অনেককেই বলতে শোনা যায়, মহামারি মুসলমান কিংবা মুমিন বান্দার হতে পারে না। এদের অসুস্থতা বা রোগ-ব্যধি হতে পারে না। বাস্তবেই কি এ কথা ঠিক যে, অসুস্থতা, রোগ-ব্যধি কিংবা মহামারি মুসলমান-মুমিন বান্দার মাঝে আসতে পারে না? এই অসুস্থতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
না এটি ভুল ধারণা। মুমিন মুসলমান অসুস্থতা কিংবা মহামারিতে আক্রান্ত হতে পারে না- ইসলামের সঙ্গে এ কথার কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা কুরআনুল কারিমে বর্ণনা, হাদিসের নির্দেশনা এবং ইসলামের ইতিহাসের সোনালী ঘটনাগুলো এর প্রমাণ।
রোগ-শোক, মহামারি ও ব্যধিতে আক্রান্ত হয়েছেন অনেক নবি-রাসুল, সাহাবায়ে কেরাম এবং ইসলামিক স্কলারগণ। মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে শহিদ হয়েছেন বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ। যিনি দুনিয়াতেই পেয়েছিলেন জান্নাতের নিশ্চয়তা।
রোগ-ব্যধি ও মহামারি সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা
কুরআনুল কারিমের অনেক স্থানে অসুস্থতার বর্ণনা আছে। যা যুগে যুগে নবি-রাসুলদের হয়েছিল। আর তারা তা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রায় প্রার্থনা করেছেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা অসুস্থতার বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন-
عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَى তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে। (সুরা মুযযাম্মেল : আয়াত ২০)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় নবি ও তার প্রিয় বান্দাদের রাত জেগে কুরআন তেলাওয়াত ও রাতের ইবাদত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। আর ধারাবাহিক রাতজেগে ইবাদত করলে কেউ কেউ অসুস্থ হতে পারে সে কথাও আল্লাহ তাআলা তুলে ধরেছেন। পুরো আয়াতটি ছিল এই-
আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি ইবাদতের জন্য দন্ডায়মান হন রাতের প্রায় দু তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দণ্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিন ও রাত পরিমাপ করেন। তিনি জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পারবে না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরায়ন হয়েছেন। কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ, ততটুকু তেলাওয়াত কর। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর। তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সুরা মুযযাম্মেল : আয়াত ২০)
যে কোনো মানুষসহ মুমিন বান্দা যে অসুস্থ হতে পারেন এ আয়াতই তার প্রমাণ। কারণ আল্লাহ বলেছেন অসুস্থ হয়ে গেলে অল্প পরিমাণ হলেও তোমরা কুরআন তেলাওয়াত কর।
আবার রোজার বিধান দেওয়ার পর আল্লাহ তাআলা অসুস্থদের জন্য রমজানের ফরজ রোজাকেও শিথিল করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে লোক এ (রমজান) মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
মুমিন বান্দাসহ যে কোনো মানুষ অসুস্থ হতে পারেন- এ আয়াতও এর একটি প্রমাণ-
لَيْسَ عَلَى الْأَعْمَى حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْأَعْرَجِ حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْمَرِيضِ حَرَجٌ وَلَا عَلَى أَنفُسِكُمْ أَن تَأْكُلُوا مِن بُيُوتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ آبَائِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أُمَّهَاتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ إِخْوَانِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَخَوَاتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَعْمَامِكُمْ أَوْ بُيُوتِ عَمَّاتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَخْوَالِكُمْ أَوْ بُيُوتِ خَالَاتِكُمْ أَوْ مَا مَلَكْتُم مَّفَاتِحَهُ أَوْ صَدِيقِكُمْ لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَأْكُلُوا جَمِيعًا أَوْ أَشْتَاتًا فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُون ;অন্ধের জন্য দোষ নেই, খঞ্জের জন্য দোষ নেই, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোষ নেই, এবং তোমাদের নিজেদের জন্যও দোষ নেই যে, তোমরা আহার করবে তোমাদের ঘরে অথবা তোমাদের পিতাদের ঘরে অথবা তোমাদের মাতাদের ঘরে অথবা তোমাদের ভাইদের ঘরে অথবা তোমাদের বোনদের ঘরে অথবা তোমাদের পিতৃব্যদের ঘরে অথবা তোমাদের ফুফুদের ঘরে অথবা তোমাদের মামাদের ঘরে অথবা তোমাদের খালাদের ঘরে অথবা সেই ঘরে- যার চাবি আছে তোমাদের হাতে অথবা তোমাদের বন্ধুদের ঘরে। তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথকভবে আহার কর, তাতে তোমাদের কোনো দোষ নেই। অতঃপর যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও। (সুরা নুর : আয়াত ৬১)