যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

প্রচণ্ড গরমে আল্লাহর নৈকট্য পাবেন যেভাবে

ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এ দেশে বসন্ত পেরিয়ে শুরু হয় গ্রীষ্মকাল। বসন্ত পেরুতেই শুরু হয় গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের দিন। এ সময় তাপমাত্রা থাকে অসহ্যকর। বিশেষ করে এ বছর বৈশাখের শুরু থেকেই প্রচণ্ড গরম পড়ছে। তাপমাত্রা ৪০/৪১/৪২ও অতিক্রম করেছে। যা এ জ্যৈষ্ঠ মাসেও অব্যাহত রয়েছে। অসহ্যকর এ গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। বাসাবাড়ি থেকে মানুষ বের হতে পারছে না, বেরিয়ে এলেও গরম আর পিছু ছাড়ছে না। যেনো প্রকৃতিটাও গরম হয়ে গেছে। এমন অসহ্যকর গরম এখন না, হাজার বছর আগেও এমন গরম পড়তো। তাই মুমিনদের জন্য প্রচন্ড গরম এবং তীব্র শীতেও রয়েছে সওয়াব অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। কী সেই সওয়াব অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ?

কোনো কোনো ক্ষেত্রে গরমকে আল্লাহর ক্রোধ বলা হয়েছে, আর ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া শিখিয়ে গেছেন, তেমনি একটি দোয়া হলো-

اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيعِ سَخَطِكَ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাওয়ালি নিমাতিকা ওয়া তাহবিলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা ওয়া জামিয়ি সাখাতিকা

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আপনার নিয়ামতের বিলুপ্তি, আপনার অনুকম্পার পরিবর্তন, আকস্মিক শাস্তি এবং আপনার সমস্ত ক্রোধ থেকে। (মুসলিম ২৭৩৯, আবু দাউদ ১৫৪৫, রিয়াদুস সালেহিন ১৪৭৮)

গরমে দেরিতে জোহর নামাজ পড়া সুন্নত

শীত ও গ্রীষ্মের ব্যাপারে হাদিসের ব্যাখ্যা হলো, শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা আসে জাহান্নামের নিশ্বাস থেকে। আরবের মরু এলাকায় উত্তপ্ত বালু ও মরুঝড়ের কারণে সেখানে ভীষণ গরম দেখা দিত। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জোহরের নামাজ কিছুটা বিলম্বে আদায় করতেন। এ জন্য গরম বেশি পড়লে জোহরের নামাজ দেরিতে পড়া সুন্নত।

হজরত আবু জার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। একসময় মুয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবিজি সাল্লাল্লাগু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও।

এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। এরপর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো। (বুখারি ৫৩৯)

গরমে অল্প আমল করে বেশি সওয়াব লাভ

গরমে অল্প আমলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। একজন মুমিন সে আমল করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। অল্প আমলে বেশি সওয়াব পাওয়ার বেশ কিছু আমল রয়েছে। তাহলো-

নফল রোজা

গরমের রোজা শীতের থেকে বেশি কষ্টকর। সে কষ্ট উপেক্ষা করে যদি নফল রোজা রাখা যায়, তাহলে আল্লাহ তাআলা বেশি নেকি দেবেন। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন বেশি সওয়াবের আশায় গরমকালে রোজা রাখতেন।

পিপাসার্তকে পানি পান করানো

পিপাসার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম কাজ। আর যদি প্রচন্ড গরমে কাউকে ঠাণ্ডা পানি পান করানো হয়, তাহলে তো কাজটি আরো উত্তম হবে। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করলেন কোন দান উত্তম? তিনি বললেন, পানি পান করানো। (নাসাই ৫৪৫৬)

ইমাম কুরতুবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি।

হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সাদকা। (আবু দাউদ ৭৪৩৫)

নফল নামাজ

অতিরিক্ত গরম হলো জাহান্নামের নিঃশ্বাস, তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে পাকে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় করো। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো জাহান্নামের নিশ্বাস। (মেশকাত ৫৯১)

গরম থেকে শিক্ষা

গরমের তীব্রতা থেকে মুমিনের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কেননা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই এ গরম থেকে জাহান্নমের তীব্রতা অনুমান করে গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা। হাদিসে পাকে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলছে। ফলে আল্লাহ তাকে দুইটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভব করো। (বুখারি ৫৪৫৫)

আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার আরও মাধ্যম হচ্ছে, গরিব-দুঃখীর মাঝে সুমিষ্ট ফল বিতরণ করা। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা। ঘামে ভেজা শরীরে জনসমাগমে গমন না করা। গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা। গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা বিষয়টিও খেয়াল রাখার নির্দেশ দেয় ইসলাম।