আল্লামা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ:) আধুনিক যুগে মুসলিম জাহানের একজন স্বনামধন্য আলেম। আধুনিক বিশ্বে শাইখ আলবানীকে ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইলমুল জারহে ওয়াত তাদীলের[1] ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রতিভাধারী আলেম হিসেবে গণ্য করা হয়। ইলমে মুস্তালাহুল হাদীসের[2] ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বক্তিত্ব।
মুহাদ্দিসগণ বলেছেন: “তিনি যেন ইবনে হাজার আসকালানী, হাফেয ইবনে কাসীর প্রমুখ ইলমুল জারহে ওয়াত তাদীলের আলেমদের যুগকে আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন।”
জন্ম ও পরিচয়:
নাম: মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন (১৯১৪-১৯৯৯ খৃষ্টাব্দ) পিতার নাম: আলহাজ্ব নূহ। দাদার নাম: নাজাতী। ডাক নাম: আবু আব্দুর রহমান। ইউরোপের মুসলিম অধ্যুষিত দেশ আলবেনিয়ায় তার জন্ম হওয়ায় তাকে আলবানী বলা হয়। তিনি ১৩৩৩ হিজরী মোতাবেক ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে আলবেনিয়ার রাজধানী স্কোডার (Shkodër-বর্তমান নাম তিরানা) এ জন্ম গ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল দরিদ্র। কিন্তু দীনদারী ও জ্ঞানার্জন তাদের দারিদ্রতার উপর ছিল বিজয়ী। তার পিতা ছিলেন আলবেনিয়ার একজন বিজ্ঞ আলেম। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের জন্য মানুষ তার কাছে ছুটে যেত। তিনি সাধ্যানুযায়ী মানুষকে দ্বীনের জ্ঞান দিতেন এবং তাদেরকে দিক নির্দেশনা প্রদান করতেন। তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শরীয়াহ বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।
আলবেনিয়ায় প্রেসিডেন্ট আহমদ জাগু পশ্চাত্য সেকুলার সভ্যতার দিকে ধাবিত হয়ে নারীদের পর্দা নিষিদ্ধ করলে তিনি শিশু আলবানীকে নিয়ে সপরিবারে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে হিজরত করেন।
শিক্ষা জীবন:
দামেস্ক আসার পর আলবানীর বয়স নয় বছরের কাছাকাছি হলে তার পিতা তাকে সেখানকার ‘স্কুল অব এইড চ্যারিটি’ নামক একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানেই তিনি কৃতিত্বের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
প্রচলিত একাডেমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দীন সম্পর্কে ভাল জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা ছিল না। বিধায় তার পিতা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজ ছেলের পড়া-শোনার ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টি পোষণ করতেন। এ কারণে, তিনি নিজে সন্তানের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষা সিলেবাস তৈরি করে তার মাধ্যমে তাকে আল কুরআনুল কারীম, তাজবীদ, নাহু, সরফ এবং হানাফী ফিকাহ ইত্যাদি বিষয় শিক্ষা দিতে লাগলেন। ফিকাহের মধ্যে হানাফী ফিকাহের অন্যতম কিতাব মুখতাসরুল কুদুরী পড়ান। তিনি তার পিতার কাছেই হাফস বিন আসেম এর রেয়াওয়াত অনুযায়ী কুরআনের হিফয সমাপ্ত করেন।
এরপর তার পিতার বন্ধু বিশিষ্ট আলেম শাইখ সাঈদ আল বুরহানীর নিকট হানাফী ফিকাহের কিতাব মুরাকিল ফালাহ, নাহুর কিতাব শুযূরুয যাহাব এবং আধুনিক যুগের লিখা আরবী সাহিত্য ও ইলমুল বালাগাহর কিছু কিতাবাদি পড়েন। এর পাশাপাশি তিনি তখনকার দামেস্কের প্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা মুহাম্মদ বাহজা আল বাইতারের বিভিন্ন দারসে অংশ গ্রহণ করতেন।
তিনি তার পিতার কাছেই ঘড়ি মেরামতের কাজ শিখেন এবং এ ক্ষেত্রে সুখ্যাতি অর্জন করেন। এরপর তিনি ঘড়ি মেরামতকেই জীবীকার পেশা হিসেবে বেছে নেন। এই পেশায় তিনি ব্যক্তিগত পড়া-লেখা ও বিভিন্ন কিতাবাদী অধ্যয়নের পর্যাপ্ত সময় পান। এভাবে সিরিয়ায় হিজরতের মাধ্যমে তার জন্যে আরবী ভাষা ও মূল উৎস থেকে শরীয়তের জ্ঞানার্জনের পথ সুগম হয়।
হাদীস অধ্যয়ন:
হাদীস অধ্যয়নের প্রতি তার মনোনিবেশ:
যদিও তার পিতার ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল তার ছেলে যেন হানাফী মাজহাবের তাকলীদ করে। যার কারণে তিনি তাঁকে ইলমে হাদীস চর্চায় মনোনিবেশ করতে সতর্ক করতেন। তথাপি আলবানী ইলমুল হাদীস ও হাদীস চর্চার দিকে ঝুঁকে পড়েন। এ ক্ষেত্রে তাঁকে প্রেরণা যোগায় শাইখ মুহাম্মদ রশীদ রেজা কর্তৃক প্রকাশিত আল মানার নামক একটি মাসিক ম্যাগাজিন। সেখানে হাদীস বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সন্দর্ভ প্রকাশিত হয় এবং তিনি সেগুলো নিয়মিতভাবে অধ্যয়ন করতে থাকেন। এভাবে ধীরে ধীরে হাদীস চর্চায় মনোনিবেশ করার জন্য তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠে। তারপর ব্যাপক আগ্রহ সহকারে হাদীস চর্চা শুরু করেন। ফলে মাত্র বিশ বছর বয়সে তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বুৎপত্তি অর্জন করেন।
এবার তিনি হাদীসের সেবায় কলম ধরলেন। সর্ব প্রথম যে কাজটি করলেন তা হল, তিনি হাফেজ ইরাকী (রহ:) এর লিখা “المغني عن حمل الأسفار في تخريج ما في الإحياء من الأخبار” নামক কিতাবটি কপি করে তাতে টিকা সংযোজন করলেন।
শাইখের এই কাজটি তার সামনে হাদীস নিয়ে গবেষণার বিশাল দরজা খুলে দেয়। এরপর ইলমে হাদীস নিয়ে গবেষণা করা তার প্রধান কাজে পরিণত নয়। ক্রমেই তিনি দামেস্কের ইলমী জগতে এ বিষয়ে পরিচিতি লাভ করেন।
যার পরিপ্রেক্ষিতে দামেস্কের জাহেরিয়া লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষ তার জন্য বিশেষ একটি কক্ষ নির্ধারণ করে দেয়, যেন তিনি সেখানে অবস্থান করে গবেষণা কর্ম চালাতে পারেন। সেই সাথে লাইব্রেরীর একটি চাবিও তাকে দেয়া হয় যেন তিনি যখন খুশি তাতে প্রবেশ করতে পারেন।
তবে বই-পুস্তক লেখা শুরু করেন তার জীবনে দ্বিতীয় স্তরে। এই পর্যায়ে এসে তিনি সর্ব প্রথম যে গ্রন্থটি রচনা করে তা হল: تحذير الساجد من اتخاذ القبور مساجد এটি একটি দলীল নির্ভর তুলনামূলক আলোচনা ভিত্তিক ফিকাহের কিতাব। এটি একাধিক বার মুদ্রিত হয়েছে।
ইলমে হাদীসের রীতি অনুসারে হাদীসের তাখরীজ সংক্রান্ত প্রথম পর্যায়ের অন্যতম একটি গ্রন্থ হল:
যা এখানো পাণ্ডুলিপি আকারেই রয়েছে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের সাথে যুক্ত থাকার কারণে শাইখ আলবানীর মধ্যে সালাফী চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটে। সেই সাথে সালাফী ধারার বিশ্ব বরেণ্য আলেম শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এবং তার ছাত্র ইবনুল কাইয়েম (রহ.) রচিত গ্রন্থাদী অধ্যয়ন করার ফলে এই রীতির উপর তার দৃঢ়তা আরও মজবুত হয়।
শাইখ আলবানী এবার সিরিয়ায় তাওহীদ ও সুন্নাহর দিকে দাওয়াতের পতাকা তুলে ধরলেন। ফলে সিরিয়ার অনেক আলেম ওলামা তার সাক্ষাতে আসেন এবং শাইখ ও ঐ সকল আলেমদের মাঝে তাওহীদের বিভিন্ন মাসআলা, কুরআন-সন্নাহর অনুসরণ, মাজহাবী গোঁড়ামি, বিদআত ইত্যাদি অনেক বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হয়।
ফলে মাজহাবের অন্ধভক্ত গোঁড়া আলেম-ওলামা, সুফি, বিদআতী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন একশ্রেণীর নামধারী আলেমদের পক্ষ থেকে তিনি প্রচণ্ড বিরোধিতার সম্মুখীন হন। এ সকল ব্যক্তিরা সাধারণ অজ্ঞ-মূর্খ লোকদেরকে তার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলে। তাকে ‘পথভ্রষ্ট ওহাবী’ বলে অপপ্রচার চালাতে থাকে এবং জনসাধারণকে শাইখ থেকে সর্তক করতে থাকে।
অপরপক্ষে তার দাওয়াতের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন দামেস্কের ইলম ও পরহেজগারীতায় প্রসিদ্ধ স্বনামধন্য আলেম-ওলামাগণ। তারা শাইখকে তার দাওয়াতের পথে দৃঢ় কদমে এগিয়ে যাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করেন। সে সকল ওলামাগণের মধ্যে অন্যতম হলেন: বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন আল্লামা বাহজাত আল বাইতার, সিরিয়া মুসলিম যুব সংঘের প্রধান শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আল ইমাম, শাইখ তাওফীক আল বাযারাহ প্রমুখ।
শাইখ আলবানীর দাওয়াহ কার্যক্রম:
নিয়মিত দারস:
তিনি প্রতি সপ্তাহে দুদিন আকীদাহ, ফিকাহ, উসুল এবং ইলমুল হাদীস ইত্যাদি বিষয়ে দারস প্রদান করতেন। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও উপস্থিত হতেন। এতে তিনি যে সকল বইয়ের উপর দারস প্রদান করতেন সেগুলো হল:
১) ফাতহুল মাজীদ, লেখক: আব্দুর রহমান বিন হাসান বিন মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব।
২) আর রওজাতুন নাদিয়াহ শারহুদ দুরারুল বাহিয়্যাহ লিশ শাওকানী শারহু সিদ্দীক হাসান খাঁন।
৩) উসূলুল ফিকাহ, লেখক: আব্দুল ওয়াহাব খাল্লাফ।
৪) আল বায়িসুল হাসীস শারহু ইখতিসারি উলূমিল হাদীস লি ইবনে কাসীর, লেখক: আহমদ শাকের।
৫) মিনহাজুল ইসলাম ফিল হুকম, লেখক: মুহাম্মদ আসাদ।
৬) ফিকহুস সুন্নাহ, লেখক: সাইয়েদ সাবিক।
খ) প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে তিনি দাওয়াতী সফরে বের হতেন। প্রথম পর্যায়ে তিনি মাসে এক সপ্তাহ দাওয়াতী কাজ করতেন। পরবর্তীতে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। তিনি সিরিয়ার বিভিন্ন জেলায় দাওয়াত নিয়ে যেতেন। পাশাপাশি জর্ডানের বিভিন্ন এলাকায়ও সফর করতেন এবং অবশেষে তিনি জর্ডানের রাজধানী আম্মানে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন। এই কারণে তার কিছু দুশমন সিরিয় সরকারের কাছে তার ব্যাপারে চুগলখোরি করলে সরকার তাকে জেলে পাঠায়।
কষ্টে ধৈর্য ধারণ ও হিজরত:
১৯৬০ সালের প্রথম দিকে শাইখ সিরিয়া ক্ষমতাসীনদের নজরদারীতে পড়েন যদিও তিনি রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। যা তার সামনে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। তিনি দুবার গ্রেফতার হয়েছেন। প্রথমবার ৬৮ সালের আগে দামেস্কের কেল্লা কারাগারে বন্দি ছিলেন একমাসের জন্য। এটা সেই কারাগার যেখানে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ:)কে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। ৬৮ সালের যুদ্ধের সময় সিরিয় সরকার সকল রাজবন্দীকে মুক্ত করে দিলে তিনিও মুক্ত হন।
কিন্তু যুদ্ধ আরও কঠিন রূপ ধারণ করলে শাইখকে পুনরায় কারাবরণ করতে হয়। কিন্তু এবার কেল্লা কারাগারে নয় বরং দামেস্কের পূর্ব-উত্তরাঞ্চলের আল হাসাকা কারাগারে। শাইখ এখানে আট মাস অতিবাহিত করেন। কারাগারে অবস্থানের এই আট মাস সময়ে তিনি হাফেয মুনযেরীর লেখা মুখতাসার সহীহ মুসলিম তাহকীক করেন এবং সেখানে অন্যান্য বড় বড় রাজবন্দী ব্যক্তিত্বের সাথে মিলিত হন।
পরবর্তীতে তিনি সিরিয়া ছেড়ে জর্ডানে পাড়ি জমান এবং রাজধানী আম্মানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন।
কার্যক্রম ও অবদান:
শাইখের অনেক ইলমী অবদান ও খেদমত রয়েছে। তন্মধ্যে:
১) শাইখ দামেস্ক একাডেমীর কতিপয় শিক্ষকদের সাথে আল্লামা বাহজাত আল বাইতারের বিভিন্ন দারসে অংশ গ্রহণ করতেন। সে সকল শিক্ষকদের একজন হলেন ইযযুদ্দীন আত তানূহী (রহ:)।
২) দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়া ফ্যাকাল্টির পক্ষ থেকে তাকে ইসলামী ফিকাহ কোষ এর বুয়ূ বা ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত হাদীসগুলো তাখরীজ করার জন্য মনোনীত করা হয় যা ১৯৫৫ইং সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
৩) মিসর ও সিরিয়া একীভূত হওয়ার যুগে হাদীসের কিতাব সমূহ তাহকীক ও প্রচার-প্রসারের নিমিত্তে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। শাইখকে এই প্রকল্প তত্ত্বাবধান কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়।
৪) ভারতের ঐতিহ্যবাহী দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া বেনারসে হাদীসের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য তার নিকট প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু তৎকালীন সময় ভারত-পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধ চলছিল। তাই স্ত্রী-পরিবার নিয়ে যাওয়া কঠিন হওয়ায় তিনি সেখানে যেতে অপারগতা পেশ করেন।
৫) সৌদি আরবের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী শাইখ হাসান আলুশ শাইখ আব্দুল্লাহ ১৩৮৮ হিজরীতে মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের হায়ার ডিপ্লোমা ইন ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার জন্য তাঁর নিকট আবেদন করেন কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তা গ্রহণ করা সম্ভব হয় নি।
৬) ১৩৯৫ হিজরী থেকে ১৩৯৮ হিজরী পর্যন্ত মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট সদস্য হিসেবে তাকে মনোনীত করা হয়।
৭) স্পেনের মুসলিম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন এর আহবানে তিনি সেখানে গিয়ে অত্যন্ত সারগর্ভ বক্তব্য প্রদান করেন যা পরবর্তীতে ‘আকীদা ও আহকাম উভয় ক্ষেত্রেই হাদীস স্বয়ং সম্পন্ন প্রমাণ’ এই শিরোনামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
৮) কাতার সফরে গিয়ে সেখানে বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যের বিষয় ছিল: “ইসলামে সন্নাহর মর্যাদা।”
৯) সৌদি আরবের মহামান্য গ্র্যান্ড মুফতী শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ.) এর পক্ষ থেকে তিনি মিসর ও মরক্কো এর ফতোয়া ও গবেষণা বোর্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। অনুরূপভাবে ব্রিটেনের তাওহীদ ও কুরআন-সন্নাহর দিকে আহবানের জন্য গঠিত একটি ইসলামী সংগঠনের প্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
১০) তাঁকে দেশে-বিদেশে অনেক সম্মেলনে অতিথি হিসেবে আহবান করা হয়। কিন্তু তিনি তার জ্ঞান-গবেষণার কাজে ব্যস্ততার দরুন অনেক দাওয়াতে সাড়া দিতে পারেন নি।
১১) তিনি কুয়েত ও আরব আমিরাতে সভা-সেমিনারে অনেক বক্তব্য প্রদান করেন। অনুরূপভাবে ইউরোপের কয়েকটি দেশে গমন করে সেখানকার মুসলিম অভিবাসী ও শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং অনেক মূল্যবান দারস পেশ করেন। এছাড়াও তিনি ব্রিটেন এবং জার্মানিতে দাওয়াতী উদ্দেশ্যে সফর করেন।
১২) শাইখের নিকট থেকে শিক্ষা অর্জন করে অগণিত ছাত্র বের হয়েছে যারা পরবর্তীতে বড় বড় গবেষক হিসেবে ইসলামে সেবায় আত্ম নিয়োগ করে করেছেন।
তাঁর লিখিত কিতাবাদী ও গবেষণা:
শাইখের অনেক মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ বই-পুস্তক ও গবেষণা কর্ম রয়েছে। সেগুলোর সংখ্যা শতাধিক। তন্মধ্যে অনেকগুলোই বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। কোন কোনটি একাধিক বার মুদ্রিত হয়েছে। সেগুলো থেকে নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বইয়ের তালিকা প্রদান করা হল:
১) ইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজি আহাদীসি মানারিস সাবীল। (নয় খণ্ডে সমাপ্ত)
২) সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ। (সহীহ হাদীস সিরিজ এবং সেগুলোর কিছু ব্যাখ্যা ও শিক্ষা।) (সাত খণ্ডে সমাপ্ত)
৩) সিলসিলাতুল আহাদীসিয যাঈফাহ ওয়া মাযূআহ (দূর্বল ও বানোয়াট হাদীস সিরিজ এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে তার কুপ্রভাব)। (চৌদ্দ খণ্ডে সমাপ্ত)
৪) সাহীহ ওয়া যাঈফ সুনান আবূ দাউদ (সুনান আবুদাউদের হাদীসগুলো তাখরীজ এবং তাহকীক করে সহীহ ও যঈফ দুভাবে ভাগ করা হয়েছে।) (দশ খণ্ডে সমাপ্ত)
৫) সাহীহ ও যাঈফ সুনান নাসাঈ (সুনান নাসাঈর হাদীসগুলো তাহকীক করে সহীহ ও যঈফ দুভাবে ভাগ করা হয়েছে।) (সাত খণ্ডে সমাপ্ত)
৬) সাহীহ ওয়া যাঈফ সুনান তিরমিযী (সুনান তিরমিযীর হাদীসগুলো তাহকীক করে সহীহ ও যঈফ দুভাবে ভাগ করা হয়েছে।) (সাত খণ্ডে সমাপ্ত)
৭) সাহীহ ওয়া যাঈফ সুনান ইবনে মাজাহ (সুনান ইবনে মাজার হাদীসগুলো তাহকীক করে সহীহ ও যঈফ দুভাবে ভাগ করা হয়েছে।) (ছয় খণ্ডে সমাপ্ত)
৮) সহীহ ওয়া যঈফুত তারগীব ওয়াত তারহীব। (তারগীব ওয়াত্ তারহীব কিতাবের হাদীসগুলো তাহকীক করে সহীহ ও যঈফ দুভাবে ভাগ করা হয়েছে।) (পাঁচ খণ্ডে সমাপ্ত)
৯) তাববীব ওয়া তারতীবু আহাদীসিল জামে’ আসসাগীর।
১০) সহীহ ওয়া যাঈফুল জামে’ আস সাগীর ওয়া যিয়াদাহিহী।
১১) আত তা’লীকাতুল হিসান আলা সাহীহ ইবনে হিব্বান।
১২) সহীহুল আদাবুল মুফরাদ। (এই গ্রন্থে ইমাম বুখারী (রহ:) রচিত আল আদাবুল মুফরাদ কিতাবের সহীহ হাদীসগুলো তাহকীক করে পৃথক করা হয়েছে।(
১৩) যঈফুল আদাবুল মুফরাদ। (এই গ্রন্থে ইমাম বুখারী (রহ:) রচিত আল আদাবুল মুফরাদ কিতাবের দূর্বল হাদীসগুলো তাহকীক করে পৃথক করা হয়েছে।)
১৪) তামামুল মিন্নাহ ফীত্ তা’লীক আলা ফিকহিস সুন্নাহ। (আল্লামা সাইয়েদ সাবিকের লেখা ফিকহুস সুন্নাহ গ্রন্থের তাহকীক ও তাতে টিকা সংযোজন।(
১৫) তাহকীক মিশকাতিল মাসাবীহ লিত তিবরীযী। (মিশকাতুল মাসাবীহের তাহকীক(
১৬) আস সুমুরুল মুসতাত্বাব ফী ফিকহিস সুন্নাহ ওয়া কিতাব।
১৭) আত তাওহীদ আওয়ালান ইয়া দুয়াতাল ইসলাম। (হে ইসলাম প্রচারকগণ, সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত দিন)
১৮) ফাযলুস সালাতি ‘আলান্নাবী। (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ পাঠের ফযীলত)
১৯) ফিতনাতুত তাকফীর। (মুসলমানকে কাফির বলার ফিতনা)
২০) তাহযীরুস সাজিদ মিন ইত্তিখাযিল কুবূরি মাসাজিদ। (কবরকে মসজিদ বানানোর ব্যাপারে সতর্কতা)
২১) শারহুল আকীদাহ আত ত্বহাবীয়্যাহ। (আকীদা ত্বহাবিয়ার ব্যাখ্যা
২২) তাহকীক মুখতাসারুর উলূ’ লিল আলিয়্যিল গাফফার (ইমাম যাহাবীর লেখা মুখতাসার আল ঊলূ কিতাবের তাহকীক(
২৩) কিতাবুল ঈমান (ইমাম ইবনে তাইমিয়া রচিত কিতাবুল ঈমানের তাহকীক ও তাখরীজ(
২৪) জিলবাবুল মারআতিল মুসলিমাহ (মুসলিম নারীর পর্দা)
২৫) হিজাবুল মারআহ ও লিবাসুহা ফিস সালাহ (শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ:) রচিত নামাযে নারীর পর্দা ও পোষাক শীর্ষক কিতাবের তাহকীক ও তাতে টিকা সংযোজন(
২৬) আর রাদ্দুল মুফহিম (যারা নারীদের মুখ ওহস্তদয়কে ঢাকাকে ওয়াজিব বলে তাদের প্রতিবাদ)
২৭) তাহরীমু আলাতিত ত্বরব। (বাদ্য যন্ত্র হারাম)
২৮) আত তওয়াসসুল (ওসীলার প্রকার ও বিধিবিধান)
২৯) আহকামুল জানাইয (জানাযার বিধান)-বাংলায় অনুদিত।
৩০) যিলালুল জান্নাহ (জান্নাতের ছায়া)
৩১) আদাবুয যুফাফ (বাসর শয্যার আদব)
৩২) মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল উমরাহ (হজ্জ ও উমরার বিধিবিধান)
৩৩) কিয়ামু রামাযান (রামাযান মাসে তারাবীহর নামাযের ফযীলত, নিয়ম-কানুন, জামায়াতে আদায়ের বৈধতা এবং ইতেকাফ সংক্রান্ত আলোচনা)
৩৪) সালাতুত তারাবীহ (তারাবীহর সালাত)
৩৫) সহীহু সীরাতিন নববিয়্যাহ (বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামের জীবনী(
৩৬) সালাতুল ঈদাইন ফিল মুসাল্লা (ঈদগাহে ঈদের নামায পড়া সুন্নত(
৩৭) তাহকীক ফিকহিস সীরাহ (মুহাম্মদ গাযালী রচিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী বিষয়ক গ্রন্থের তাহকীক(
৩৮) কিতাবুল ইলম (ইমাম নাসাঈ রচিত কিতাবুল ইলম গ্রন্থের তাহকীক, তাখরীজ ও তাতে টিকা সংযোজন)
৩৯) কালিমাতুল ইখলাস (হাফেয ইবনে রজব হাম্বলী (রহ:) রচিত কালিমাতুল ইখলাস কিতাবের তাহকীক ও তাখরীজ)
৪০) মুখতাসারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ। (ইমাম তিরমিযী রচিত শামাইলে মুহাম্মাদিয়া বা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্বভাব-চরিত্র ও দেহাবয়ব গঠন বিষয়ক কিতাবের তাহকীক ও সংক্ষিপ্ত করণ)
৪১) মুসাজালাহ ইলমিয়্যাহ (দুজন মহামান্য ইমাম আল ইয ইবনু আব্দিস সালাম ও ইবনুস সালাহ এর মাঝে সংঘটিত মুনাযারা(
৪২) সালাতুর রাগাইব (রজব মাসের অন্যতম বিদআত সালাতুর রাগাইব প্রসঙ্গ(
৪৩) নাসবুল মাজানীক (গারানিকের ঘটনা প্রসঙ্গে বিভ্রান্তির জবাব)
৪৪) কিসসাতুল মাসীহিদ দাজ্জাল ও নুযুলি ঈসা আলাইহিস সালাম (দাজ্জাদ ও ঈসা আলাইহিস সালাম এর অবতরণ প্রসঙ্গ(
৪৫) ফিকহুল ওয়াকি (দাওয়াহর ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতির জ্ঞান থাকা প্রসঙ্গে একটি গবেষণা মূলক বই(
৪৬) সিফাতুল ফাতওয়া (ইমাম আহমাদ বিন হামদান রচিত ফতোয়া, মুফতী এবং ফতোয়া প্রার্থীর বিবরণ শীর্ষক কিতাবের তাহকীক)
৪৭) হুকুকুন নিসা (মুহাম্মদ রশীদ রেযা কর্তৃক রচিত ইসলামে নারী অধিকার শীর্ষক কিতাবের তাহকীক ও তাতে টিকা সংযোজন)
৪৮) হুকমু তারিকিস সালাহ (সালাত পরিত্যাগ কারীর বিধান)।
৪৯) সিফাতুস সালাহ (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সালাত -তাকবীর থেকে সালাম পর্যন্ত যেন আপনি তাঁকে দেখছেন)।
৫০) তারাজুতুশ শাইখ আল আলবানী (আল্লামা আলবানী (রহ:) যে সকল হাদীসের উপর সহীহ কিংবা যঈফ হুকুম প্রদানের ক্ষেত্রে মত পরিবর্তন করেছেন)
এছাড়াও আল্লামা আলবানী (রহ:) এর লিখিত হাদীসের খেদমতে এবং ইসলামে বিভিন্ন বিষয় প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত অনেক গ্রন্থ রয়েছে। লেখার কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় সেগুলো এখানে উল্লেখ করা হল না। এই লিংক থেকে শাইখের লিখিত অনেকগুলো কিতাবাদী পাওয়া যাবে।
আন্তর্জাতিক বাদশাহ ফায়সাল পুরষ্কার:
ইসলামী জ্ঞান-গবেষণা ও ইসলামী শিক্ষার প্রচারে অবদানের জন্য তাকে ১৪১৯ হিজরী মোতাবেক ১৯৯৯ ইং সনে আন্তর্জাতিক বাদশাহ ফায়সাল পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। তার পুরষ্কারের শিরোনাম ছিল: “প্রায় একশ’র অধিক পুস্তক রচনার মধ্য দিয়ে হাদীসের তাহকীক, তাখরীজ ও গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে হাদীসের সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য সিরিয় নাগরিক সম্মানিত শাইখ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানীকে এ পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করা হল।”
তাঁর ব্যাপারে আলেমগণের ভূয়সী প্রশংসা:
১) শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ:) বলেন:
“বর্তমান বিশ্বে আসমানের নিচে আল্লামা মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানীর মত এত বড় হাদীসের আলেম আমি দেখি নি।”
শাইখ বিন বায (রহ:) এর নিকট এই হাদীসটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তায়ালা প্রতি একশ বছরের মাথায় এই উম্মতের জন্য এমন একজনকে পাঠাবেন যিনি দ্বীন-ইসলামকে সংস্কার করবেন।” তিনি বলেন: আমার ধারণা, শাইখ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী হলেন এ যুগের মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক। আল্লাহ সব চেয়ে ভাল জানেন।
২) আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন (রহ.) বলেন:
“শাইখের সাথে বৈঠকাদীতে বসার পর (যদিও তা কম) যা বুঝতে পেরেছি তা হল: তিনি সন্নাহর প্রতি আমল এবং আমল-আকীদা উভয় ক্ষেত্রেই বিদয়াত উৎখাতে খুবই আগ্রহী। আর তার লিখিত বই-পুস্তক পড়ে তার ব্যাপারে জানতে পারলাম যে, তিনি হাদীসের সনদ ও মতন উভয় ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অধিকারী। এ সকল বই-পুস্তক দ্বারা আল্লাহ তায়ালা অনেক মানুষকে উপকৃত করেছেন-যেভাবে জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে তারা লাভবান হয়েছে তদ্রূপ নীতি নির্ধারণ এবং ইলমে হাদীসের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রেও তারা লাভবান হয়েছেন। এটি মুসলমানদের জন্য বড় একটি বড় প্রাপ্তি। আল হামদুলিল্লাহ। আর ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রে তার জ্ঞানগর্ভ গবেষণা সত্যি চমৎকৃত হওয়ার মত।”
৩) খ্যাতনামা মুফাসসির আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ আল আমীন আশ শানকীতী:
শাইখ আব্দুল আজীজ আল হাদ্দাহ বলেন: আল্লামা শানকীতী শাইখ আলবানীকে বিষ্ময়করভাবে সম্মান করতেন। তিনি মদীনার মসজিদে হারামে দারস প্রদান করার সময় যদি শাইখ আলবানীকে হেঁটে যেতে দেখতে তিনি তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সালাম প্রদান করতেন।
৪) শাইখ মুকবিল আল ওয়াদাঈ:
“আমি যে আকীদা পোষণ করি এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে দ্বীন হিসেবে মনে করি তা হল, শাইখ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী হলেন সে সকল মুজাদ্দিদগণের অন্তর্ভুক্ত যাদের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীসটি প্রযোজ্য: “আল্লাহ তায়ালা প্রতি একশ বছরের মাথায় এই উম্মতের জন্য এমন একজনকে পাঠাবেন যিনি দ্বীন-ইসলামকে সংস্কার করবেন।“
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ. এর অন্তিম ওসিয়ত:
প্রথমত: আমি আমার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধব ও যারা আমাকে ভালবাসে তাদের নিকট এই ওসিয়ত করছি, যখন তাদের কাছে আমার মৃত্যু সংবাদ পৌছবে তারা যেন আমার জন্য আল্লাহর নিকট রহমত ও মাগফিরাত কামনা করে দুয়া করে এবং আমার মৃত্যুতে কেউ যেন নিয়াহা বা উচ্চ আওয়াজে ক্রন্দন না করে।
দ্বিতীয়ত: যেন অনতি বিলম্বে আমাকে দাফন করা হয় এবং প্রয়োজনীয় কাফন-দাফনের প্রস্তুতির জন্য যাদেরকে না হলেই নয় তাদেরকে ছাড়া নিকটাত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধবকে মৃত্যুর সংবাদ দিতে গিয়ে যেন দাফন কর্ম বিলম্ব না করে। আমাকে গোসল দেয়ার দায়িত্ব পালন করবে, ইজ্জত খাযার আবু আব্দুল্লাহ এবং তিনি যাকে এ কাজে সহযোগিতার জন্য পছন্দ করবেন। তিনি আমার প্রতিবেশী এবং একান্ত অন্তরঙ্গ বন্ধু।
তৃতীয়: তিনি মৃত্যুর আগেই তার বাড়ির অদূরেই কবরের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেন। যেন গাড়িতে উঠিয়ে তার লাশ বহন করে দূরে নিতে না হয় কিংবা কবর দিতে আসা লোকজনকে গাড়িতে চড়ে লাশের সাথে যেতে না হয়। সেই সাথে এমন পুরনো গোরস্থানে যেন তাকে কবর দেয়া হয় যেটার ব্যাপারে আশা করা যায় যে, সেটা আর খুঁড়া-খুঁড়ি করা হবে না।
আমি যদি দেশের বাইরে মারা যাই তবে আমার দাফন কর্ম সমাধান করার আগে যেন দেশে আমার সন্তান সন্তান-সন্ততি বা অন্য লোকজনকে খবর না দেয়া হয়। অন্যথায় তারা আবেগের বশবর্তী হয়ে হয়ত এমন কিছু করবে যার কারণে আমার দাফন কর্ম বিলম্ব হয়ে যাবে।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, আমি যেন তার সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করি যে, তিনি মৃত্যুর আগেই আমার পূর্বাপর সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন।
আর আমার লাইব্রেরীর ব্যাপারে ওসিওয়ত হল, লাইব্রেরীর প্রকাশিত, অপ্রকাশিত, পাণ্ডুলিপি, আমার লেখা বা অন্যের লেখা সকল বই-পুস্তক মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াকফ করছি। যেন কুরআন-সুন্নাহ ও সালফে-সালেহীনের মানহাজের দিকে দাওয়াতের পথে এগুলো স্মৃতি হিসেবে অবশিষ্ট থেকে যায়। কারণ, আমি এক কালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম। আল্লাহর নিকট আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকা অবস্থায় তিনি যেভাবে আমার মাধ্যমে ছাত্রদের উপকার করেছেন ঠিক সেই ভাবে আমার লাইব্রেরীতে যে সকল মানুষ জ্ঞানার্জনের জন্য আসবে তারাও যেন এগুলো থেকে উপকৃত হয়। আর আমি নিজেও যেন তাদের দুয়ার মাধ্যমে লাভবান হই।
رب أوزعني أن أشكر نعمتك التي أنعمت علي و على والدي و أن أعمل صالحاً ترضاه و أصلح لي في ذريتي إني تبت إليك و إني من المسلمين
“হে প্রভু, তুমি আমাকে এবং আমার পিতা-মাতাকে যে নেয়ামত দিয়েছ তার শুকরিয়া আদায়ের তাওফীক দান কর। আরও তাওফীক দান কর এমন নেক আমল করার যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও। আমার উপকারের জন্যে আমার সন্তান-সন্ততিকে পরিশুদ্ধ করে দাও। আমি তোমার নিকট তওবা করলাম। নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।”
২৭ জুমাদাল আওয়াল ১৪১০ হিজরী।
মৃত্যু:
আল্লামা আলবানী রহ. এর ওফাত হয়, শনিবার, ২২ জুমাদাল আখেরা, ১৪২০ হিজরী, মোতাবেক ২ অক্টোবর, ১৯৯৯ খৃষ্টাব্দ। ইশার সালাতের পরে তাকে দাফন দেয়া হয়। দুটি কারণে শাইখের দাফন তাড়াতাড়ি দেয়া হয়:
প্রথমত: তার ওসীয়ত বাস্তবায়ন।
দ্বিতীয়ত: শাইখের মৃত্যুর সময়কালটা ছিল খুব গরম। তাই যেন দাফন দিতে আসা লোকজনের কষ্ট না হয়ে যায় ।
যদিও শাইখের মৃত্যুর সংবাদ নিকটাত্মীয় ও কাফন-দাফনে সহযোগিতা করার জন্য বিশেষ কিছু লোককে ছাড়া অন্য কাউকে দেয়া হয় নি এবং মৃত্যু বরণের পর দাফন করতে তেমন বিলম্বও করা হয় নি তথাপি তারা জানাজায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। কারণ, যে ব্যক্তিই তার মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছে সেই অন্য ভাইকে এই খবর পৌঁছিয়ে দিয়েছে।
আমরা দুয়া করি, ইলমে হাদীসের এই মহান খাদেমকে আল্লাহ তায়ালা যেন মুসলিম জাতির পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করেন। আমীন।
১) হাদীস বর্ণনাকারীদের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কিত অবস্থা পর্যালোচনা মূলক জ্ঞানকে ইলমুল জারহে ওয়াত তাদীল বলা হয়।
২) যে ইলমের মাধ্যমে গ্রহণীয় বা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার দিক দিয়ে বর্ণনাকারী ও বর্ণিত হাদীস বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয় তাকে ইলমে মুস্তালাহুল হাদীস বলা হয়।
উৎস: এই জীবনীর অধিকাংশ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে শাইখ আলবানী (রহ:) এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে।