কেয়ামত মানে উঠে দাঁড়ানো বা দণ্ডায়মান হওয়া। এটা আরবি শব্দ কিয়াম থেকে আগত যার অর্থ ওঠা, দাঁড়ানো ইত্যাদি। এই জগতের আয়ু যখন ফুরাবে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যখন বিদ্যমান বিশ্বজগতকে ধ্বংস করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন হজরত ইসরাফিলকে (আ.) নির্দেশ দেবেন শিঙ্গায় ফুৎকার দিতে।
ইসরাফিল (আ.) শিঙ্গায় প্রথমবার ফুঁক দেওয়ার সাথে সাথে আকাশ ফেটে যাবে, তারকাসমূহ খসে পড়বে, পাহাড়-পর্বত ছিন্ন বি চ্ছিন্ন হয়ে তুলার মত উড়তে থাকবে। আকাশসহ সমগ্র বিশ্বজগত ধ্বংস হয়ে যাবে। সব সৃষ্টিকুল মারা যাবে। এরপর নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে আল্লাহ তাআলা ইসরাফিলকে (আ.) দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার নির্দেশ দেবেন। দ্বিতীয়বার ফুঁক দেওয়ার সাথে সাথেই পৃথিবী সৃষ্টি থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত সৃষ্টজীবের আর্বিভাব হয়েছিল, তারা সবাই জীবিত হয়ে উঠে দাঁড়াবে। এরপর এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের নেক ও বদ কাজের হিসাব নেবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخۡرَىٰ فَإِذَا هُمۡ قِيَامٞ يَنظُرُونَ وَأَشۡرَقَتِ ٱلۡأَرۡضُ بِنُورِ رَبِّهَا وَوُضِعَ ٱلۡكِتَٰبُ وَجِاْيٓءَ بِٱلنَّبِيِّۧنَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَقُضِيَ بَيۡنَهُم بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ
শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। আর জমিন তার রবের নুরে আলোকিত হবে, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। (সুরা জুমার: ৬৮, ৬৯)
এ প্রসঙ্গে আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَاخِرِينَ
আর যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, সেদিন আসমানসমূহ ও জমিনে যারা আছে সবাই ভীত হবে; তবে আল্লাহ যাদেরকে চাইবেন তারা ছাড়া। আর সবাই তার কাছে হীন অবস্থায় উপস্থিত হবে। (সুরা নামল: ৮৭)
দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়ার পর কী ঘটবে সে বিষয়ে আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ ٱلۡأَجۡدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ يَنسِلُونَ
আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে আসবে। (সুরা ইয়াসিন: ৫১)
সুরা কারিয়ায় কেয়ামতকে উল্লেখ করা হয়েছে সবাইকে কাঁপিয়ে দেওয়া এক ঘটনা বা বিপদ হিসেবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
ٱلۡقَارِعَةُ مَا ٱلۡقَارِعَةُ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا ٱلۡقَارِعَةُ يَوۡمَ يَكُونُ ٱلنَّاسُ كَٱلۡفَرَاشِ ٱلۡمَبۡثُوثِ وَتَكُونُ ٱلۡجِبَالُ كَٱلۡعِهۡنِ ٱلۡمَنفُوشِ فَأَمَّا مَن ثَقُلَتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَهُوَ فِي عِيشَةٖ رَّاضِيَةٖ وَأَمَّا مَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُمُّهُۥ هَاوِيَةٞ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا هِيَهۡ نَارٌ حَامِيَةُۢ
মহাবিপদ! কী সেই মহাবিপদ? মহাবিপদ সম্পর্কে তুমি কী জান? যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত, আর পর্বতরাজি হবে ধূনিত রঙিন পশমের মত। তারপর যার (নেক কাজের) পাল্লা ভারি হবে, সে লাভ করবে সুখী জীবন। আর যার (নেক কাজের) পাল্লা হালকা হবে, তার আবাস হবে হাবিয়া। তুমি কি জান হাবিয়া কী? উত্তপ্ত আগুন। (সুরা কারিয়া: ১-১১)
কেয়ামত, হিসাব ও প্রতিদানে বিশ্বাস মুসলমান হিসেবে আমাদের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস, পরকালে অবিশ্বাসী হয়ে কেউ মুমিন হতে পারে না। তাই কেয়ামত ও আখেরাতের বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে অন্তরে ধারণ করা আমাদের কর্তব্য।