কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

জুমার দিন বান্দার কাছে আল্লাহ কী চান?

জুমা সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার দিন। ইবাদত-বন্দেগির জন্য মানুষের কাছে দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা এ দিনটিতে মানুষকে সবচেয়ে বেশি নেয়ামত দান করেছেন। হজরত আদম আলাইহিস সালামের মাধ্যমে এ দিনেই মানুষ সৃষ্টির সূচনা হয়েছিল। সৃষ্টির অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণেই জুমার দিনের গুরুত্ব, সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে। কী সেই সব ফজিলতপূর্ণ মর্যাদা এবং গুরুত্ব?

জুমার দিন বান্দার কাছে আল্লাহর চাওয়া

জুমার দিন বান্দার কাছে মহান রবের চাওয়া-পাওয়া হচ্ছে- মুমিন মুসলমান আজানের সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার সব কাজ রেখে দিয়ে আল্লাহর স্মরণে দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হবে। এ কারণেই মহান আল্লাহ কোরআনের বর্ণনায় এ নির্দেশ দিয়েছেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিন নামাজের জন্য আহবান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে। (সুরা জুমা : আয়াত ৯)

আল্লাহর বান্দারা সপ্তাহে অন্তত একটি দিন তাঁর স্মরণে কাটাবে। জুমার নামাজ আদায় করবে। দিনভর ইবাদত-বন্দেগি, তাসবিহ-তাহলিল, তাওবাহ-ইসতেগফারে কাটাবে। বিশেষ করে জুমার নামাজের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নিয়ে আগে আগে মসজিদে যাবে; এটি মহান আল্লাহর একান্ত চাওয়া।

জুমার দিনে মহান আল্লাহর এ উদ্দেশ্যের কথাটি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একাধিক হাদিসে থেকেও প্রমাণিত। তিনি বলেছেন-

১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সপ্তাহের দিন গুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। এ দিন হযরত আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাকে বেহেশতে স্থান দেওয়া হয়েছে, আবার এ দিনেই তাকে বেহেশত থেকে বের করে দুনিয়ায় পাঠানো হয় এবং এ দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। এদিন অধিক ফজিলতের দিন। এ দিনে তোমরা অধিক পরিমাণে দুরূদ পাঠ কর। তোমরা যখন দুরূদ পড়বে তখনই তা আমার সামনে পেশ করা হবে। আমি সঙ্গে সঙ্গেই এর প্রতি উত্তর দিই। ২. ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুসনাদে উল্লেখ করেন হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিসটি এই শব্দে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- কি কারণে জুমার দিনকে এই নামে নাম করণ করা হয়েছে তিনি বললেন জুমার দিনে তোমাদের বাবা আদমকে তৈরির জন্য সংগৃহীত মাটিকে মানবাকৃতি প্রদান করা হয়েছে এ দিনেই সিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে এ দিনেই হাশর হবে এবং কাফেরদেরকে পাকড়াও করা হবে। এই দিনের শেষাংশে তিনটি মুহূর্ত রয়েছে। তার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে তাতে যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করবে তার দোয়া কবুল করা হবে।

৩. হজরত আবু হুরায়রা ও ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন- তাঁরা শুনেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মিম্বরের কাঠের উপর বলেছেন যে, কতক সম্প্রদায় তাদের জুমা ত্যাগ করা থেকে অবশ্যই বিরত হোক, নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে অবশ্যই মোহর মেরে দেবেন। এরপর তারা অবশ্যই অবহেলাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (মুসলিম, ইবনে মাজাহ)

৪. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে ব্যক্তি পরপর ৩ জুমা ত্যাগ করলো সে অবশ্যই ইসলামকে নিজের পেছনে ফেলে দিল।(তারগিব)

৫. হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, একদিন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়ার সময় বললেন, সম্ভবত এমনও লোক আছে, যার কাছে জুমা উপস্থিত হয়; আর সে মদিনার এক মাইল দূরে থাকে এবং জুমায় উপস্থিত হয় না। দ্বিতীয় বার তিনি বললেন, সম্ভবত এমন লোকও আছে যার কাছে জুমা উপস্থিত হয়; অথচ সে মদিনা থেকে মাত্র দুই মাইল দূরে থাকে এবং জুমায় হাজির হয় না। এরপর তিনি তৃতীয় বার বললেন, সম্ভবত এমন লোকও আছে, যে মদিনা থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে থাকে এবং জুমায় হাজির হয় না; আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দেবেন। (আবু ইয়ালা, তারগিব)

৬. হজরত আবুল জাদ যামরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি বিনা ওজরে তিনটি জুমা ত্যাগ করবে সে ব্যক্তি মুনাফিক। (ইবনে খুযায়মাহ ইবনে হিব্বান

৭. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবতের গোসল করলো। এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি উট কুরবানি করলো। আর যে দ্বিতীয় মুহূর্তে গেল, সে যেন একটি গরু কুরবানি করলো। আর যে তৃতীয় মুহূর্তে গেলে, সে যেন একটি শিংওয়ালা দুম্বা কুরবানি করলো। আর যে চতুর্থ মুহূর্তে গেল, সে যেন একটি মুরগি কুরবানি করলো। আর যে পঞ্চম মুহূর্তে গেল, সে যেন একটি ডিম কুরবানি করলো। অতপর যখন ইমাম সাহেব বের হয়ে আসেন তখন ফেরেশতাগণ জিকির শুনতে থাকেন। (বুখারি, মুসলিম)