অজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর
No icon

ধৈর্যশীলদের জন্য সুসংবাদ

সৃষ্টিকর্তা মানুষকে এমন একটা ক্ষমতা দিয়েছে যার মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীতে তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয় এবং নিজের জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আর এই ক্ষমতাটা আল্লহ সুবহানাহু তায়ালা পৃথিবীর সব মানুষকেই দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের মাঝে কোনো তারতম্য ঘটেনি!আর এই ক্ষমতাটা হলো তাঁর সৃষ্টিকে ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা! আমরা হয়তো ভাবতে পারি যে, সৃষ্টিকে ভুলে যাওয়া আবার কোনো ক্ষমতা হয় না কি!হ্যাঁ, অবশ্যই এটা একটা বিরাট ক্ষমতা। এই ক্ষমতা যদি মানুষের না থাকত তাহলে একজন মা বা একজন বাবা তাদের কলিজার টুকরো সন্তানের মৃত্যুর কিছুদিন পরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারত না। একজন সন্তান তার পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, তার মা-বাবার মৃত্যুর পরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করার কথা চিন্তা করতে পারত না।আমরা হয়তো বা জানি না যে, মানুষ যদি তাদের আপনজনদের মৃত্যুর পর তাদের ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক না পেত তাহলে মানুষ পৃথিবীতে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারত না। যদিওবা বিভিন্ন সময়ে তাদের স্মৃতি মানুষকে কাঁদায় কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই মানুষ তাদেরকে ভুলে থাকে। আর এই ভুলে থাকার কারণেই পৃথিবীতে মানুষ আজো স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করছে।আমরা আমাদের জীবনের সব থেকে অসহায় সময়ও অর্থাৎ আমাদের সব থেকে প্রিয় মানুষদের সারা জীবনের জন্য পৃথিবী থেকে বিচ্ছেদেরও বেদনা কাটিয়ে উঠতে পারব বলে আশা পোষণ করছি; তাহলে মানব জীবনের সামান্য একটু বিপদ, সামান্য একটু কষ্ট বা সমস্যার দরুন আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের জীবন অন্ধকারের মধ্যে নিমজ্জিত করছি কেন সে কথা কি কখনো ভেবে দেখেছি!


মানুষের জীবনে সমস্যা আসবে এবং একসময় সেই সমস্যার সমাধানও হয়ে যাবে। তার জন্য প্রয়োজন ধৈর্য ধারণ করা।তবে আমরা যখন আমাদের জীবনের সামান্য একটু সমস্যার কারণেই অধৈর্য হয়ে পড়ি তখন আমরা ইবলিশ শয়তানের টার্গেটে পড়ে যাই। শয়তান তখন আমাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। ফলে আমাদের মনোবল এমনভাবে ভেঙে যায় যে, আমরা আমাদের সামনে যে দিকেই তাকাই না কেন সে দিকেই অন্ধকার দেখতে পাই। এভাবে করতে করতে আমাদেরকে এমনভাবে হতাশায় নিমজ্জিত করে ফেলে যে, আমরা বেঁচে থাকার মতো শক্তিও হারিয়ে ফেলি। ফলে অনেক সময় শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আমরা আত্মহত্যার মতো মহাপাপের দিকে ধাবিত হয়ে যাই। ফলে দুনিয়া বরবাদের সাথে সাথে আমাদের আখিরাতও বরবাদ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।তাই আমরা যারা জীবনের একটি সমস্যা নিয়েই অনেক চিন্তিত এবং হা-হুতাশের মাধ্যমে নিজের জীবনকে অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছি তাদের উচিত নিজেকে এই বলে সান্ত;না দেয়া যে, না! আমার একটা সমস্যা তাতে কী হয়েছে, পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের া যদি তাদের জীবনকে স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করতে পারে, তাহলে আমি কেন পারব না!আর সমস্যা, সে তো একদিন না একদিন সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিন্তু এই জীবন, যা একবার চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।
তাই আমাদের উচিত হবে বেশি আবেগপ্রবণ না হওয়া। আর আবেগের বশে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের জীবনকে অন্ধকারের মধ্যে নিমজ্জিত করা থেকে বিরত থাকা, বরং কোনো বিপদ বা সমস্যার মধ্যে পড়লে ধৈর্যধারণ করা।

কেননা, আল্লাহ তায়ালা অনেক সময় মানুষকে সমস্যার মধ্যে নিপতিত করে পরীক্ষা করে থাকেন। আর এ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৫৫ নম্বর আয়াতে বলেছেনআমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলব : মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও। আর আমরা যদি এই রকম কোনো সমস্যায় নিপতিত হই তাহলে আমাদের করণীয় কী? আমাদের করণীয় হলো ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। কেননা, পৃথিবীতে চলতে গেলে মানবজীবনে অনেক সঙ্কট, সমস্যা বা বাধার মুখে পড়তে হয়। আর যারা ঈমানদার তারা এসব বাধা-বিপত্তির মোকাবেলায় দুটি কাজ করে। তারা বিপদ ও সঙ্কটের সময় ধৈর্য ধারণ করে এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করে। কেননা, আল্লহ সুবহানাহু তায়ালা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি ধৈর্যশীল নামাজিদের সহায়তা করবেন এবং সর্বাবস্থায় তিনি তাদের সাথে থাকবেন। আর এ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সূরা বাকারার ১৫৩ নম্বর আয়াতে বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। আর যারা ঈমান এবং আমলের সাথে বিপদাপদে মানুষকে ধৈর্যের উপদেশ দেবে তারা কখনো ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত হবে না, বরং তারা সফলকাম হবে। কেননা, এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা আসরে আল্লাহ তায়ালা বলেন, মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়। তাই আমাদের উচিত হবে সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। হাজারো সমস্যা লেগেই থাকে।