লজ্জা ও সম্ভ্রম মানুষের একটি স্বভাবজাত গুণ, যার দ্বারা বহুবিধ নৈতিক গুণের বিস্তৃতি ঘটে। স্বচ্ছতা ও নির্মলতার বিকাশ সাধিত হয় এবং সব ধরনের মলিনতা ও পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত থাকা যায়। এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, লজ্জা ইমানের একটি বিশেষ শাখা। (বুখারি, মুসলিম) শুধু তাই নয়, মহান রব্বুল আলামিন নিজেও এ গুণে গুণান্বিত। প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত লজ্জাশীল, পরম দয়ালু। বান্দা যখন তাঁর দরবারে মোনাজাতে উভয় হাত উত্তোলন করে, তখন তিনি তা খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে অত্যধিক লজ্জাবোধ করেন। (তিরমিজি, আবু দাউদ) লজ্জা এমন একটি গুণ, যার ফলে সর্বদা কল্যাণ লাভ করা যায়। তাই প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, লজ্জাশীলতা কেবল কল্যাণ ও মঙ্গলই বয়ে আনে। (বুখারি, মুসলিম) লজ্জা মানুষকে সব অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করে। লজ্জাহীন মানুষ নির্বিঘ্নে ভালোমন্দ সব কাজই করতে পারে, কোনো কিছুই তাকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে না। এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, লজ্জাশরম না থাকলে তুমি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারো। (বুখারি) হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী করিম (সা.) এক আনসারি সাহাবির কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তার ভাই তাকে বেশি লজ্জাশীল না হওয়ার জন্য উপদেশ দিচ্ছিলেন, কেননা তা জীবিকা ও ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর ও বাধাগ্রস্ত। এ কথা শুনে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাকে এভাবে থাকতে দাও। যেহেতু লজ্জা ইমানেরই একটি বিশেষ অঙ্গ। (বুখারি) তবে ইলম অর্জন, হালাল পন্থায় জীবিকা অর্জন, আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরিকায়, ইসলাম ও শরিয়তের ওপর চলতে গিয়ে হালাল-হারাম যাচাই-বাছাই করে আমল করার ক্ষেত্রে লজ্জাবোধ পরিহার করা জরুরি। কেননা আল্লাহ কোরআন মজিদে ইরশাদ করেন এবং আল্লাহ সত্য কথা বলতে সংকোচবোধ করেন না। (সুরা আহজাব, আয়াত ৫৩) আজ আমাদের সমাজ লজ্জাহীনতা ও বেহায়াপনায় সয়লাব হয়ে গেছে। ভাই-বোন, ছাত্র-শিক্ষক, ছোট-বড়, এমনকি পরিবারের সবাই মিলে একাকার হয়ে টিভি, সিনেমার পর্দায় অশ্লীল নাটক, নাচগান, বাদ্য, যাত্রা ইত্যাদি উপভোগ করছে। এমনকি পশ্চিমা আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইসলামের ফরজ হুকুম পর্দাপ্রথা নারীদের থেকে একেবারেই উঠে গেছে। যার ফলে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া সমাজকে কন্ট্রোল করতে রাষ্ট্রও আজ হিমশিম খাচ্ছে। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের জন্য একটু সবুজ শ্যামল নিরিবিলি পরিবেশের পার্কগুলোয় চোখ রাখা দায়। যেন এ পার্কগুলো শুধু অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার চর্চার জন্যই তৈরি হয়েছে। এখানে ভদ্র, লজ্জাশীল ও মুরব্বিদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। অন্যদিকে নারী পরছে পুরুষের পোশাক ও পুরুষ পরছে নারীর পোশাক। এমনকি প্রতিযোগিতা চলছে পুরুষ তার শরীর ঢেকে রাখবে আর নারীর শরীর থাকবে উন্মুক্ত। নারী যত ছোট পোশাক পরতে পারে, তাতে সে আধুনিক-স্মার্ট বলে গণ্য হয়। যেন নারীর সৌন্দর্য ও কোমলতা অবলোকন ও উপভোগ করার অধিকার সবার রয়েছে। যার ফলে সমাজ আজ ধর্ষণ, অপহরণ, নারী নির্যাতন, ইভ টিজিং ও পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। যুবসমাজ নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা ও চরিত্রহীনতায় কলঙ্কিত ও বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে।
এমনকি শিক্ষিত সমাজও আজ একই পরিণতির শিকার হচ্ছে। একটা সময় ছিল, ছেলে-মেয়েরা মুরব্বিদের মুখে নিজের বিয়ের কথা শুনলে অত্যধিক লজ্জা পেত। আর এখন নিজেরাই পছন্দ করে কোর্ট ম্যারেজ করে নিজের মা-বাবার দোয়া নেওয়ার জন্য সামনে এসে দাঁড়ায়। অথচ বিবাহবহির্ভূত প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ের সব সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে হারাম। লজ্জাহীনতা একজন মুসলিমকে হারামে নিমজ্জিত করে দেয়। এমনকি তার ইমান পর্যন্ত নষ্ট করে দেয়। অথচ একজন মুসলিম নারী পর্দা করতে লজ্জাবোধ করে এবং একজন মুসলিম পুরুষ সুন্নতি লেবাস, দাড়ি-টুপি পরতে লজ্জাবোধ করে। একজন বয়স্ক ব্যক্তি কোরআন শিক্ষা ক্লাসে ছাত্রের মতো উপস্থিত হওয়াকে বড়ই লজ্জা মনে করে। অথচ বয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও অশুদ্ধ ও ভুল কোরআন শরিফ পড়ে তার জীবন পার করে দিচ্ছে। অশুদ্ধ কোরআন পড়ার কারণে তার নামাজ সহি হয়নি, এতে তার কোনো ধরনের আক্ষেপ ও লজ্জাবোধ জাগ্রত হয় না, যা কখনই উচিত নয়। বরং গর্ব করা উচিত যে, আমি সঠিক পথে আছি। নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা করছি। এতে লজ্জার কিছু নেই। আমি যেন কেয়ামতের দিন মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে লজ্জিত না হই। একজন মুসলিমের গুনার কাজে লজ্জিত হওয়া এবং নেকির কাজে খুশি হওয়া ইমানের আলামত। প্রিয় নবী ইরশাদ করেন, যার লজ্জা নেই, তার ইমান নেই।