যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

রাগ দমনে যেসব আমল খুবই কার্যকরী

রাগের সময় নেওয়া মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপেই ভুল হয়। মাত্রাতিরিক্ত এই রাগে মানুষের মানসিক ও শারীরিক উভয় দিকের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই রাগ বরাবরই মানুষের ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছুই বয়ে আনে না। এজন্য যথাসম্ভব রাগকে দমন করা জরুরি। রাগ দমনকারীকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রকৃত বীর বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাহলে এ রাগ দমন বা কমাতে করণীয় সম্পর্কে কী বলেছেন নবিজী?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সে প্রকৃত বীর নয় যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয় বরং সে-ই প্রকৃত বীর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। (বুখারি)

যেহেতু রাগ দমন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আর যে ব্যক্তি তা করতে সক্ষম হবে সেই দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াব। রাগ দমনকারীদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, (তারাই মহসিন বা সৎকর্মশীল) বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরই ভালোবাসেন। (সুরা ইমরান : আয়াত ১৩৪)

মনে রাখতে হবে

রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। তাই অযথা না রেগে মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ৪টি সুন্দর পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি। যাতে সঙ্গে সঙ্গেই রাগ প্রশমিত হয়ে যাবে। তাহলো-

১. অজু করা

সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এক হাদিসে প্রিয় নবি বলেছেন, রাগ বা ক্রোধ শয়তানের তরফ থেকে আসে। শয়তান আগুনের তৈরি। আর আগুনকে পানি ঠাণ্ডা করে দেয়। যদি কারো ক্রোধ বা রাগ আসে তবে তার উচিত ওজু করে নেয়া। (বুখারি, মিশকাত)

২. চুপ থাকা

রাগের সময় চুপ থাকার কথাটি প্রিয় নবি ৩বার বলেছেন। চুপ থাকলে রাগ দমন হয়। রাগের ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি এ ঘোষণা দেন-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। কঠিন কোরো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো। (মুসনাদে আহমাদ)

৩. মাটিতে শুয়ে পড়া

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, যদি দাঁড়ানো অবস্থায় কেউ রাগান্বিত হয় তবে সে যেন বসে যায়। এতেও যদি রাগ না কমে তবে সে যেন (মাটিতে) শুয়ে পড়ে। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, মিশকাত)

৪. আউজুবিল্লাহ ও দোয়া পড়া

যখনই রাগের ঘটনা ঘটে; তখনই আল্লাহর কাছে রাগ নিয়ন্ত্রণে তাউজ পড়ার কথা বলেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। সব সময় দোয়ার মাধ্যমে রাগ নিয়ন্ত্রণের কথাও এসেছে হাদিসে।

দুই ব্যক্তি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে বসে পরস্পর গালাগাল করছিল। তাদের একজনের চোখ লাল হয়ে উঠল ও গলার শিরা ফুলে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি একটি বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে তবে তার এ অবস্থা কেটে যাবে। সে বাক্যটি হলো-

أعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْم উচ্চারণ : আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম।

অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। (মুসলিম)

হজরত সুলাইমান ইবনু সুরাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (রাগের সময়) এই কথাগুলো বললে রাগান্বিত ব্যক্তির রাগ দূর হয়ে যাবে।(বুখারি ও মুসলিম)

রাগ-ক্ষোভ ও সুখ-সন্তুষ্টির অতিরিক্ত আবেগে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে হাদিসে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা ও আশ্রয় চাওয়ার দোয়া শেখানো হয়েছে। আর তাহলো-

اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَالُكَ الْعَدْلَ فِىْ الْغَضَبِ وَ الرِّضَا উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আদলা ফিল গাদাবি ওয়ার রিদা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্রোধ ও সন্তুষ্টি উভয় অবস্থায়ই মধ্যমপন্থা কামনা করি।

সুতরাং যাদের রাগের প্রবনতা বেশি তাদের উচিত বেশি বেশি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা মেনে চলা। রাগের মুহূর্তে এবং রাগের মুহূর্ত ছাড়াও এ জিকির ও দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া। সুন্নাতের এ আমলগুলো রেগে যাওয়া ব্যক্তির জন্য প্রচণ্ড আবেগের সময়েও মুখে লাগাম পরিয়ে দেয়। ফলে তখন তারা অতি আনন্দ কিংবা রাগের মুহূর্তে নিজেদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ও সামঞ্জস্য বজায় রাখতেও সক্ষম হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় সুন্নাতের আমলের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার তাওফিক দান করুন। রাগমুক্ত জীবন গঠনে সুন্নাতের আমলে মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।