ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে ৭৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ছোট্ট শহর নেগাস। দেশটির উত্তর সীমান্তে এর অবস্থান। ছোট্ট এই শহর মুসলিম ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মক্কার নিপীড়িত মুসলিমরা সর্বপ্রথম এই শহরেই আশ্রয় নিয়েছিল বলে মনে করা হয়। মদিনা নগরীতে ইসলামের প্রসার ঘটার আগেই নেগাসে পৌঁছেছিল ইসলামের বাণী। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে যখন মক্কায় কুরাইশ সম্প্রদায়ের অত্যাচারের মাত্রা সহ্যের সব সীমা অতিক্রম করে, তখন মহানবী (সা.) সাহাবিদের নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে হাবশায় হিজরতের নির্দেশ দেন। মহানবী (সা.)-এর নির্দেশ ও নির্দেশনায় সাহাবিরা আবিসিনিয়া বা হাবশায় হিজরত করেন। সাহাবিরা হাবশায় দুইবার হিজরত করেন। প্রথমবার সেখানে ১২ জন এবং দ্বিতীয়বার ৮৮ জন হিজরত করেন। হাবশার তৎকালীন শাসক আসহামা বিন আবজার আন-নাজ্জাসি মুসলমানদের আশ্রয় দেন এবং তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। তিনি ৬১০ থেকে ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত হাবশা শাসন করেন।
ঐতিহাসিকদের দাবি, প্রাচীন আবিসিনিয়া বা হাবশার আধুনিক পরিচয় হলো ইথিওপিয়া। তবে কেউ কেউ আধুনিক ইরিত্রিয়ার অপর নাম হাবশা বলে দাবি করেছেন। সাহাবিদের বেশির ভাগ মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ফিরে গেলেও তাদের কেউ কেউ আবার হাবশায় স্থায়ী হন। দাবি করা হয়, নেগাস শহরে সাহাবিদের সমাধি রয়েছে। এই শহরেই অবস্থিত আফ্রিকার প্রাচীনতম মসজিদ নাজ্জাসি মসজিদ। আফ্রিকায় হিজরতকারী সাহাবিরা এই মসজিদ নির্মাণ করেন এবং মহানুভব বাদশাহর নামে এর নাম দেন। এই মসজিদের পাশেই রয়েছে সাহাবা সড়ক । ইথিওপিয়ার মুসলিমদের কাছে এই মসজিদ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
নাজ্জাসি মসজিদ আফ্রিকার সবচেয়ে পর্যটকপ্রিয় স্থানগুলোর একটি। প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার মানুষ নাজ্জাসি মসজিদ পরিদর্শন করে। তবে মসজিদের বর্তমান কাঠামো নির্মিত হয়েছে আধুনিক যুগেই। ২০১৮ সালে তুর্কি দাতব্য সংস্থার সহযোগিতায় এখানে আধুনিক মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মিত হয়। মসজিদ ছাড়াও এখানে একটি দর্শনার্থীকক্ষ, পাঠাগার ও টয়লেট নির্মাণ করা হয় তবে ২০২১ সালের সংঘাতের সময় নাজ্জাসি মসজিদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মিনার ধ্বংস হয়ে যায় এবং গম্বুজ ধসে পড়ে। চলতি বছরের আগস্টে ইথিওপিয়া সফরের সময় মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম ঈসা আরো বৃহৎ পরিসরে নাজ্জাসি মসজিদ পুনর্নির্মাণের ঘোষণা দেন। এটা হবে আধুনিক যুগে মসজিদের চতুর্থ সংস্কার কার্যক্রম।
প্রাচীন মসজিদের আয়তন ২০০ বর্গমিটারের চেয়ে বড় ছিল না। মসজিদ কমপ্লেক্সের ডান দিকে ছিল একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বাঁ দিকে ছিল দাতব্য কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অফিস ও গুদামঘর। মসজিদের অদূরে অবস্থিত নগরপ্রাচীর ও প্রবেশদ্বার এই গ্রামের ঐতিহাসিক গুরুত্ব প্রমাণ করে। মসজিদ থেকে সামান্য দূরে নাজ্জাসি আবাসস্থল মেকেলি শহর অবস্থিত। সেখানে নাজ্জাসির কবর রয়েছে। ইথিওপিয়ার অধিবাসীরা এখনো তাঁকে পুণ্যবান বাদশাহ নাজ্জাসি নামে স্মরণ করে। তাঁর কবরের পাশে অবস্থিত ১৫টি কবরকে সাহাবিদের কবর বলে দাবি করা হয়। আবার কারো মতে, মসজিদ প্রাঙ্গণে থাকা কবরগুলোই সাহাবিদের কবর।
সূত্র : ওমান অবজারভার