যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

অসুস্থতায় গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধি

সুস্থতা-অসুস্থতা মানবজীবনের অনুষঙ্গ। সুস্থতা আল্লাহর অনেক বড় নিয়ামত। আর অসুস্থতা কারো জন্য শাস্তি, কারো জন্য পরীক্ষা আবার কারো জন্য গুনাহ মাফের উপায় ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ। সুস্থতায় আল্লাহর শোকর আদায় করতে হয়। আর অসুস্থতায় ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর নিয়ামতের অনুভব করতে হয়। অসুস্থতার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে পরিশোধন করে থাকেন। বান্দার যখন পাপ বেড়ে যায় আর তার পাপ মোচন করার জন্য সে যখন কোনো আমল না করে তখন বান্দার কল্যাণের জন্যই আল্লাহ তায়ালা তাকে দুঃখ-কষ্ট, অসুস্থতা ও ছোট ছোট বালা-মুসিবত দিয়ে থাকেন। যারা ধৈর্যের সাথে এই অসুস্থতার নিয়ামত গ্রহণ করে, আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে বান্দার গোনাগুলো ক্ষমা করে তার মর্যাদা বুলন্দ করে দেন।

আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। (বুখারি-৫৬৪১)
সুস্থতার নিয়ামত একজন অসুস্থ ব্যক্তিই ভালো জানেন। একবার ঘুরে দেখে আসুন যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে, সেখানে গেলে কঠিন হৃদয়ও নরম হয়ে যায়। কারণ, হাসপাতালে এমন কিছু রোগী আছে, যাদের দেখলে নিজের প্রতিটি অঙ্গের কথা অটোমেটিক স্মরণ হয়ে যায়! মনে হয়ে যায় আমার আল্লাহ আমাকে কতটা সুখে রেখেছেন, সুস্থ রেখেছেন। কত ধরনের নিয়ামত দিয়ে ভরপুর করে রেখেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- তুমি আমার কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে? (সূরা আর-রাহমান)
মানুষ খুব দ্রুত অতীতের কথা ভুলে যায়। পবিত্র কুরআনেও এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে- মানুষকে যখন বিপদ স্পর্শ করে তখন শুয়ে-বসে-দাঁড়ানো অবস্থায় আমাকে ডাকতে থাকে। আর যখন তাকে বিপদ মুক্ত করে দিই তখন এমনভাবে চলে যায় যেন সে বিপদে পড়ে আমাকে ডাকেইনি। (সূরা ইউনুস-১২)

আল্লাহ তায়ালা মাঝে মাঝে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ফেলে আমাদেরকে পরিশুদ্ধ করে তোলেন ও প্রাপ্ত নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা পালনের তাগিদ দেন। আমরা বেশির ভাগ সময়ই ভুলে যাই যে, আমাদের শারীরিক শক্তি ও সুস্থতা, প্রতিভা ও যোগ্যতা আমাদের নিজের ক্ষমতাবলে পাওয়া নয়; বরং তা মহান রবের দান। তিনিই দিয়েছেন, চাইলে আবার ছিনিয়েও নিতে পারেন। তা ছাড়া মানুষের শক্তি, সুস্থতা ও যোগ্যতার ব্যবহারও আল্লাহ তায়ালার দয়া ও তাওফিকের ওপর নির্ভরশীল।

আল্লাহ তায়ালা বলেন- বলো! রাতে ও দিনে দয়াময় আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কে তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। (সূরা আম্বিয়া-৪২)


দুনিয়ায় কিছু রোগব্যাধি আছে, যারা সেই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করতে পারে। রাসূল সা: বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি ছাড়াও আরো সাতজন শহীদ আছেন। তারা হলেন- মহামারীতে মৃত (মুমিন) ব্যক্তি, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি, জাতুল জাম্ব (নানা ধরনের পেটের রোগ, যেমন- গর্ভে সন্তান মরে যাওয়া ইত্যাদি) নামক কঠিন রোগে মৃত ব্যক্তি, (কলেরা, ডায়রিয়া বা অনুরূপ) পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি, দেয়াল ধসে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মারা যাওয়া নারী। (আবু দাউদ-৩১১১)

সুতরাং আমাদের উচিত অসুস্থতায় আল্লাহর কাছে তাওবাহ-ইস্তিগফার ও সুস্থতার জন্য দোয়া করা। অসুস্থদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ হচ্ছে অসুখ হলে আল্লাহ ঈমানদারদের গুনাহ মাফ করে মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। মুমিনের বিশ্বাস হচ্ছে, সে যে অবস্থায়ই থাকুক তার মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। হাদিসে এসেছে, মুমিনের বিষয়টি বড়ই আশ্চর্যের! তার সব অবস্থাতেই কল্যাণ থাকে। এটি শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য যে, যখন সে আনন্দ করে তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এবং যখন সে কষ্টে থাকে তখন সবর করে। আর উভয় অবস্থায়ই তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। অতএব অসুস্থতায় হতাশ ও পেরেশান না হয়ে ধৈর্য ধারণ করা প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য।