কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

পরকালের সুখ-শান্তির জন্য যা করবেন

পরকালই মানুষের আসল ঠিকানা। সবাইকে দুনিয়া ছেড়ে পরকালে যেতে হবে। দুনিয়ার জীবনের সব কর্মকাণ্ডই হবে পরকালের জীবনের সুখ-শান্তির মানদণ্ড। তাই দুনিয়া থেকেই মুক্তির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দুনিয়াতে উত্তম আমল করতে না পারলে পরকালের কঠিন হাশরের ময়দানে ভোগান্তি, অশান্তি, দুঃখ-কষ্টের সীমা থাকবে না। পরকালের সীমাহীন জীবনে মানুষের সুখ-শান্তির জন্য করণীয় কী?

মানুষের পরকালমুখী হওয়া কিংবা পরকালমুখী হওয়ার মানসিকতাই মুক্তির উপায়। পরকালমুখী হতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করতে বলেছেন। একাধিক হাদিসে নসিহত পেশ করেছেন। তাহলো-

১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে মানব সম্প্রদায়! সুখ বিনাশকারী মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো। (তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

২. হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবার চেয়ে বুদ্ধিমান লোক কে ? তিনি বললেন,  যে ব্যক্তি বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণে লেগে থাকে।(ইবনে মাজাহ)

৩. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সংকটময় মুহূর্তে বান্দা যখন মৃত্যুকে স্মরণ করে, তখন এ স্মরণ তার সংকটময়তাকে দূর করে দেয় আর সুখের কালে মৃত্যুকে স্মরণ করে তখন এ স্মরণ তার সুখ স্বাচ্ছন্দকে তিরোহিত করে দেয়।

হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে পরকালের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। নেক আমলে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যায়-অসত্য পথ পরিহার করতে সহায়তা করে। দুনিয়ার সকল-প্রকার অন্যায় জুলুম, অত্যাচার থেকে ফিরে থাকার

মানসিকতা তৈরি করে দেয়। মানুষের দুনিয়ার জীবন ক্ষনস্থায়ী এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

সুতরাং মানুষের উচিত, পরকালের প্রস্তুতিতে বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করা। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। হাদিসের ওপর আমল করা। এভাবে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা-

১. أَستَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

নিয়ম :প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন। (মিশকাত)

২. أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

নিয়ম : এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তওবাহ ও ইসতেগফার করতেন। (বুখারি)

৩. رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

অর্থ : হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তওবা কবুলকারী করুণাময়। নিয়ম :রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

অর্থ : আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তওবাহ করে) ফিরে আসি। নিয়ম :দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়। (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

৫.সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না। নিয়ম :সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে। (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে মৃত্যুর স্মরণ ও তাওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে ক্ষনস্থায়ী জিন্দেগিতে আমলে সালেহ তথা নেক কাজ করে পরকালের স্থায়ী জীবনের বুনিয়াদ গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।