কে আমলের দিক থেকে উত্তম তা পরীক্ষার ঘোষণা দিয়ে সুরা মুলক পড়ার মাধ্যমে শুরু হবে ১৪৪৪ হিজরির ২৬তম তারাবিহ। আজকের তারাবিহতে সুরা মুলক, সুরা আল-ক্বালাম, সুরা আল-হাক্কাহ, সুরা আল-মাআ রিজ, সুরা নূহ, সুরা জিন, সুরা আল-মুযযাম্মিল, সুরা আল-মুদ্দাছছির, সুরা আল-ক্বিয়ামাহ, সুরা আল-ইনসান ও সুরা আল-মুরসালাত পড়া হবে। সে সঙ্গে ২৯তম পারার তেলাওয়াত শেষ হবে। আজকের তারাবিহের তেলাওয়াতে হাফেজে কোরআনগণ সুরা নুহ-এর মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনার পুরস্কারের কথা ঘোষণা করবেন এভাবে-
فَقُلۡتُ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّهٗ کَانَ غَفَّارًا یُّرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡکُمۡ مِّدۡرَارًا وَّ یُمۡدِدۡکُمۡ بِاَمۡوَالٍ وَّ بَنِیۡنَ وَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ جَنّٰتٍ وَّ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ اَنۡهٰرًا
তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ত তি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)
এ আয়াতে কারিমায় আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা প্রার্থনা কথা বলেছেন। রোজাদার বান্দারা ক্ষমা প্রার্থনা করলে-
আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন।
রহমতের বৃষ্টি দান করবেন।
যারা সন্তানহীন তাদের সন্তান-সন্তুতি দান করবেন।
যাদের সহায় সম্বল নেই, তাদের ধন-সম্পদ দান করবেন।
সবুজ উদ্যান দান করবেন।
উপকারি নদ-নদী দান করবেন।
আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
আল্লাহ তাআলা নির্দেশ হলো- ঈমান এবং আনুগত্যের পথ অবলম্বন কর এবং তোমাদের প্রভুর কাছে নিজেদের বিগত জীবনের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নাও।
এই আয়াতের কারণে কোনো কোনো আলেম ইস্তিসক্বার নামাজে সুরা নুহ পাঠ করাকে মোস্তাহাব মনে করেন। বর্ণিত আছে যে, হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার ইস্তিসক্বার নামাজের জন্য মিম্বরে আরোহণ করে কেবলমাত্র ইস্তিগফারের আয়াতগুলি (যাতে এই আয়াতও ছিল) পড়ে মিম্বর হতে নেমে গেলেন এবং বললেন, বৃষ্টির সেই পথসমূহ থেকে বৃষ্টি কামনা করেছি, যা আসমানে রয়েছে এবং যেগুলো হতে বৃষ্টি জমিনে বর্ষিত হয়। (ইবনে কাসীর)
হজরত হাসান বসরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, তাঁর কাছে এসে কেউ অনাবৃষ্টির অভিযোগ জানালে, তিনি তাকে ইস্তিগফার করার কথা শিক্ষা দিতেন। আর একজন তাঁর কাছে দরিদ্রতার অভিযোগ জানালে, তাকেও তিনি এই (ইস্তিগফার করার) কথাই বাতলে দিলেন। অন্য একজন তার বাগান শুকিয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানালে, তাকেও তিনি ইস্তিগফার করতে বললেন। এক ব্যক্তি বলল যে, আমার সন্তান হয় না, তাকেও তিনি ইস্তিগফার করতে বললেন। যখন কেউ তাঁকে প্রশ্ন করল যে, আপনি সবাইকে কেবল ইস্তিগফারই করতে কেন বললেন? তখন তিনি এই আয়াতই তেলাওয়াত করে বললেন, ;আমি নিজের পক্ষ থেকে এ কথা বলিনি, বরং উল্লিখিত সমস্ত ব্যাপারে এই ব্যবস্থাপত্র মহান আল্লাহই দিয়েছেন। (আইসারুত তাফাসির)
এ কথাটি পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে যে, আল্লাহদ্রোহিতার আচরণ মানুষের জীবনকে শুধু আখেরাতেই নয় দুনিয়াতেও সংকীর্ণ করে দেয়। অপর পক্ষে কোনো জাতি যদি অবাধ্যতার বদলে ঈমান, তাকওয়া এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার পথ অনুসরণ করে তাহলে তা শুধু আখেরাতের জন্যই কল্যাণকর হয় না, দুনিয়াতেও তার ওপর আল্লাহর অশেষ নেয়ামত বর্ষিত হতে থাকে। অন্যত্র বলা হয়েছে, আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার দুনিয়ার জীবন হবে সংকীর্ণ। আর কেয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ করে উঠাবো। (সুরা ত্বা-হা: আয়াত ১২৪)
আরও বলা হয়েছে, আহলে কিতাব যদি তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত তাওরাত, ইঞ্জিল ও অন্যান্য আসমানি কিতাবের বিধানাবলী মেনে চলতো তাহলে তাদের জন্য ওপর থেকেও রিজিক বর্ষিত হতো এবং নীচ থেকেও ফুটে বের হতো। (সুরা আল-মায়েদাহ: আয়াত ৬৬)
আরও বলা হয়েছে, জনপদসমূহের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনতো এবং তাকওয়ার নীতি অনুসরণ করতো তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতের দরজাসমূহ খুলে দিতাম। (সুরা আল-আরাফ: আয়াত ৯৬)
অনুরূপভাবে হজরত হুদ আলাইহিস সালাম তার কওমের লোকদের বললেন, ;হে আমার কওমের লোকেরা, তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তার দিকে ফিরে যাও। তিনি তোমাদের ওপর আসমান থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তি ও ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেবেন। (সুরা হূদ: আয়াত ৫২)
স্বয়ং নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়ে মক্কার লোকদের সম্বোধন করে সেখানে আরও বলা হয়েছে আর তোমরা যদি তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তার দিকে ফিরে আস তাহলে তিনি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দান করবেন। (সুরা হুদ: আয়াত ৩)