বিবাহিত নারীরা তাদের নামের সঙ্গে স্বামীর নাম যুক্ত করতে পারবে কি? কিংবা নিজের নামের সঙ্গে স্বামীর নাম যুক্ত করে সে পরিচয়ে পরিচিত হতে পারবে কি? এ সম্পর্কে ইসলামের বিধানই বা কী?
অনেক সময় দেখা যায়, নারীরা নিজেদের নামের শেষে স্বামীর নামের অংশ যোগ করে থাকেন। কিংবা অন্যের কাছে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে নিজ নামের শেষে স্বামীর নাম যুক্ত করে পরিচিত হোন। আবার অনেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কাগজপত্রেও নিজের নামের সঙ্গে স্বামীর নাম যুক্ত করে দেন। এর সঠিক সমাধান কী?
না নারীরা নিজ নিজ নামের শেষে স্বামীর নাম যুক্ত করে পরিচয় দিতে পারবে না। ইসলামিক স্কলারদের মতে ইসলামে জন্মদাতা বাবা ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে নিজের পরিচয় সম্বন্ধ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এটা শুধু অযৌক্তিকই নয় বরং ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নিষিদ্ধ প্রথা।ইসলামের সঠি জ্ঞানের অভাবে অনেক নারী এমনটি করে থাকেন। ইসলামি শরিয়তে যদি এর অনুমোদন থাকতো কিংবা স্বামীর নাম যুক্ত করার বিষয়টি মর্যাদার হতো তবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ নিজেদের নামের সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত করতেন। প্রিয় নবিরযুগসহ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈদের যুগেও এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি কোনো কালেই প্রসিদ্ধ মুসলিমের মধ্যে এ প্রচলন ছিল না।এটি মূলত বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতিফল। অবিশ্বাসীদের সাংস্কৃতির অন্ধ অনুসরণ মাত্র। মুসলমানদের জন্য এটি খুবই দুঃজনক।
ইসলামের প্রসিদ্ধ রীতি হলো- নিজের পরিচয় দিতে হলে বাবার পরিচয়ে পরিচয় দেওয়া। ইসলামের উত্তম শিষ্টাচারও এটি যে, নিজের নামের সঙ্গে বাবার নাম যুক্ত করা। যেমন- ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ অথবা ফাতিমা মুহাম্মদ। উভয়টিই সঠিক। এটি নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।মহান আল্লাহ মানুষকে তাদের বাবার পরিচয়ে ডাকার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এ সম্পর্কে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনাও এমন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِندَ اللَّهِ তোমরা তাদেরকে তাদের বাবার পরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত। (সুরা আহজাব : আয়াত ৫)
এ আয়াতে মানুষকে তার বাবার পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা এর বিপরীত কাজটি করেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রিয় নবি ঘোষণা করেন-
১. হজরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ ادَّعَى قَوْمًا لَيْسَ لَهُ فِيْهِمْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ যে ব্যক্তি নিজেকে এমন বংশের সঙ্গে বংশ সম্পর্কিত দাবি করলো; যে বংশের সঙ্গে তার কোনো বংশের সম্পর্ক নেই সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। (বুখারি, মুসলিম)
২. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَنِ انْتَسَبَ إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ.فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ যে ব্যক্তি নিজের বাবা ছাড়া অন্যের সঙ্গে জন্মসূত্র (পরিচয়) স্থাপন করে তার উপর আল্লাহ ফেরেশতাকুল ও সব মানুষের অভিশাপ।(ইবনে মাজাহ)
কোরআন-সুন্নাহর এসব দিকনির্দেশনা থেকে প্রমাণিত কোনো নারী যদি নিজের পরিচয় প্রকাশে নিজ নামের সঙ্গে কারো নাম যুক্ত করতে চায়; তবে বাবার নামই যুক্ত করতে হবে। এর বাইরে স্বামী অন্য কারো নামযুক্ত করা ইসলামে হারাম তথা নিষিদ্ধ।
সুতরাং মুমিন মুসলমান নারীদের এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। নিজেদের নামের সঙ্গে কারো নাম যদি যুক্ত করে পরিচয় দিতে হয় তবে বাবার নাম যুক্ত করবে। এটিই ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে ইসলামের বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। নিজ নিজ নামের সঙ্গে বা শেষে বাবার নামের পরিবর্তে স্বামীর নাম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। কোরআন-হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।