সাদকাতুল ফিতরা দেয়া আবশ্যক। এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত। সাদকাতুল ফিতরার পরিমাণ হলো এক সা খেজুর বা এক সা যব। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ে সাদকাতুল ফিতরা হিসেবে এক সা খাদ্যদ্রব্য অথবা এক সা খেজুর অথবা এক সা যব অথবা এক সা কিসমিস প্রদান করতাম। (বুখারি)>
হাদিসে উল্লেখিত খাদ্যদ্রব্য বলতে অনেকে গম বুঝিয়েছেন। আবার অঞ্চলভেদে গম, ভুট্টা, পার্ল মিলেট কিংবা স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য উদ্দেশ্য। ইসলামিক স্কলাররা এটাকেই সঠিক মত বলেছেন। কারণ ফিতরা হচ্ছে-
গরিবের প্রতি ধনীর সহানুভূতি। সে কারনে স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য হিসেবে বিবেচিত কিংবা ব্যবহৃত নয় এমন কিছু দিয়ে সহানুভূতি প্রকাশ স্বরূপ ফিতরা দেয়া কোনো মুসলিমের উপর আবশ্যক নয়।
সুতরাং এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, অঞ্চলভেদে যেখানে যে জিনিসের ব্যবহার বেশি সেখাতে তা ১ সা পরিমাণে ফিতরা আদায় করা। তা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে দোষের কোনো কিছুই নেই।
লক্ষণীয় বিষয় হলো-
বর্তমান সময়ে দেশে দেশে সাদকাতুল ফিতরা দেওয়ার নির্দেশনা ও প্রচলন চলে এসেছে মুদ্রায়। সে ক্ষেত্রে যেসব দেশে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বা বোর্ড রয়েছে, সেখানে দেশের নির্দেশনা অনুযায়ী সাদকাতুল ফিতরা আদায় করাই শ্রেয়।
বিশ্বনবির ফিতরার ঘোষণা
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের প্রত্যেক স্বাধীন, নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, সবার ওপর সাদকায়ে ফিতরা হিসেবে এক সা খেজুর অথবা এক সা জব ফরজ করেছেন এবং (ঈদের) নামাজে বের হওয়ার আগেই এটা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি ও মুসলিম)
সাহাবায়ে কেরামের ফিতরা
মানুষ যে যে ধরনের খাবারকে প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকে তা দিয়ে ফিতরা দেওয়া যায়। যেমন- গম, ভুট্টা, চাল, সীমের বিচি, ডাল, ছোলা, ফূল (একজাতীয় ডাল), নূডুলস, গোশত ইত্যাদি। রাসুলু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিতরা হিসেবে এক সা খাবার প্রদান করা ফরয করেছেন। যেসব খাবার সাহাবীগণের প্রধান খাদ্য ছিল তাঁরা তা দিয়ে ফিতরা আদায় করতেন। (বুখারি ও মুসলিম)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় ঈদের দিন এক সা খাদ্যদ্রব্য (ফিতরা) হিসেবে প্রদান করতাম। তিনি আরও বলেন,তখন আমাদের খাদ্য ছিল& যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর। অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, যখন আমাদের মাঝে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন তখন আমরা ছোট-বড়, স্বাধীন-ক্রীতদাস সবার পক্ষ থেকে জাকাতুল ফিতর (ফিতরা) হিসেবে এক সা খাদ্য কিংবা এক সা& পনির কিংবা এক সা যব কিংবা এক সা খেজুর কিংবা এক সা কিসমিস আদায় করতাম। ফিতরার পরিমাণ
হাদিসের বর্ণনায় ফিতরার সাদকা হচ্ছে এক সা। এখানে ;সা বলতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জামানায় মদিনায় প্রচলিত সা উদ্দেশ্য। পৃথিবীর অন্য কোথাও যদি সা এর হিসাব প্রচলিত থাকে আর তা যদি বিশ্বনবি ঘোষিত সা এর বিপরীত হয়; তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
হাদিস বর্ণনার সময়ে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষিত সা অনুযায়ী বর্তমান সময়ের ওজন বা পরিমাপ হলো উন্নত মানের গমের ওজন হবে- ২ কেজি ৪০ গ্রাম।
অবশ্য চালসহ ইত্যাদি সলিট খাদ্য-দ্রব্যের ওজন- ২ কেজি ৪০ গ্রামের চেয়ে বেশি হবে। মোট কথা এক সা পরিমাণ খাদ্য দ্রব্যের ওজন হবে প্রায় আড়াই কেজি। ফিতরার ক্ষেত্রে ওয়াজিব হচ্ছে
এক সা খাদ্য প্রদান করা। যে সা বা পাত্র নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবহার করেছেন সে সা অনুযায়ী। সাধারণ মাপের দুই হাতের পরিপূর্ণ চার মুষ্ঠি এক সাকে পূর্ণ করে। যেমনটি আলক্বামূস ও অন্যান্য আরবি অভিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।
মেট্রিক পদ্ধতির ওজনে এর পরিমাণ প্রায় ৩ কিলোগ্রাম। যদি কোনো মুসলিম ব্যক্তি চাউল বা দেশীয় কোনো খাদ্যদ্রব্যের এক সা দিয়ে ফিতরা আদায় করেন তবে তা জায়েয হবে।
যদিও বা সে খাদ্যের কথা এই হাদিসে সরাসরি উল্লেখ না থাকে। এটাই আলেমগণের দুইটি মতের মধ্যে বেশি শক্তিশালী। আর মেট্রিক পদ্ধতির ওজনের হিসাবে প্রায় ৩ কিলোগ্রাম দিলেও চলবে।
ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, স্বাধীন-ক্রীতদাস সকল মুসলিমের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু গর্ভস্থিত সন্তানের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয় মর্মে আলেমগণের ইজমা (ঐকমত্য) সংঘটিত হয়েছে। তবে তার পক্ষ থেকেও আদায় করা হলে সেটা মুস্তাহাব। কারণ উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ ধরনের আমল সাব্যস্ত আছে।
ফিতরা দেওয়ার সময়
ফিতরার খাদ্য ঈদের নামাজের আগেই বন্টন করা ওয়াজিব। ঈদের নামাজের পর পর্যন্ত দেরি করা জায়েয নয়। বরঞ্চ ঈদের এক বা দুই দিন আগে আদায় করে দিলে কোনো অসুবিধা নেই
আলেমদের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী ফিতরা আদায় করার সময় শুরু হয় ২৮ শে রমজান। কারণ রমজান মাস ২৯ দিনও হতে পারে। আবার ৩০ দিনও হতে পারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ ফিতরা ঈদের একদিন বা দুই দিন আগে আদায় করতেন। ফিতরা যারা পাবেন
ফিতরা দেওয়ার খাত হচ্ছে- ফকির ও মিসকিন। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনর্থক কাজ ও অশ্লীলতা হতে পবিত্রকরণ এবং মিসকিনদের জন্য খাদ্যের উৎস হিসেবে রোজা পালনকারীর উপর ফিতরা ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে তা আদায় করবে তা কবুলযোগ্য ফিতরা হিসেবে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পর আদায় করবে সেটা সাধারণ সাদকা হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে ফিতরা আদায় করার তাওফিক দান করুন। ফিতরা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।