কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের ফজিলত

বাবা-মার অধিকার হলো তাদের সঙ্গে সদাচারণ করা এবং তাদের পরিপূর্ণ দেখাশুনা করা। এটি মহান আল্লাহর নির্দেশ। কোরআনুল কারিমে এসেছে, দুনিয়ায় তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করবে। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে তাদের প্রতি অধিকার প্রশ্নে গুরুত্ব সহকারে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কী সেই দিকনির্দেশনা?

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলো- يا رسول الله، مَنْ أحقُّ الناس بِحُسن صَحَابَتِي؟ قال أمك قال: ثم مَنْ ؟ قال: أمك، قال: ثم مَنْ؟ قال: أمك، قال: ثم مَنْ؟ قال: أبوك হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকার রাখে? তিনি বললেন- তোমার মা। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন- তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন- তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন-তারপর তোমার বাবা।& (বুখারি ও মুসলিম)

হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের মধ্যে সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। এরপরও তোমার মা। এরপরও তোমার মা। এরপর তোমার বাবা। এরপর তোমার নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজন। এরপর তোমার নিকটবর্তী লোকজন। (মুসলিম)

বাবা-মার অধিকার হলো তাদের সঙ্গে সদাচারণ ও তাদের পরিপূর্ণ দেখাশুনা করা। তবে মায়ের হক বাবার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। যেহেতু হাদিসে মায়ের হক পরিপূর্ণ গুরুত্বের সঙ্গে তিনবার সাব্যস্ত করার পরেই বাবার হকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বাবা-মা উভয়েই সন্তানের লালন পালনে অংশীদার হলেও যেমন বাবা তার ধন-সম্পদ ব্যয় ও দেখাশুনা করে সন্তানের লালন পালনে অংশীদার। আর মা সন্তানের পানাহার, পোশাক-পরিচ্ছদ ও বিছানাপত্র তৈরি করে সন্তানের লালন-পালনে অংশীদার। তারপরও মায়ের মর্যাদা বাবা চেয়ে উর্ধ্বে। কেননা সন্তান পালনে মা যেসব কষ্ট সহ্য করেন বাবা সেসব কষ্ট-ক্লেশ ভোগ করেন না।

মা দীর্ঘ নয় মাস সন্তানকে অতি কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে গর্ভে ধারণ করেন। তাকে অপরিসীম কষ্টে প্রসব করেন; প্রসবের সময় ভয়ানক কষ্টে তার জীবন নাশের উপক্রম হয়।

সন্তান জন্মের পর এমনিভাবে দুই বছর নিজের সব আরাম-আয়েশ ও ঘুম বিসর্জন দিয়ে সন্তানের আরাম-আয়েশ ও কল্যাণার্থে সন্তানকে বুকের দুধ পান করান। এ কাজে তিনি সীমাহীন কষ্ট সহ্য করেন। একথা আল্লাহ তাআলা তাঁর অহির ভাষায় এভাবে বর্ণনা করেছেন-

আর আমি মানুষকে তার বাবা-মায়ের প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করে এবং অতিকষ্টে তাকে প্রসব করে। তার গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। (সুরা আল-আহকাফ : আয়াত ১৫)

লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ এর কারণস্বরূপ শুধু সেই সব কষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন, যা কেবল মায়েরাই সন্তান প্রতিপালন করার ক্ষেত্রে সহ্য করে থাকেন। এ কারণেই সন্তানের ওপর মায়ের বিরাট অধিকারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

সন্তানের দায়িত্ব

তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচরণের অন্যতম উপায় হচ্ছে তাদের- খাদ্য, পানীয়, বাসস্থান, পোশাক ও জীবন ধারনের অন্যান্য প্রয়োজন মিটানো।

বিশেষ করে, তারা যখন এগুলোর প্রয়োজন বোধ করেন। বরং আপনার বাবা-মায়ের যদি আপনার চেয়ে নিম্ন মানের বা মধ্যম মানের জীবন যাপন করেন আর আপনি যদি উচ্চ মানের বিলাসী জীবন যাপন করেন তাহলে তাদের জীবন যাত্রার মান আপনার জীবন যাত্রার সমমানের করবেন অথবা আপনার চেয়ে আরো উন্নত মানের জীবন যাপনের ব্যবস্থা করবেন। কেননা এসব কাজ তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের অন্যতম মাধ্যম।বাবা-মায়ের ব্যাপারে হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনাও সবার জন্য শিক্ষণীয়। তাকে রাজ সিংহাসন দেওয়ার পর তিনি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করেছিলেন। তিনি তাদেরকে গ্রাম থেকে এনে নিজের রাজ সিংহাসনে বসালেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচরণের আরেকটি উপায় বরং যা সবার সদাচরণের সমষ্টি। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদেরকে উফ শব্দ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়া পরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল- رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا হে আমার রব!তাদের প্রতি দয়া করুন; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন। (সুরা আল-ইসরা : আয়াত ২৩-২৪)

সুতরাং সব সন্তানের উচিত, তাদের উভয়ের সঙ্গে সব ধরণের অশ্লীল, অশালীন ও অভদ্র ভাষা ও ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। সব ধরনের কষ্টদায়ক ভাষা পরিহার করা। তাদের সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বলা। তাদের প্রতি বিনয়ের ডানা নত করা। তাদের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত করা। আপনার অন্তর থেকে মনে প্রাণে তাদের জন্য সর্বদা দোয়ায় নিজের জিহ্বাকে ভিজিয়ে রাখা। বেশি বেশি এ দোয়া করা-

رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا হে আমার রব!তাদের প্রতি দয়া করুন; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন। (সুরা আল-ইসরা : আয়াত ২৪)

মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে বাবা-মায়ের প্রতি যত্ন ও খেদমতে নিয়োজিত থাকার তাওফিক দান করুন। বাবা-মায়ের মর্যাদা বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।