যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

পাপকাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা

স্বাভাবিক মানুষ কোনো কিছুকে না দেখে ভয় করে না। কোলাহলে যদি কেউ বলে, বাঘ এসেছে বাঘ এসেছে। যতক্ষণ সে বাঘকে স্বচক্ষে দেখবে না, তার ভেতর ভয় কোনো কাজ করবে না। কারণ তার ধারণা, এই কোলাহলে বাঘ আসবে না। যদিও আসে মানুষ এদিক-ওদিক পালাতে থাকবে, ছোটাছুটি করবে।
কেউ পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, হঠাৎ রাস্তায় বাঘ এসে গেল, দেখামাত্রই সে ভয়ে পালাবে। অথবা কেউ কোনো খারাপ কাজে লিপ্ত আছে, পাশ দিয়ে উস্তাদ কিংবা কোনো গুণীজন যাচ্ছেন, দেখামাত্রই সে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে। ছোট শিশু ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে, বাবা-মাকে দেখা মাত্রই ভয়ে ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু সবার অগোচরে এমন জায়গা যেখানে কেউ কাউকে দেখার সুযোগ নেই, সে জায়গায় নির্ভয়ে সে পাপকর্মে লিপ্ত হতে পারবে। তার ভেতর কোনো ভয় কাজ করবে না। কারণ সে কাউকে দেখছে না কিংবা তাকে কেউ দেখছে না। ফলে সে পাপকর্মে লিপ্ত হলে কেউ জানবে না, শাস্তির সম্মুখীনও হবে না।
সিয়াম আমাদের শিক্ষা দেয়, সবার অগোচরে থেকেও, আল্লাহকে স্বচক্ষে না দেখেও কিভাবে ভয় করা যায়। ভয়ে পাপকাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা যায়। মু’মিনরা বিশ্বাস করে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। আল্লাহ সব কিছু দেখেন, শোনেন, জানেন। আল্লাহ মু’মিনের খালিক ও মালিক। তাই মু’মিনরা গহিন জঙ্গলে কিংবা সাগরের অতল গহিনে থেকেও যথাসাধ্য নিজেকে পাপকর্ম থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। একজন মুখলেস রোজাদারের সামনে হরেক পদের খাবার ও ফলফলাদি রাখলেও সে হাত বাড়াবে না ভয়ে, যদি রোজার কথা তার স্মরণ থাকে। সাগরের অতল গহিনেও যদি থাকে, এক বিন্দু পরিমাণ পানি পান করবে না। সবার অগোচরে খারাপ কাজ করার তীব্র আকাক্সক্ষাও যদি হয়, নিজেকে গুটিয়ে রাখবে।
চাইলেই ঘরের কোণে সবার অগোচরে কিছু খেয়ে ফেলতে পারে। গোসল করতে গিয়ে কিছু পান করে ফেলতে পারে। দরজা-জানালা বন্ধ করে কোনো পাপকর্মে লিপ্ত হতে পারে। কিন্তু একজন মুখলেস রোজাদার এমনটি কখনো করে না। কারণ কেউ তাকে না দেখলেও এমন এক সত্তা তো আছেন, যিনি সব কিছু দেখছেন!  এর নামই হলো তাকওয়া। এই তাকওয়া যার মধ্যে আছে তাকে মুত্তাকি বলা হয়। এই রমজান মাসই হলো মূলত তাকওয়া অর্জনের মাস। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সূরা বাকারাহ-১৮৩) 
অন্য সময়ে মানুষ ‘আল্লাহ দেখছেন’ এই বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও খারাপ কাজে লিপ্ত হয়; কিন্তু রমজান মাসে এমনটি হয় না। কারণ সিয়াম সবসময় মানুষের মনে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করে রাখে। তাই হাতের নাগালে খাবার পাওয়া সত্ত্বেও মুখে দেয় না। পানি পাওয়া সত্ত্বেও পান করে না। পাপকর্মের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পা বাড়ায় না।
যখন রমজানের দিনগুলো এভাবে কাটে, তখন তার একটি প্রশিক্ষণ হয়, কিভাবে আল্লাহকে না দেখেও ভয় করা যায়। যখন মনমেজাজ, চিন্তাচেতনায় এ বিষয়টি গেঁথে যাবে, গুনাহ করার আগে সে ১০ বার চিন্তা করবে।