নাহর একমাত্র নির্দেশনাও এটি। কালেমা একনিষ্ঠ বিশ্বাস ও আমলই হোক মুমিন মুসলমানের একমাত্র পথচলা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কালেমার যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।