খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর একটি। এ কারণেই ইসলাম ধর্মে মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করাকে উত্তম ইসলাম বলা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বলেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে এবং চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেবে। (বুখারি, হাদিস : ১২)
যারা অনাহারির খাবারের ব্যবস্থা করে, নিজের অভাব থাকা সত্ত্বেও একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সাধ্যমতো অন্যের মুখে আহার তুলে দেয়, তাদের জন্য ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ রয়েছে। মহান আল্লাহ জান্নাতে তাদের রাজকীয় মেহমানদারি করবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা পান করবে এমন পানপাত্র থেকে, যার মিশ্রণ হবে কাফুর। এমন এক ঝরনা, যা থেকে আল্লাহর বান্দারা পান করবে, তারা এটিকে যথা ইচ্ছা প্রবাহিত করাবে। তারা মানত পূর্ণ করে এবং সে দিনকে ভয় করে, যার অকল্যাণ হবে সুবিস্তৃত। তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, এতিম ও বন্দিকে খাদ্য দান করে। তারা বলে, ‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কোনো শোকরও না। আমরা আমাদের রবের পক্ষ থেকে এক ভয়ংকর ভীতিপ্রদ দিবসের ভয় করি।
সুতরাং সেই দিবসের অকল্যাণ থেকে আল্লাহ তাদের রক্ষা করলেন এবং তাদের প্রদান করলেন উজ্জ্বলতা ও উৎফুল্লতা।’ (সুরা : দাহর, আয়াত : ৫-১১)
উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষকে খাওয়ানোর নীতিমালা বাতলে দিয়েছেন। সেগুলো হলো—
এক. মানুষকে খাওয়াতে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
দুই. এর বিনিময়ে কখনো তাদের কাছে কোনো প্রতিদানের আশা করা যাবে না।
তিন. এবং এই আশাও করা যাবে না যে তারা আমার গুণগান গাইবে।
চার. মানুষকে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ তাকওয়া থাকতে হবে। আল্লাহভীতি থাকতে হবে। তবেই আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করবেন।
কিন্তু আমরা যদি মানুষকে সামান্য কিছু খাইয়ে খোঁটা দেওয়া আরম্ভ করি, তাদের থেকে বিভিন্ন সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করি বা এটি ব্যবহার করে বিদেশি অর্থ বা কোনো সুযোগ-সুবিধার আশা করি, তাহলে বুঝতে হবে, এই ইবাদতকে শয়তান বানচাল করে দিতে সক্ষম হয়েছে। তাই সব সময় মানুষকে খাওয়ানোর পাশাপাশি এই বিষয়গুলোতে সতর্ক থাকতে হবে।
যারা অভাব ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দিনেও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করে, পবিত্র কোরআনে তাদের সৌভাগ্যবান বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সৌভাগ্যবানদের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ‘অথবা খাদ্য দান করা দুর্ভিক্ষের দিনে। এতিম আত্মীয়-স্বজনকে। অথবা ধূলি-মলিন মিসকিনকে। অতঃপর সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যারা ঈমান এনেছে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্যধারণের, আর পরস্পরকে উপদেশ দেয় দয়া-অনুগ্রহের। তারাই সৌভাগ্যবান।’ (সুরা : বালাদ, আয়াত : ১৪-১৮)
তাই আমাদের উচিত সাধ্যমতো মানুষের আহারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা। উপার্জনের একটি নির্দিষ্ট অংশ এই কাজের জন্য বরাদ্দ রাখার চেষ্টা করা, যারা নিয়মিত আল্লাহর রাস্তায় দান করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁর মাখলুকদের সেবা করে, তারা তাদের জীবনে বরকত অনুভব করে।