যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

ইসলামে ভালো আচরণের গুরুত্ব

সুন্দর ও কল্যাণকামী জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। ইসলামের প্রতিটি কাজই সুন্দর। এর প্রতিফল আরও বেশি সুন্দর। দুনিয়ার জমিনে সত্য ও কল্যাণের জীবন ব্যবস্থা হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত ইসলাম। শুধু জীবন ব্যবস্থা হিসেবেই ইসলাম সুন্দর নয়; ইসলামের অনুসারীদের আচার-ব্যবহারও সুন্দর। এসব সুন্দর ও উত্তম আচরণ আল্লাহর কাছে ইবাদত হিসবে গণ্য। কেননা আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেন-

وَ اِنَّکَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیۡمٍ আর নিশ্চয়ই আপনি সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। (সুরা আল-কলাম : আয়াত ৪) لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا (হে মানুষ) তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে (মুত্তাকি মুসলমান) এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে (মুমিন মুসলমান) তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (সর্বোত্তম চরিত্রের) মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)

কোরআনের এসব আয়াত সমাজের উঁচু-নিচু, সাদা-কালো সবার সঙ্গে উত্তম ও শোভনীয় আচরণ করার নির্দেশ দেয় ইসলাম। শুধু নির্দেশই নয় বরং মানুষের সুন্দর আচরণ আল্লাহর প্রিয়তম ইবাদতসমূহের মধ্যে অন্যতম। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট-

হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَا مِنْ شَيْءٍ يُوضَعُ فِي الْمِيزَانِ أَثْقَلُ مِنْ حُسْنِ الْخُلُقِ وَإِنَّ صَاحِبَ حُسْنِ الْخُلُقِ لَيَبْلُغُ بِهِ دَرَجَةَ صَاحِبِ الصَّوْمِ وَالصَّلَاةِ কেয়ামতে দিন কর্ম বিচারের পাল্লায় বান্দার সবচেয়ে ভারী ও মূল্যবান কর্ম হবে (মানুষের) সুন্দর আচরণ। (শুধু তা-ই নয়) আর নিশ্চয়ই সুন্দর আচরণের অধিকারী মানুষ শুধু তার সুন্দর ব্যবহারের বিনিময়েই (নফল) নামাজ ও (নফল) রোজা পালন করার সাওয়াব অর্জন করবে। (তিরমিজি, মাজমাউয যাওয়াইদ, জামে)

আর মুমিনের আচরণ এমনই (আকর্ষণ) যে সহজেই তিনি মানুষকে আপন করে নেন এবং অন্যরাও তাকে আপন করে ভালোবেসে ফেলে। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

الْمُؤْمِنُ يَأْلَفُ وَيُؤْلَفُ ، وَلا خَيْرَ فِيمَنْ لا يَأْلَفُ وَلا يُؤْلَفُ মুমিন ওই ব্যক্তি যে নিজে অন্যদের ভালোবাসে এবং অন্যরাও তাকে ভালোবাসে। যে ব্যক্তি নিজে অন্যদের ভালোবাসে না এবং অন্যরাও তাকে ভালোবাসে না তাদের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। (জামে)

 

মুমিন মুসলমানের করণীয়

সুতরাং মুমিন মুসলমানের দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণের জন্য পরস্পরের সঙ্গে সুন্দর ও উত্তম আচরণের বিকল্প নেই। হাদিসের আলোকেও দেখা যায়, হুসনে খুলুক বা সুন্দর আচরণ-এর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। যা প্রতিটি মুসলমানের একান্ত করণীয়-

১. কথা ও আচরণের ক্ষেত্রে বিনম্রতা, প্রফুল্ল চিত্ত, হাস্যোজ্জ্বল মুখ, সত্য পরায়ণতা, কম কথা বলা ও বেশি শোনা।

২. কোনো কারণে রাগান্বিত হলে সে সময়ও গালি গালাজ, অভিশাপ ও সীমালঙ্ঘণ করা থেকে বিরত থাকা।

৩. ক্ষমা করার গুণ থাকা। বিশেষত কোনো কারণে প্রতিশোধ নেওয়া বা প্রতিউত্তর দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও ক্ষমা করে দেওয়া মানসিকতা পোষণ করা।

এই সুন্দর আচরণের প্রতিদান কী?

মানুষের মধ্যে যারা এইরূপ সুন্দর ও উত্তম আচরণের অধিকারী হবে, তারা কেয়ামতের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে নৈকট্যের মর্যাদায় সমাসীন হবেন। আর এর বিপরীত আচরণের অধিকারীরা সবচেয়ে দূরবর্তী অবস্থানে থাকবে। হাদিসে এসেছে-

হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلَاقًا ، وَإِنَّ أَبْغَضَكُمْ إِلَيَّ وَأَبْعَدَكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الثَّرْثَارُونَ ، وَالْمُتَشَدِّقُونَ ، وَالْمُتَفَيْهِقُونَ ;তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ও কেয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান লাভ করবে (তারা); যাদের আচরণ সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি অপ্রিয় এবং কেয়ামতের দিন আমার থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করবে তারা যারা বেশি কথা বলে যাদের কথায় বা আচরণে অহংকার প্রকাশিত হয় এবং যারা কথাবার্তায় অন্যের প্রতি অবজ্ঞা বা অভদ্রতা প্রকাশ করে।(তিরমিজি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সব মানুষের সঙ্গে সুন্দর ও উত্তম আচরণ করা। ভালোভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলা। অন্যকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে সম্মান করা। তবেই সে হবে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একান্ত প্রিয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরস্পরের সঙ্গে সুন্দর ও উত্তম আচরণ করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। প্রিয় নবির প্রিয় পাত্র হিসেবে নিজেদেরে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।