যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

রমজানের আমল ধরে রাখার নির্দেশ

রমজান মাস শেষ হলো। শুরু হলো ঈদের মাস শাওয়াল। রমজান মাস রোজাদারের আমল অনুযায়ী পক্ষে কিংবা বিপক্ষে সাক্ষী হয়ে থাকবে। রমজানে যারা ভালো আমল করতে পেরেছে, সে যেন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। ও শুভ পরিণামের অপেক্ষায় থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ ভালো আমলকারীর আমল নষ্ট করেন না। আর যে ব্যক্তি রমজান মাসে অন্যায় কাজ করেছে, সে যেন তার প্রভুর কাছে ক্ষমা পেতে একনিষ্ঠ তওবা করে। আল্লাহ তাআলা তওবাকারীর তওবা কবুল করেন। তবে আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের আমল ধরে রাখার নির্দেশ দেন।

আল্লাহ তাআলা ঈদের দিন তাঁর বান্দাদের জন্য ঈদের নামাজ প্রবর্তন করেছেন; যা মহান আল্লাহর জিকির বা স্মরণকে পূর্ণতা প্রদান করে। তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাঁর উম্মতের নারী-পুরুষ সবাইকে এ আদেশ দিয়েছেন। আর নির্দেশ শিরোধার্য। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন-

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَلَا تُبۡطِلُوٓاْ أَعۡمَٰلَكُمۡ হে ঈমানদারগণ! তেমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য কর। তোমাদের আমলসমূহকে নষ্ট করো না। (সুরা মুহাম্মাদ: আয়াত ৩৩)

আল্লাহ তাআলা রমজানের শেষ কিছু ইবাদত নির্ধারণ করেছেন, যা রোজাদারকে আল্লাহর নৈকট্য বাড়িয়ে দেবে, ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং আমলনামায় অধিক সওয়াব লেখা হবে। তিনি রোজাদারের জন্য প্রবর্তন করেছিন তাকবির । রমজানের সময় পূর্ণ হওয়ার পর সূর্য ডোবার পর ঈদের চাঁদ উঠা থেকে শুরু করে ঈদের নামাজ আদায় পর্যন্ত তাকবির পাঠ করা। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ

যাতে তোমরা গণনা পূরণ করো এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ব বর্ণনা করো (তাকবির বলো) আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পারো। (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ১৮৫)

তাকবিরের পদ্ধতি হলো- الله أكبر الله أكبر لا إِله إِلاَّ الله والله أكبر الله أكبر ولله الحمد আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। <

তাকবিরের সুন্নত হচ্ছে যে, পুরুষগণ আল্লাহর মহত্বের ঘোষণা দেওয়া, তাঁর ইবাদত ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য মসজিদে, বাজারে এবং ঘরে সকল জায়গায় উচ্চস্বরে তাকবির দেবে। আর নারীরা তাদের স্বর নিচু করে তাকবির দেবে। যেহেতু তার নিজেদেরকে ও নিজেদের কণ্ঠস্বরকে গোপন করার জন্য আদিষ্ট হয়েছে।

তাই প্রত্যেক রোজাদারের উচিত, তিনি যেন রমজানের মতো আল্লাহর বড় নেয়ামত পাওয়া এবং তিনি যে এতে বান্দাকে নামাজ, রোজা, কোরআন তেলাওয়াত, সাদকা ইত্যাদি ইবাদত করা সহজ করে দিয়েছেন সে জন্য যেন তারা আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করে। কারণ তা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা আছে তা থেকেও উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন-

قُلۡ بِفَضۡلِ ٱللَّهِ وَبِرَحۡمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُواْ هُوَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ বলুন এটা আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায় কাজেই এতে তারা যেন আনন্দিত হয়। তারা যা পুঞ্জীভূত করে তার চেয়ে এটা উত্তম। (সুরা ইউনুস: আয়াত ৫৮)

রমজান মাস শেষ হয়ে গেল। কিন্তু মুমিনের আমল তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শেষ হবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা মৃত্যু আসার আগ পর্যন্ত তার ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-

وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ আপনি আপনার প্রভুর ইবাদত করুন আপনার মৃত্যু আসা পর্যন্ত। (সুরা হিজর: আয়াত ৯৯)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর যথাযথ তাকওয়া অবলম্বন কর। আর তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১০২)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। (তিরমিজি ১৩৭৬)

এখানে একমাত্র মৃত্যুকেই মানুষের আমলের পরিসমাপ্তি ধরা হয়েছে। সুতরাং রমজান মাসের রোজা শেষ হলেও ঈমানদারের আমল রোজা রাখা বন্ধ হয়ে যাবে না; কারণ রোজা তো তারপরও প্রতি বছর থাকবে। আর আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা। যেমন-

হজরত আবু আইয়ুব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ যে ব্যক্তি রমযানে সিয়াম পালন করবে রপর শাওয়ালের আরও ছয়টি রোজা রাখবে সে সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য সওয়াব পাবে। (মুসলিম ১১৬৪)

এ ছাড়াও প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা পালন করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে বলেন-

ثَلَاثٌ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، فَهَذَا صِيَامُ الدَّهْرِ كُلِّهِ

প্রতি মাসে তিনটি এবং এক রমজানের পর অন্য রমজান রোজা রাখা সারা বছর রোজা পালনের সমান। (মুসলিম ১১৬২)