যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

অসুস্থকে দেখতে যাবেন কেন?

রোগী দেখা, তার সেবা-যত্ন করা, খোঁজ-খবর নেওয়া, সান্তনা দেওয়া নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান আদর্শ ও সুন্নাত। প্রিয় নবি অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করাকে নেক আমল ও ইবাদত হিসেবে ঘোষণা করেছেন। রোগী দেখার রয়েছে দোয়া ও নিয়ম। তা কী?

হাদিসের একাধিক বর্ণনায় অসুস্থ ব্যক্তির সেবাযত্ন করার বিষয়টি তুলে ধরেছেন প্রিয় নবি-

১. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, তোমরা অসুস্থদের দেখতে যাও এবং আবার কেউ মারা গেলে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করো; কেননা তা পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। (মুসনাদে আহমদ)

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া প্রিয় নবির আদর্শ। তাতে অসুস্থ ব্যক্তি প্রশান্তি পায়, দুশ্চিন্তামুক্ত হয়। মানসিকভাবে প্রফুল্লতা অনুভব করে। তাই হাদিসের উপর আমল করে অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি দায়িত্ব পালন করা জরুরি। তাছাড়া সুস্থরা অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করবে এটি তাদের অধিকার। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, একজন মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ৫টি হক আছে। তাহলো-

১. কেউ সালাম দিলে তার জবাব দেওয়া,

২. কেউ হাঁচি দিলে তার উত্তর দেওয়া,

৩. কেউ দাওয়াত করলে তা কবুল করা,

৪. কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া এবং

৫. কেউ মারা গেলে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করা। (বুখারি)

অসুস্থ ব্যক্তির সেবাযত্ন সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে সুস্পষ্ট বক্তব্য এসেছে-

কেয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি। বান্দা বলবে, আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক- আমি আপনাকে কিভাবে দেখতে যেতে পারি? আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল। তুমি তাকে দেখতে গেলে সেখানে আমাকে পেতে...। (মুসলিম)

রোগী দেখায় রয়েছে বিশেষ ফজিলত

কোনো রোগীকে দেখতে গেলে গুনাহ মাফ। রোগীকে দেখতে যাওয়ার বা রোগীর সেবাযত্নকারীর জন্য ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন। হাদিসে বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শোনেছি, যে ব্যক্তি সকালে কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাবে, তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর যে সন্ধ্যায় রোগী দেখতে যায়, তার জন্য সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা দোয়া করে... । (তিরমিজি)

হাদিসের বর্ণনায় রোগী দেখার দোয়া ও আদব

১. রোগীকে দেখতে গিয়ে তার সুস্থতার জন্য দোয়া করা। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন তখন তার শিয়রে বসতেন তারপর ৭ বার বলতেন-

أَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ اَن يَشْفِيَكَ উচ্চারণ :আসআলুল্লাহাল আজিমা রাব্বাল আরশিল আজিমি আই-ইয়াশফিয়াকা।

অর্থ : আমি মহান আরশের মালিক আল্লাহর কাছে তোমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।; (আবু দাউদ, মিশকাত)

২. রোগী দেখতে গিয়ে তার কাছে নিজের জন্য দোয়া চাওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে তার কাছে নিজের জন্য দোয়া চাও। কেননা তার দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার সমতুল্য। (ইবনে মাজাহ)

৩. পবিত্র অবস্থায় অজু করে রোগীকে দেখতে যাওয়া। হাদিসে এসেছে-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়- তাকে জাহান্নাম থেকে ৬০ বছরের পথ দূরে রাখা হবে। (আবু দাউদ)

৪. রোগীর অবস্থা ও রোগরে ধরন বুঝে তার শরীরে হাত বুলিয়ে দেওয়া। তার সঙ্গে রোগ সম্পর্কে আলোচনা করা। রোগীর সঙ্গে সর্বোত্তম আদব হলো- তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করা। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সেবাযত্নের পূর্ণতা হলো- অসুস্থ ব্যক্তির কপালে বা শরীরে হাত রেখে তাকে জিজ্ঞাসা করা- আপনি কেমন আছেন? (তিরমিজি)

৫. রোগীর সামনে এমন কথা বলা যাতে সে সান্তনা ও প্রশান্তি পায়। হাদিসে এসেছে, প্রিয় নবি কোনো রোগীকে দেখতে গেলে প্রশান্তি পায় এমন কথা বলতেন।

৬. রোগীর কাছে বেশি সময় না থাকা। সময় সম্পর্কে প্রিয় নবি বলেন, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখার সময় হলো- উটের দুধ দোহন করার পরিমাণ সময়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, রোগীকে দেখে তাড়াতাড়ি ফিরে আসা।

৭. অসুস্থ ব্যক্তি কোনো কিছু খেতে চাইলে ক্ষতিকর না হলে তাকে তা খেতে দেওয়া। (ইবনে মাজাহ)

৮. অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে তার সামনে উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা সুন্নাত।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, পরিচিত আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশিদের কেউ অসুস্থ হলে তার সেবাযত্ন করা; তার জন্য দোয়া করা এবং তার খোঁজ-খবর নেওয়া। তাকে সহযোগিতা করা। তাকে আনন্দ ও প্রশান্তি দেওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের উপর যথাযথ আমল করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অসুস্থদের প্রতি খোঁজ-েখবর নেওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।