কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

তাওবাহ দেরিতে করলে কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন?

নিশ্চয়ই আল্লাহ রাতে তার হাত প্রসারিত করেন যেন দিনের অপরাধীরা তাওবাহ করে এবং দিনে তার হাত প্রসারিত করেন যেন রাতের অপরাধীরা তাওবাহ করে। তাওবাহ করার এ ধারা অব্যাহত থাকবে যে পর্যন্ত না পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে। কিন্তু কেউ যদি গুনাহ করার পর দেরি করে তাওবাহ করে তবে তার তাওবাহ কি কবুল হবে? তারা কীভাবে এ তাওবাহ করবেন?

কোরআন-সুন্নায় বেশি বেশি তাওবাহ ইসতেগফার করার ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কেননা গোনাহমুক্ত জীবনের অন্যতম উপায় হচ্ছে তাওবাহ ও ইসতেগফার করা। আল্লাহ তাআলার ঘোষণাও এমন-

وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا ;যে গোনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়। (সুরা নিসা : আয়াত ১১০)

 

তাওবাহ কবুল

দেরিতে হলেও তাওবাহ আল্লাহ তাওবাহ কবুল করেন। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে ঘোষণা করেন-

হজরত আবু মুসা আব্দুল্লাহ বিন কায়স আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন- إنَّ الله تعالى يَبْسُطُ يدَه بالليلِ ليتوبَ مسيءُ النَّهارِ، ويَبْسُطُ يدَه بالنَّهارِ ليتوبَ مسيءُ الليلِ، حتى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তার হাত রাতে প্রসারিত করেন যেন দিনের অপরাধীরা তাওবা করে। আর দিনে তার হাত প্রসারিত করেন যেন রাতের অপরাধীরা তাওবা করে। (আর এমনটি চলতে থাকে সে সময় পর্যন্ত)যে পর্যন্ত না পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে। (মুসলিম)

আল্লাহর কাছে তাওবাহ করার এবং ক্ষমা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদিস এটি। এ হাদিসটি মানুষকে বার বার আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবাহ করে গুনাহ মুক্তির অনুপ্রেরণা দেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা মানুষের তাওবা কবুল করেন, যদিও দেরি হয়। যখন কোনো মানুষ দিনে পাপ করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন যদিও সে রাতে তাওবা করে।

আবার এভাবে মানুষ যখন রাতে পাপ করে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন যদিও সে দিনের বেলায় তাওবা করে। যে পর্যন্ত না পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে। আর সেটা হচ্ছে কিয়ামতের বড় আলামত।

তাওবাহর নিয়ম ও ক্ষমা أَستَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ :আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

নিয়ম :প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন। (মিশকাত)

أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

নিয়ম :এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন।' (বুখারি)

رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ উচ্চারণ :রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।

অর্থ : হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়। নিয়ম :রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ :আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।

অর্থ : আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি। নিয়ম :দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়। (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না। নিয়ম :সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে। (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, গুনাহ করার সময়ের কথা না ভেবে আর দেরি না করে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করা। দেরি হয়ে গেলেও আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে গুনাহ থেকে ফিরে আসা। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা। গুনাহমুক্ত জীবন গড়া। তবেই তাওবাহকারী হবেন সফল। যেভাবে বলেছেন আল্লাহ-

وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। সুরা নুর : আয়াত ৩১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যে কোনো ছোট-বড় ভুলে দ্রুত তাওবাহ করার তাওফিক দান করুন। দেরি হয়ে গেলেও তাওবাহ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।