যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

রমজানে কোরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, রমজান মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়াত ও সুপথপ্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশনা আর হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং, তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে এবং আল্লাহকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে (সুরা :বাকারা; আয়াত :১৮৫)। তাই কোরআন নাজিলের মাসে কোরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম।আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে আল্লাাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর তিলওয়াত করে, তার বিনিময়ে সে একটি নেকি পাবে। আর একটি নেকির বিনিময় হবে ১০ গুণ। এ কথা বলছি না যে, আলিফ লাম মিম একটি অক্ষর, বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মিম একটি অক্ষর। বস্তুত, কোরআন তিলাওয়াত মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। এটিকে লোকসানমুক্ত ব্যবসা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর প্রতিদান কখনো বিনষ্ট হয় না। ইরশাদ হয়েছে, যারা আল্লাহকে স্মরণ করে আল্লাহর কিতাব তিলওয়াত করে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করে এমন ব্যবসার, যার কোনো ক্ষয় নেই। এজন্য যে, আল্লাহ তাদের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো বেশি দেবেন; তিনি সর্বোত্তম ক্ষমাশীল ও গুণগ্রাহী।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রমজান মাসের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে উপস্থিত হন এবং তারা উভয়েই পবিত্র কোরআন তিলওয়াত করেন একে অপরকে শোনাতে (বুখারি শরিফ; হাদিস-০৬)। যে ব্যক্তি যথাযথভাবে রোজা রাখবে এবং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করবে, কিয়ামতের দিন কোরআন ও রোজা তাদের সুপারিশ করবে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, রোজা ও কোরআন সব মোমিন মুসলমান বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে যে, হে আমার রব, আমি তাকে খাবার ও দিবসে প্রবৃত্তি থেকে বিরত রেখেছি। অতএব আল্লাহকে বলবে, আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আর কোরআন বলবে, আমি বান্দাদের রাতের বেলায় ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব, বান্দাদের, অর্থাত্ মোমিন মুসলমানদের ব্যাপারে সুপারিশ গ্রহণ করুন। তখন তাদের উভয়ের আমল কবুল করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ)

শেষ রাতে কোরআন তিলওয়াত করা সর্বোত্তম সময়। কেননা, এই সময়ে মন-মানসিকতা শান্ত ও পবিত্র থাকে। চিন্তা-ভাবনার প্রখরতা তৈরি হয়। ইরশাদ হয়েছে, আমি আপনার ওপর ভারী কথা অবতীর্ণ করেছি। অবশ্যই রাতের জাগা এমন কাজ, যার মাধ্যমে শক্তভাবে প্রবৃত্তির দমন হয় এবং উত্তমরূপে কথা বলা যায় (সুরা:মুজাম্মিল; আয়াত-০৬)।

কোরআনের আয়াত নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করা কর্তব্য। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, এটা কল্যাণময় কিতাব, যা আমি আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতগুলো অনুধাবন করে এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা উপদেশ গ্রহণ করে। কোরআন তিলওয়াতের সময় কান্না করা সুন্নত। কোরআনে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, তাদের কাছে দয়াময়ের আয়াত তিলওয়াত করা হলে কান্না করতে করতে তারা সিজদায় লুটে পড়ত। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (স.) আমাকে বলেছেন, আমাকে তুমি কোরআন তিলওয়াত করে শোনাও। বললাম, আমি আপনাকে তিলওয়াত শোনাব, অথচ আপনার ওপরই এটি অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন, আমি অন্যের তিলওয়াত শুনতে পছন্দ করি। অতঃপর আমি তাকে সুরা নিসা (৪১ নম্বর আয়াত) পড়ে শোনাতে লাগলাম। তখন তিনি বললেন, থামো, যথেষ্ট হয়েছে। দেখা গেল, তখনই তার চোখ থেকে অঝোরধারায় অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে (বুখারি শরিফ-৫০৫০)।

পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের সময় মনোযোগ দিয়ে শুনতে বলা হয়েছে। অতএব, রমজান মাসে পবিত্র কোরআন তিলওয়াত শোনা ও পাঠ করা অত্যন্ত উত্তম।