
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তাঁর মাধ্যমেই সমাপ্তি ঘটেছে আসমানী ওহীর আগমনধারা এবং পূর্ণতা পেয়েছে ওহীর তালীম ও শিক্ষা। তিনি ওহীর শিক্ষাকে জীবনে বাস্তবায়ন করে জগদ্বাসীর জন্য রেখে গেছেন নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। তিনিই আমাদের উসওয়া ও আদর্শ। ইরশাদ হয়েছেÑ “নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ, এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।” (সূরা আহযাব-২১) তাঁর কথা ও মৌনতা, হাসি-কান্না, উঠা-বসা, চলাফেরা সবকিছুতেই রয়েছে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। শিক্ষক হিসেবে তিনি আদর্শ শিক্ষক। স্বামী হিসেবে আদর্শ স্বামী। পিতা হিসেবে আদর্শ পিতা। বন্ধু হিসেবে আদর্শ বন্ধু। সেনাপতি হিসেবে আদর্শ সেনাপতি। শাসক হিসেবে আদর্শ শাসক।
দয়া-মমতা, হায়া-লজ্জাশীলতা, ক্ষমা ও সহনশীলতায় তিনি উৎকৃষ্ট উপমা। অনুগ্রহ-বদান্যতা, আখলাক-চরিত্র, সুস্থ রুচি, উন্নত চিন্তায় তিনি প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইখলাস-একনিষ্ঠতা, ইবাদত-বন্দেগী, তাকওয়া-আল্লাহভীতি ও দুনিয়াবিমুখতায় তিনি সর্বোত্তম উসওয়া। মানবতার ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণ সাধনে তাঁর উসওয়া ও আদর্শের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের প্রতি দাওয়াত দিয়েছেন। আর এসব বিষয়ের প্রতি তাঁর ঈমানই ছিল সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। তিনি ইবাদত ও তাকওয়ার প্রতি আহ্বান করেছেন আর তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড় আবেদ ও মুত্তাকী। তিনি বান্দার হকের দাওয়াত দিয়েছেন, আর এই হক আদায়ের ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন সর্বোত্তম উপমা। তিনি উত্তম চরিত্রের দাওয়াত দিয়েছেন আর তিনিই ছিলেন সুন্দর আখলাকের অনুপম দৃষ্টান্ত।
তিনি সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সাম্য ও সমতা, ন্যায় ও ইনসাফ, সেবা ও খেদমত, সততা ও আমানতদারি, আত্মত্যাগ ও স্বার্থত্যাগ, নসীহত ও হিতকামনা, সুস্থ নীতি ও উন্নত নৈতিকতার প্রতি আহ্বান করেছেন আর তিনিই ছিলেন সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় উজ্জ্বল নক্ষত্র। এভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত শিক্ষা ও বিধানের তিনিই ছিলেন বাস্তব নমুনা।
নবীজীর ছিল তিন পুত্র; কাসেম (রা.), আবদুল্লাহ (রা.) ও ইবরাহীম (রা.) এবং চার কন্যা; যয়নব (রা.), রুকাইয়া (রা.), উম্মে কুলসুম (রা.) ও ফাতেমা (রা.)। মহানবী (সা.) আপন ছেলে-মেয়েদের খুব মহব্বত করতেন, আদর-স্নেহ করতেন। মায়াভরা আদর হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসায় তাদের লালন-পালন করেছেন। ইবরাহীমের জন্ম হলে দুধ পান করানোর জন্য তাকে আবু সাইফ নামক এক সাহাবীর স্ত্রীর হাতে সোপর্দ করা হয়। আবু সাইফের বাড়ি মদীনার ‘আওয়ালী’তে। মদীনার আশপাশের গ্রামগুলোকে ‘আওয়ালী’ বলা হয়। মদীনা হতে আওয়ালীর নিকটমত গ্রামের দূরত্ব ছিল দুই মাইল এবং দূরতম গ্রামের দূরত্ব আট মাইল।
নবীজী (সা.) সন্তানদের প্রতি কত গভীর স্নেহ ও ভালোবাসা লালন করতেনÑ এর একটা বিবরণ দিয়েছেন সায়্যিদুনা আনাস (রা.)। তিনি বলেন, ইবরাহীম মদীনার আওয়ালীতে দুধ পান করতেন। নবী কারীম (সা.) সেখানে যেতেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে যেতাম। তিনি তাদের ঘরে প্রবেশ করতেন। ঘর থাকত ধূয়রাচ্ছন্ন। কারণ, ধাত্রীর স্বামী ছিল কর্মকার।
ঘরে প্রবেশ করে নবীজী ইবরাহীমকে কোলে নিতেন, আদর করে চুমু খেতেন। এরপর চলে আসতেন। (সহিহ মুসলিম-২৩১৬) আরেক বর্ণনায় এসেছে, তিনি তাকে কোলে নিয়েছেন, আদর করে চুমু খেয়েছেন এবং নাকে-মুখে লাগিয়েছেন। (সহিহ বুখারী-১৩০৩)