কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

মানুষ মারা গেলে ‘আত্মা’ কোথায় রাখা হয়?

মানুষ মারা গেলে তার আত্মা কি দেহের সঙ্গেই থাকে নাকি অন্য কোথাও রাখা হয়? মৃত্যুর ফেরেশতা কর্তৃক রুহ কবজ থেকে শুরু করে পরবর্তী কবরের অবস্থা, মুনকার নাকিরের প্রশ্ন ও ফয়সালা সম্পর্কিত বিষয়গুলোও একই হাদিসে ওঠে এসেছে। হাদিসটি দীর্ঘ হলেও তা তুলে ধরা হলো-

হজরত বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক আনসারী সাহাবির দাফন-কাফনের জন্য আমরা একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে বের হলাম। আমরা কবরের কাছে পৌঁছে গেলাম তখনও কবর খোঁড়া শেষ হয়নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে বসলেন। আমরা তাঁর চার পাশে এমনভাবে বসে গেলাম যেন আমাদের মাথার উপর পাখি বসেছে। আর তাঁর হাতে ছিল চন্দন কাঠ যা দিয়ে তিনি মাটির উপর মৃদু পিটাচ্ছিলেন। তিনি তখন মাথা জাগালেন আর বললেন, তোমরা কবরের শাস্তি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। কথাটি তিনি দুইবার কিংবা তিন বার বললেন।

নেককার ব্যক্তির আত্মা

এরপর তিনি আরও বললেন, যখন কোনো ঈমানদার বান্দা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে পরকালের দিকে যাত্রা করে তখন আকাশ থেকে তার কাছে ফেরেশতা আসে। তাদের চেহারা থাকবে সূর্যের মত উজ্জল। তাদের সঙ্গে থাকবে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি। তারা তার চোখ বন্ধ করা পর্যন্ত তার কাছে বসে থাকবে। মৃত্যুর ফেরেশতা এসে তার মাথার কাছে বসবে। সে বলবে, হে সুন্দর আত্মা! তুমি আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও তার সন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে এসো। আত্মা বেরিয়ে আসবে যেমন বেড়িয়ে আসে পান-পাত্র থেকে পানির ফোটা।

(সে (মৃত্যুর ফেরেশতা) আত্মাকে গ্রহণ করে এক মুহুর্তের জন্যেও ছাড়বে না। তাকে সেই জান্নাতের কাফন পরাবে ও সুগন্ধি লাগাবে। পৃথিবিতে যে মিশক আছে সে তার চেয়ে বেশি সুগন্ধি ছড়াবে। তাকে নিয়ে তারা আসমানের দিকে যেতে থাকবে। আর ফেরেশতাদের প্রতিটি দল বলবে, কে এই পবিত্র আত্মা? তাদের প্রশ্নের উত্তরে তারা তার সুন্দর নাম নিয়ে বলবে যে, অমুক অমুকের ছেলে।

পাপিষ্ঠ ব্যক্তির আত্মা

আর যখন কোনো কাফির দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে পরকালের দিকে যাত্রা করে তখন তার কাছে কালো চেহারার ফেরেশতা আগমন করে। তার সঙ্গে থাকে চুল দ্বারা তৈরি কষ্ট দায়ক কাপড়। তারা চোখ বুজে যাওয়া পর্যন্ত তার কাছে বসে থাকে। এরপর আসে মৃত্যুর ফেরেশতা। তার মাথার কাছে বসে বলে, হে পাপিষ্ট আত্মা বের হয়ে আল্লাহর ক্রোধ ও গজবের দিকে চলো। তখন তার দেহে প্রচন্ড কম্পন শুরু হয়। তার আত্মা টেনে বের করা হয়, যেমন আদ্র রেশমের ভিতর থেকে লোহার ব্রাশ বের করা হয়। যখন আত্মা বের করা হয় তখন এক মুহুর্তের জন্যও ফেরেশতা তাকে ছেড়ে দেয় না। সেই কষ্টদায়ক কাপড় দিয়ে তাকে পেচিয়ে ধরে। তার লাশটি পৃথিবীতে পড়ে থাকে।

পাপিষ্ঠ ব্যক্তির কবরের প্রশ্নোত্তর

এরপর তার দেহে তার আত্মা চলে আসবে। দুই ফেরেশতা আসবে। তাকে বসাবে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করবে, তোমার প্রভূ কে? সে বলবে, হায়! হায়!! আমি জানি না। তারা তাকে আবার জিজ্ঞাসা করবে, তোমার ধর্ম কি? সে বলবে, হায়! হায়!! আমি জানি না। তারপর জিজ্ঞাসা করবে, এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মধ্যে পাঠানো হয়েছিল? সে উত্তর দেবে, হায়! হায়!! আমি জানি না।

তখন আসমান থেকে এক আহবানকারী বলবে, সে মিথ্যা বলেছে। তাকে জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও। জাহান্নামের একটি দরজা তার জন্য খুলে দাও। জাহান্নামের তাপ ও বিষাক্ততা তার কাছে আসতে থাকবে। তার জন্য কবরকে এমন সঙ্কুচিত করে দেওয়া হবে যাতে তার হাড্ডিগুলো আলাদা হয়ে যাবে।

হাদিসের শিক্ষা

১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সঙ্গীদের নিয়ে অন্যের দাফন-কাফনে অংশ গ্রহণ করতেন।

২. কবরের শাস্তির বিষয়টি একটি সত্য বিষয়। এটি বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ।

৩. কবরের শাস্তি থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাওয়া সুন্নত।

৪. ঈমানদার ও বেঈমানের মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

৫. কবরে যাওয়ার পর ঈমানদার তার পুরস্কার ও প্রতিদান পাওয়ার জন্য কেয়ামত তাড়াতাড়ি কামনা করবে। আর বেঈমান মনে করবে কেয়ামত কায়েম হলে তাদের জাহান্নামের আযাব শুরু হয়ে যাবে। তাই তারা কেয়ামত কামনা করবে না।

৬. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াজ ও নসিহতের সময় কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করেছেন ও কুরআন থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন।

৭. কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্ন ও তার উত্তর দেওয়া একটি সত্য বিষয়। এর প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের অংশ।

৮. ইল্লিয়্যীন ও সিজ্জিনের পরিচয় জানা গেল। এ দুটি জান্নাত ও জাহান্নামের অংশ বিশেষ।

৯. বরযখি (কবরের) জীবনের সত্যতা এ হাদীস দিয়েও প্রমাণিত হলো।

১০. হে আমার রব! কেয়ামত সংঘটিত করুন!! যেন আমি আমার সম্পদ ও পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি। এ কথা দ্বারা ঈমানদার ব্যক্তি সম্পদ বলতে তার নেক আমলের সওয়াব ও পুরস্কার বুঝিয়েছেন। আর ঈমানদার ব্যক্তি জান্নাতে তার পরিবার পরিজনের সঙ্গে মিলিত হবেন। যদি তার পরিবারবর্গ ঈমানদার ও সৎকর্মশীল হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَٱتَّبَعَتۡهُمۡ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَٰنٍ أَلۡحَقۡنَا بِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَمَآ أَلَتۡنَٰهُم مِّنۡ عَمَلِهِم مِّن شَيۡءٖۚ كُلُّ ٱمۡرِيِٕۢ بِمَا كَسَبَ رَهِينٞ

আর যারা ঈমান আনে এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানের সঙ্গে তাদের অনুসরণ করে, আমরা তাদের সঙ্গে তাদের সন্তানদের মিলন ঘটাবো এবং তাদের কর্মের কোনো অংশই কমাবো না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার কামাইয়ের ব্যাপারে দায়ী থাকবে। (সুরা আত-তুর : আয়াত ২১)

১১. বরযখি (কবরের) জীবনের সুখ ও তার শাস্তির কিছু বর্ণনাও এ হাদিসের মাধ্যমে জানা গেল।

১২. হাদিসে জান কবজকারী ফেরেশতাকে মালাকুল মউত বলা হয়েছে। এর অর্থ মৃত্যুর ফেরেশতা। তার নাম কি, তা কুরআনে বা কোনো সহীহ হাদিসে আসেনি।