অজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর
No icon

মাদকসেবীর ইবাদত প্রসঙ্গে ইসলাম

মাদক মানবসমাজের প্রাচীনতম ক্ষতগুলোর একটি, যা সমাজে নানা অনাচার ও অপরাধের অন্যতম কারণ। ইসলাম মানুষের জন্য ক্ষতিকর সব কিছুর মতো মদকেও নিষিদ্ধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মদ পান কোরো না। কেননা তা সকল অকল্যাণের চাবিকাঠি। 

মাদক মাত্রই হারাম

শরিয়তে সব ধরনের নেশাদ্রব্য হারাম। চাই মদের মতো সুপ্রাচীন হোক বা ইয়াবার মতো নব-উদ্ভাবিত হোক। শরিয়তের মূলনীতি হলো নেশা সৃষ্টি করে এমন সব দ্রব্য হারাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু হারাম। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৩৪৩)

অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু মদ এবং প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু হারাম।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৬৯৯)

নেশা সৃষ্টি না করলেও মাদক হারাম

মাদকদ্রব্যের সামান্য পরিমাণ গ্রহণ করাও বৈধ নয়, এমনকি তাতে যদি নেশা সৃষ্টি না হয় তবু। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার বেশি পরিমাণ নেশা সৃষ্টি করে, তার সামান্য পরিমাণও হারাম।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৬০৭)

মাদক গ্রহণের শাস্তি

শরিয়তে মদ পান করা হারাম এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং চার খলিফার প্রত্যেকে মদ পানকারীকে শাস্তি দিয়েছেন। ফকিহ আলেমরা বলেন, খেজুর, আঙুর ও কিশমিশের তৈরি মদ স্বেচ্ছায় গ্রহণকারী ব্যক্তি নেশাগ্রস্ত হোক বা না হোক, তাকে ৮০ বার বেত্রাঘাত করা হবে। এ ছাড়া অন্যান্য উৎপাদিত জিনিস বা যেকোনো জিনিস থেকে তৈরি করা নেশাদ্রব্য নেশাগ্রস্ত হওয়ার মতো পরিমাণ গ্রহণকারী ব্যক্তিকেও ৮০ বার বেত্রাঘাত করা হবে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মাদক সেবনের অপরাধে খেজুরের ডাল ও জুতা দিয়ে আঘাত করেন। আর আবু বকর (রা.) ৪০টি বেত্রাঘাত করেন।

অতঃপর ওমর (রা.) যখন খলিফা হন, তিনি লোকদের ডেকে বলেন, অনেক লোক পানির উৎসগুলোতে ও গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই এখন আপনারা মাদক গ্রহণের ‘হদ’ প্রসঙ্গে কী বলেন? তখন আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রা.) বলেন, আমরা হদের আওতায় লঘু শাস্তি দেওয়ার মত দিচ্ছি। সুতরাং তিনি এর শাস্তি হিসেবে ৮০টি বেত্রাঘাত নির্ধারণ করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৭৯)

মাদক গ্রহণের পরকালীন শাস্তি

মাদক গ্রহণকারী পরকালে নানা রকম শাস্তি ভোগ করবে। এর ভেতর সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বদা মদ পানকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৭৬)

মদ অপবিত্র

বেশির ভাগ আলেমের মতে, মদ অপবিত্র। সুতরাং তা শরীর বা কাপড়ে লাগলে নিয়ম অনুযায়ী পবিত্র করতে হবে; বরং কোনো কোনো আলেম মদ নাপাক বা অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ঐকমত্য (ইজমা) দাবি করেছেন। যেমন—আল্লামা ইবনু মুফলিহ (রহ.) বলেছেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমে এটা (মদ) হারাম।’ (আল মুবদি : ১/২০৯)

ইমাম নববী (রহ.) মদ নাপাক হওয়ার ব্যাপারে চার ইমামের ঐকমত্য করে বলেছেন, ‘মদ আমাদের কাছে (শাফেয়ি) নাপাক। একইভাবে তা মালিক, আবু হানিফা ও আহমদ (রহ.)-সহ সব আলেমের কাছে অপবিত্র।’ (আল মাজমু : ২/৫৮১)

মদ নাপাক হওয়ার পক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমাণ পবিত্র কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াত। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কোরো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০)