যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সুখী হওয়ার উপায়

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুনিয়ার পুরোটাই সম্পদ; তবে দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ হলো সতী স্ত্রী। আর যে বা যারা দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে চায় তাদের জন্য জরুরি যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাম্পত্য জীবনের কিছু দিক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা বা জেনে নেওয়া। নবি পরিবারের দাম্পত্য জীবনের মিল-মহব্বতের অনুসরণ করা। দাম্পত্য জীবনে কেমন ছিলেন তাঁরা?

সুখী দাম্পত্য জীবনের অনুপ্রেরণা নবিজী ছিলেন স্ত্রীদের প্রতি উত্তম আচরণকারী। তাদের একান্ত আপনজন। হজরত আয়েশা বলেন-আমি ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক পাত্র থেকে পানি নিয়ে গোসল করতাম। (বুখারি)

দাম্পত্য জীবনে বিনোদন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের ঘরে বন্দি করে রাখেননি। তদের নিয়ে সফর করেছেন। যুদ্ধে গিয়েছেন। ঘুরেছেন এবং খেলাধূলায়ও প্রতিযোগিতা করেছেন। কিন্তু নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটতে দেননি যার মাধ্যমে তিনি বৈধ পন্থায় তাঁর স্ত্রীর মধ্যে আনন্দ-বিনোদান কিংবা মজা জাগিয়ে তোলেননি। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে কোনো এক ভ্রমণে বের হলাম, সে সময় আমি অল্প বয়সী ও শারীরিক গঠনের দিক দিয়েও পাতলা ছিলাম; তখনো মোটা-তাজা (স্বাস্থ্য ভারি) হইনি। তিনি সাহাবিদের বললেন, তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও।
তারা যখন সামনের দিকে অগ্রসর হল, তখন তিনি আমাকে বললেন, এসো আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি; এরপর আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলাম এবং আমি তার উপর বিজয় লাভ করলাম। তিনি সে দিন আমাকে কিছুই বললেন না।
যখন আমি শারীরিক দিক দিয়ে মোটা ও ভারী হলাম এবং তাঁর সঙ্গে কোনো এক সফরে বের হলাম। তিনি (আগের মতো) সাহাবিদের বললেন, তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও। তারা যখন সামনে অগ্রসর হলো, তখন তিনি আমাকে বললেন, এসো আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি; এবারের প্রতিযোগিতায় তিনি আমার আগে চলে গিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, আজকের জয় সেই দিনের প্রতিশোধ। (মুসনাদে আহমাদ)

এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়; প্রিয় নবি ছিলেন দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীদের প্রতি চিত্ত বিনোদন দানকারী। তাদের প্রতি গুরুত্বারোপকারী। ভ্রমণে বের হয়ে তিনি সাহাবিদের আগে পাঠিয়ে দিয়ে খেলাধূলার প্রতিযোগিতা করে স্ত্রদের বিনোদন দিয়েছিলেন। একবার তিনি হেরে গিয়ে স্ত্রীদের আনন্দ দিয়েছিলেন। আবার তিনি বিজয়ী হয়ে নিজে আনন্দ পেয়েছিলেন।জীবন যুদ্ধে নারীর প্রতি অনুগ্রহ যুদ্ধ বিজয়ের আনন্দ ও দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতেও নবিজী দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীদের প্রতি ছিলেন কোমল। এসব ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা ও নমনীয়তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
কোনো অভিযানের নেতৃত্ব, দীর্ঘ সফর, যুদ্ধের মহা বিজয়ও নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভুলিয়ে দেয়নি যে, তাঁর সঙ্গে রয়েছেন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের দুর্বল স্ত্রী জাতি। তিনি উপলব্দি করেছেন, যাদের সুকোমল পরশ ও আন্তরিক ফিস ফি-সানির অধিকার এবং প্রয়োজনও তাদের রয়েছে। যা তাদের দীর্ঘ রাস্তার কষ্ট ও সফরের ক্লান্তি দূর করে দেবে।খায়বার যুদ্ধে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নববিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আচরণও মুসলিম উম্মাহর জন্য সুখী দাম্পত্য জীবনের অনুপ্রেরণা। ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি চমৎকারভাবে তা তুলে ধরেছেন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খায়বারের যুদ্ধ শেষে (বিজয়ী হয়ে) ফিরছিলেন তখন হজরত সাফিয়া বিনতে হুয়াই রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বিবাহ করেন। এবার যে উটের পিঠে হজরত সাফিয়া আরোহণ করবেন তার চারদিকে ঘুরিয়ে পর্দার কাপড় লাগানো হলো। এরপর তিনি উটের পার্শ্বে বসে তাঁর হাটুকে খাড়া করে দিলেন। এরপর সাফিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা উটের পিঠে উঠতে নিজের পা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাঁটুতে রেখে আরোহণ করেছিলেন।নিজ স্ত্রীর প্রতি এ সহযোগিতা ও দৃষ্টি আকৃষ্টকারী দৃশ্যটি ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন তখন সদ্য বিজয়ী কমান্ডার। ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসুল।

স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বোত্তম আদর্শ। দাম্পত্য জীবনের স্ত্রীর প্রকৃত আবেগ, অনুভূতি ও চাহিদা সম্পর্কে সম্যক অভিহিত হওয়াও নবিজীর অন্যতম সুন্নাত। স্ত্রীর প্রতি এমন অবস্থান গ্রহণ করা প্রত্যেক নারীই পছন্দ করবে; যার ফলে স্বামীর কাছে স্ত্রীরা অর্ধাঙ্গিনীতে পরিণত হবে। নবিজী স্ত্রীদের হৃদয় উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসতেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‍আমি ঋতুস্রাবের অবস্থায় কিছু পান করে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিতাম, আর তিনি আমার মুখ রাখার স্থানে মুখ রেখেই পান করতেন। আর আমি হাড়ের মাংস খেয়ে শেষ করলে তিনি তা গ্রহণ করে আমার মুখ লাগানোর স্থানেই মুখ লাগাতেন। (মুসলিম)নাম ধরে ডাকার আনন্দ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উত্তম আচরণ ও মনোরম দাম্পত্য জীবনের এটিও একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। স্ত্রীদের নাম ধরে ডাকায়ও ছিল তার ভালোবাসা। তিনি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ তাদের নামকে সংক্ষিপ্ত করে ডাকতেন। আবার তার মন যেন খুশিতে ভরে যায় এমন সুসংবাদও দিতেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে (তার নাম সংক্ষিপ্ত করে) বললেন- হে আয়েশ! জিবরিল (আলাইহিস সালাম) এই মাত্র তোমাকে সালাম দিয়ে গেল। (বুখারি, মুসলিম)

স্ত্রীর প্রতি বিনয়ের বহিঃপ্রকামে উম্মতকে নবিজীর আহ্বান স্ত্রীকে সাহায্য করা; তার সঙ্গে আন্তরিক ও বিনয়ী হওয়া; তাদের কাজে সহায়তা এবং তাদের বিনোদন, সুখ ও মজা দেওয়ায় কোনো স্বামীর সম্মান ও মর্যাদার কমতি হবে না। যেভাবে তাঁর সম্মান ও মর্যাদার কমতি হয়নি।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতদের যে সব অসিয়ত করেন; এর মধ্যে একটি হলো-
হে আমার উম্মত! তোমরা নারীদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। (বুখারি ও মুসলিম)

স্ত্রীদের প্রতি এ সবই ছিল নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুখী দাম্পত্য জীবন ও সুন্দর চিত্ত বিনোদন এবং স্ত্রীর ব্যাপারে অসীম গুরুত্বারোপের বহিঃপ্রকাশ। মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় সর্বোত্তম আদর্শ। যার বাস্তবায়নে প্রতিটি পরিবারে বিরাজ করবে জান্নাতি সুখ ও শান্তি।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দাম্পত্য জীবনে সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে স্ত্রীদের সঙ্গে সুন্দর ও উত্তম আচরণ করার তাওফিক দান করুন। স্ত্রীদের সঙ্গে চিত্ত বিনোদনের পাশাপাশি তাদের সাংসারিক কাজেও সহযোগিতা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।