কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

যেসব কাজ ইসলামে নিষিদ্ধ

মানুষ প্রতিদিনই খায়, ঘুমায় কিংবা বিভিন্ন কাজ করে। নিত্যদিনের এসব কাজের মাঝে এমন কিছু কাজ আছে যা করতে নিষেধ করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আবার কিছু কাজ না করার ব্যাপারে কোরআনুল কারিমের দিকনির্দেশনাও আছে। সে কাজগুলো কী; যা করতে নিষেধ করা হয়েছে? আর কেনই বা এ কাজগুলো করতে নিষেধ করা হয়েছে।

যেসব কাজ কখনো করা যাবে না

১. ঘুমানোর সময় কিংবা বিশ্রামের জন্য কখনো উপুর হয়ে বুকের উপর ভর দিয়ে না ঘুমানো। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-

উপুর হয়ে বুকের উপরে ভর দিয়ে শোয়া নিষিদ্ধ, কারণ শয়তান এইভাবে শোয়। (বুখারি)

এই উপুড় হয়ে শোয়ায় আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, আদাবুল মুফরাদ)

;এটা তো জাহান্নামের অধিবাসীর শোয়া। (ইবনে মাজাহ, আদাবুল মুফরাদ)

২. কখনো বিনা ওজরে বাম হাতে খাওয়া কিংবা পান না করা। কেননা বাম হাতে পান করা শয়তানের কাজ। হাদিসে এসেছে- বাম হাতে খাওয়া বা পান করা নিষিদ্ধ, কারণ বাঁ হাতে শয়তান খায়। (রিয়াদুস সালেহিন)

৩. পশুর হাড় দিয়ে ইস্তেঞ্জা না করা। হাদিসে এসেছে- পশুর হাড় দিয়ে ইস্তেঞ্জা করা নিষিদ্ধ, কারণ আল্লাহর নাম নিয়ে জবাই করা প্রাণীর হাড়গুলো যা মানুষ ফেলে দেয়, তা মুসলিম জিনদের খাবার। (বুখারি)

৪. সন্ধ্যা হলে ছোট ছোট শিশু বচ্ছাদের বাইরে যেতে না দেওয়া। হাদিসে এসেছে-

সন্ধ্যা সময় বাচ্চাদের বাইরে বের হতে দিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন এবং ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে বলেছেন, কারণ তখন জিনেরা বাইরে বের হয়। আজান দিলে শয়তান জিনেরা বায়ু ছাড়তে ছাড়তে লোকালয় থেকে পালিয়ে যায়। আর কুকুর ও গাধা শয়তান জিনদেরকে দেখতে পেলে চিৎকার করে। এ কারণেই অনেক সময় ইশা বা ফজরের আজান দিলে কুকুর চিৎকার-চেচামেচি শুরু করে। কারণ তখন আজান শুনে শয়তান জিনদের পালিয়ে যাওয়া দেখতে পায় কুকুর চিৎকার করতে থাকে।

তাই রাতের বেলা কুকুর ও গাধার ডাক শুনলে তাউজ (আউজুবিল্লাহ) পড়ে- أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرّجِيْم উচ্চারণ : আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাঝিম

শয়তান থেকে আত্মরক্ষায় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। (বুখারি)

৫. গোসলখানায় প্রস্রাব করা যাবে না। কেবলামুখী হয়ে এবং কেবলাকে পেছনে রেখে প্রস্রাব, পায়খানা করা যাবে না। বাতাসের বিপরীতে মুখ করে পায়খানা প্রস্রাব না করা। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)

৬. গুলি বা তীরের নিশানা প্রশিক্ষণের জন্য কোনো প্রাণীকে ব্যবহার করা বা মারা যাবে না।(মুসলিম)

৭. মুশরিক বা অবিশ্বাসীদের কাউকে বিয়ে করা যাবে না। বিশেষ করে- স্বামী ছাড়া অন্য কারো জন্য স্ত্রীর সাজ-সজ্জা গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। (সুরা আহজাব : আয়াত ৩৩)

৮. কোনো মুসলিমের জন্য মূর্তি কেনা-বেঁচা এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ছাড়া এর পাহারাও দেওয়া যাবে না।(সুরা মায়েদা, আয়াত ৯০ এবং সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৫)

৯. কোনো ব্যক্তির মুখে আঘাত করা যাবে না। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটি করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)

১০. কারো গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো বা দৃষ্টি দেওয়া যাবে না। যদিও তাদের কাপড় পরা থাকে। (মুসলিম)

১১. আল্লাহ ছাড়া আর কারো নামে শপথ করা যাবে না। আল্লাহ ছাড়া যে কারো নামে শপথ করা নিষিদ্ধ। তাই বাবা-দাদার নামে; কারো হায়াত; মসজিদ কিংবা কোরআনের নামে শপথ করাও যাবে না। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ব্যক্তিকে এভাবে শপথ করতে শুনলেন, না এ কাবার শপথ। তখন ইবনু ওমর রাদিয়ালল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করে সে শিরক করলো। (আবু দাউদ, তিরমিজি)

১২. এমকনি কোনো প্রাণীকে ইচ্ছাকৃত আগুনে পুড়িয়ে মারা যাবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের মৃত্যুকে নিষিদ্ধ করেছেন। (আবু দাউদ)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, প্রতিদিনের নিয়মিত কাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করার চেষ্টা করা। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার ওপর যথাযথ আমল করার চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।