আল্লাহকে ভয় করে কান্নার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। হাদিসে পাকে আল্লাহর নবি ঘোষণা করেছেন, জাহান্নামের আগুন সেই চোখকে স্পর্শ করবে না; আল্লাহর ভয়ে যাদের চোখ থেকে পানি ঝরে। কত চমৎকার ঘোষণা দিয়েছেন নবিজী। আল্লাহ তাআলা তাকে ভয় করার ব্যাপারে কোরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহকে ভয় করার গুরুত্ব ও ফজিলত তুলে ধরেছেন।
আল্লাহর ভয়ই মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায়-অপরাধ থেকে মুক্ত রাখে। আবার আল্লাহর ভয়ে অপরাধমুক্ত জীবন গঠন করা ব্যক্তিরাই সফল। এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মারা যেও না। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০২)
আল্লাহকে ভয় করার ফজিলত অনেক। তাকে ভয় করার মতো ভয় করার প্রসঙ্গেটি আসলেই চোখ থেকে এমনিতেই পানি ঝরে। আল্লাহর ভয়ে কান্না সম্পর্কে হাদিসে বিভিন্ন অবস্থার আলোকে এসব ফজিলত ও মর্যাদা ঘোষণা করা হয়েছে। তাই সবার মনে আল্লাহর ভয় থাকা জরুরি। যার অন্তরে আল্লাহর ভয় যত বেশি, সে তত বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে এবং পরকালে উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হবে। আল্লাহকে ভয় করার কিছু ফজিলত তুলে ধরা হলো-
১. জাহান্নাম স্পর্শ করবে না হজরত ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে চোখ কাঁদে এবং আল্লাহ তাআলার রাস্তায় যে চোখ (নিরাপত্তার জন্য) পাহারা দিয়ে ঘুমবিহীনভাবে রাত পার করে দেয়। (তিরমিজি,তালিকুর রাগিব, মিশকাত)
হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কাছে দুটি ফোঁটা ও দুটি চিহ্নের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কিছু নেই। ১. আল্লাহর ভয়ে নিঃসৃত পানির ফোঁটা। ২. আল্লাহর রাস্তায় নির্গত রক্তের ফোঁটা। (তিরমিজি)
২. আল্লাহর আজাব থেকে মুক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী ব্যক্তি আল্লাহর আজাব থেকে মুক্ত থাকবে। আগের যুগে আল্লাহর আজাবে ও গজবে আদ, সামুদ ও লুতসহ যেসব জাতি ধ্বংস হয়েছে; তাদের ধ্বংসস্থল অতিক্রমকালে ক্রন্দন করতে বলা হয়েছে। যেন তাদের ওপর যে আজাব নাজিল হয়েছিল তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ মর্মে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
তোমরা এসব আজাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের লোকালয়ে ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত প্রবেশ করবে না। যদি কান্না না আসে তাহলে সেখানে প্রবেশ করো না, যাতে তাদের ওপর যা আপতিত হয়েছিল তা তোমাদের ওপরও আপতিত না হয়। (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
৩. হাশরের ময়দানে নিরাপত্তা লাভ পরকাল হবে ভয়াবহ। পৃথিবীর সব সম্পর্ক সেখানে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,তারা আজাবকে প্রত্যক্ষ করবে ও পরস্পরের সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৬৬)। সবাই ঘামের সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে থাকবে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
কেয়ামতের দিন মানুষের ঘাম ঝরবে। এমনকি তাদের ঘাম জমিনে সত্তর হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এবং তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে, এমনকি কারও কারও কান পর্যন্ত। (বুখারি)
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সাত শ্রেণির মুমিন আরশের নিচে আশ্রয় পাবে। তাদের এক শ্রেণি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণের সময় তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। (বুখারি ও মুসরিম)
৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া এমন অসম্ভব; যেমন দোহনকৃত দুধ পুনরায় ওলানে ফিরিয়ে দেওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহর পথের ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্রিত হবে না। (তিরমিজি)
হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। ১. আল্লাহর ভয়ে যে চোখ কাঁদে আর ২. আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে বিনিদ্র রাত অতিবাহিত করে। (তিরমিজি)
সুতরাং আল্লাহর ভয়ে যারা কাঁদে তাদের জন্য কোনো চিন্তা ও ভয় নেই। তাঁরা আল্লাহর কাছে সম্মানিত হয়েই ফিরে যাবেন। তাদের জন্য জাহান্নাম হারাম। রয়েছে জান্নাতে সুনিশ্চিয়তা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে বেশি বেশি ভয় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।