যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

জ্ঞানচর্চায় আরবি ভাষার গুরুত্ব

ইসলাম ধর্মে পৌরোহিত্যের কোনো স্থান নেই। ইসলামে ধর্মীয় জ্ঞানের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। নারী-পুরুষ যেকোনো ব্যক্তি চাইলে ইসলামের সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে ইসলাম মানুষকে পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ এবং ইসলামী জ্ঞানের মূল উৎস থেকে জ্ঞান আহরণে উৎসাহিত করে।

এ জন্য জ্ঞানান্বেষীর আরবি ভাষা সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন। সুতরাং যে ব্যক্তি আরবি ভাষা জানে এবং যার আরবি ভাষা সম্পর্কে জানার সুযোগ আছে সে আরবিতেই ধর্মীয় জ্ঞান চর্চা করবে।
আরবি ভাষার গুরুত্ব

পণ্ডিত আলেমরা বলেন, ধর্মীয় জ্ঞানচর্চায় আরবি ভাষার গুরুত্বের দুটি দিক রয়েছে—

১. আরবি ভাষা আল্লাহর মনোনীত : আরবি ভাষা দ্বিনের শিআর বা প্রতীক। মহান আল্লাহ আরবি ভাষাকে দ্বিন ইসলামের বাহক হিসেবে মনোনীত করেছেন।

তাই দ্বিনচর্চায় আরবি ভাষার পরিবর্তে অন্য কোনো ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়া পূর্বসূরি আলেমদের রীতিপরিপন্থী। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান সাধ্যানুযায়ী আরবি ভাষা শিখবে, যেন সে আরবি ভাষায় কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ ও কোরআন তিলাওয়াত করতে পারে, যেসব জিকির ও অজিফা আরবি ভাষায় পাঠ করা ফরজ তা যেন আরবিতে পড়তে পারে। একইভাবে তাসবিহ, তাশাহহুদ ইত্যাদি পড়তে পারে। এরপর যদি কোনো মানুষ শেষ নবী (সা.) ও কোরআনের ভাষায় আরো দক্ষতা অর্জন করে, তা উত্তম।’
(আর রিসালাহ, পৃষ্ঠা-৪৮-৪৯)


২. অর্থ ও মর্মের গভীরতা : আরবি ভাষার শব্দ-বাক্যের অর্থ-মর্ম অত্যন্ত গভীর। অন্য যেকোনো ভাষার তুলনায় আরবি ভাষার শব্দ-বাক্য বিশেষ তাৎপর্যের অধিকারী। এ জন্য নবীজি (সা.) কোরআন-হাদিসচর্চায় এর শব্দ-বাক্যে পরিবর্তন আনতে নিরুৎসাহ করেছেন। বারা ইবনে আজিব (রা.) অজুর দোয়ায় ‘নাবিয়্যুকা’ শব্দের স্থানে ‘রাসুলিকা’ শব্দ পাঠ করেন। তখন নবীজি (সা.) বলেন, ‘বরং তুমি নাবিয়্যুকাই বোলো।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৭)


ভাষান্তরে ভুলের আশঙ্কা

যেহেতু আরবি ভাষা গভীর অর্থ-মর্মের ধারক, বিশেষ করে কোরআন ও হাদিসে ‘সংক্ষিপ্ত বাক্যে অধিক মর্ম ব্যক্ত করা হয়েছে’, তাই অনুবাদ বা ভাষান্তরের ওপর নির্ভর করলে ব্যক্তির ভুল হওয়ার এবং ভুল করার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ ছাড়া কোরআন-হাদিসের বহু বিষয় এমন, যা একাধিক অর্থ ও ব্যাখ্যার সম্ভাবনা রাখে। এখন যদি কেউ মূল আরবির ওপর নির্ভর না করে ভাষান্তরের ওপর নির্ভর করে, তাহলে অর্থের সীমাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।

আরবির প্রতি মুসলমানের ভালোবাসা

আরবি ভাষার প্রতি মুসলমানের ভালোবাসা অকৃত্রিম। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা নিজের দ্বিনের জন্য আরবি ভাষাকে মনোনীত করেছেন। এ জন্য তিনি আরবি ভাষায় কোরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ভাষাকে আরবি করেছেন। যে ব্যক্তির আরবি ভাষা শেখার সুযোগ ও যোগ্যতা আছে সে যেন তা শেখে। কেননা আরবি এমন ভাষা, যার প্রতি অন্তরের ভালোবাসা ও আগ্রহ সবচেয়ে প্রবল হওয়া উচিত। তবে এর অর্থ এই নয় যে অনারব ভাষা চর্চা করা এবং বলা হারাম। এ জন্যই ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেছেন, কোনো আরবি জানা লোকের জন্য অনারব ভাষায় নাম রাখা মাকরুহ। তিনি আরবি ভাষায় অনারব শব্দ যুক্ত করাকে অপছন্দনীয় বলেছেন। ফিকহের ইমামদের এই অবস্থান সাহাবি ও তাবেঈদের থেকেই গৃহীত।’

(ইকতিজাউস সিরাতিল মুস্তাকিম : ১/৫২১)