যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

স্বাধীনতা ও ইসলাম

প্রতিটি ধর্মই স্বাধীনতার কথা বলছে। একটি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাস যেমন গৌরবের, তেমনি বেদনার। কারণ অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। আমাদের দেশের স্বাধীনতা পেতেও রক্তক্ষয়ী লড়াই করতে হয়েছে। স্বাধীনতা মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত।ইসলামে সকল প্রকার স্বাধীনতার বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতা চায় না এমন কি কেউ আছে? সৃষ্টির প্রতিটি জীব স্বাধীনতা পছন্দ করে। পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি বা জীব পাওয়া যাবে না যারা পরাধীন থাকতে চায়। তাই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সবাই কতই না চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে থাকে। আর এই স্বাধীনতার জন্যই মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে মক্কাকে করেছিলেন স্বাধীন।তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু তাদেরকে বাহ্যিকভাবে স্বাধীন করেন নাই বরং আধ্যাত্মিকভাবেও সকলকে স্বাধীন করেছিলেন। তিনি প্রত্যেক আত্মাকে স্বাধীন করে জগতে স্বাধীনতার এক নতুন মাত্রা স্থাপন করেছিলেন।

মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন স্বাধীনতার উজ্জ্বল সূর্য। যার কিরণ দূর-দূরান্তে বিস্তার লাভ করেছে, যিনি নিজের মাঝে সব ধরণের স্বাধীনতাকে ধারণ করেছিলেন। যিনি মানুষকে শুধু বাহ্যিক দাসত্ব থেকেই স্বাধীনতা দেননি, বরং সমাজ ও দেশ থেকে সব ধরণের নৈরাজ্য দূর করে সবাইকে করেছিলেন স্বাধীন।বিশ্বের এক বিশাল জনগোষ্ঠী অবলোকন করেছে, কিভাবে বিশ্বনবি রহমাতুল্লিল আলামীন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বত্র স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরাধীনতার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য তিনি যেমন লড়েছেন তেমনি তিনি সকলকে স্বাধীনও করেছিলেন।প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহপাক মানুষকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক মানুষ মাতৃগর্ভ থেকে স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে। আল্লাহ তাআলা সবাইকে বিবেক ও বিশ্বাসেরও স্বাধীনতা দিয়েছেন। কাউকে পরাধীন করেননি।

যেভাবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, তুমি বল, চূড়ান্ত যুক্তি-প্রমাণতো একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। অতএব তিনি যদি চাইতেন তোমাদের সবাইকে অবশ্যই হেদায়াত দিতেন। (সুরা আন আম, আয়াত: ১৪৯)

অপর এক স্থানে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আর তোমার প্রভু-প্রতিপালক যদি চাইতেন অবশ্যই তিনি সব মানুষকে এক উম্মত বানিয়ে দিতেন। কিন্তু তারা সবসময় মতভেদ করতেই থাকবে। (সুরা হুদ, আয়াত: ১১৮)

উপরোক্ত আয়াতগুলো স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে, আল্লাহ সবার স্বাধীনতা চান। তিনি চাইলে সবাইকে একসঙ্গে মুমিন বানাতে পারেন এবং হেদায়াত দিতে পারতেন কিন্তু আল্লাহ তাআলা তা করেননি। তিনি মানুষকে ভালো-মন্দ দুটি রাস্তা দেখিয়ে স্বাধীন করে দিয়েছেন। তিনি চেয়েছেন মানুষ যেন স্বাধীনভাবে বুঝে-শুনে ঈমান আনে, মানুষ যেন তার আত্মার বিশ্লেষণ করে আল্লাহকে গ্রহণ করে।মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করে, তাদেরকে মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয়, সম্মান, আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

তিনি প্রতিটি আত্মাকে স্বাধীন করে সেই আত্মাগুলোতে আল্লাহর ভালোবাসা সৃষ্টি করেছিলেন। পশুতুল্য মানুষকে আল্লাহওয়ালা মানুষে পরিণত করেছিলেন। আর এসব সম্ভব হয়েছে আত্মার স্বাধীনতার মাধ্যমেই।আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে স্বাধীনতার গুরুত্ব উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন, আমিন।