যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

বাকশক্তি আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ নিয়ামত

বাকশক্তি আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ নিয়ামত। বাকশক্তির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা অন্যান্য সৃষ্টি থেকে মানবজাতিকে পার্থক্য করেছেন। দিয়েছেন শ্রেষ্ঠত্বের আসন। তাই আল্লাহ প্রদত্ত এই মহান নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা বান্দার ওপর আবশ্যক। ভালো ও কল্যাণকর কথা বলা এবং অশ্লীল ও অযাচিত কথাবার্তা থেকে বিরত থাকাই হলো জবানের শুকরিয়া। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন- অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী। যারা অসার ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে (সূরা মুমিনুন : ১-২-৩)। অর্থাৎ বাতিল শিরক, বাজে এবং নিরর্থক কথা থেকে বিরত থাকে।
যে কথা দুনিয়া বা আখিরাতের কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না, তা-ই অনর্থক কথা। অহেতুক কথা থেকে বিরত থাকার সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে হাদিসে।
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তাঁর মেহমানদের সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা নীরব থাকে (সুনানে তিরমিজি-২৫০০)।

অন্য হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন মেহমানকে সম্মান করে। যে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে লোক আল্লাহ তায়ালা ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে (সহিহ বুখারি-৬০১৮)।
প্রকৃত মুসলিমের পরিচয় : হজরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে সেই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের জান ও মালের জন্য নিরাপদ মনে করে সেই প্রকৃত মুমিন (সুনানে তিরমিজি-২৬২৭)।
অন্য হাদিসে হজরত আবু মুসা আল আশআরি রা: থেকে বর্ণিত আছে, নবী সা:-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন ব্যক্তি মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে (সুনানে তিরমিজি-২৬২৮)।
উপরোক্ত দুটি হাদিসে রাসূল সা: প্রকৃত মুসলিম কে, তার পরিচয় বর্ণনা করেছেন। হাদিসের শেষাংশে তিনি ইরশাদ করেছে, প্রকৃত মুসলমান হলো ওই ব্যক্তি যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদ থাকে। প্রথমে জিহ্বার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ হাতের দ্বারা কেবল উপস্থিত ব্যক্তিকেই কষ্ট দেয়া যায় আর জিহ্বার মাধ্যমে অনুপস্থিত ব্যক্তিকেও কষ্ট দেয়া সম্ভব। তাই জিহ্বার কথা আগে এনেছেন। তা ছাড়া মানুষ একে অপরকে শারীরিক আঘাতের চেয়ে জিহ্বার দ্বারা বেশি আঘাত দিয়ে থাকে। হাদিস থেকে এটিই বোঝা যায় যে, প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি যিনি কখনো কাউকে কষ্ট দেয় না। হোক তা হাত দ্বারা বা জিহ্বা দ্বারা।

বাকসংযমী হওয়া মুক্তির উপায় : হজরত উকবা ইবনে আমের থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সা:! মুক্তির উপায় কী? তিনি বললেন, তুমি তোমার রসনা সংযত রাখো, তোমার বাসস্থান যেন তোমার জন্য প্রশস্ত হয় (অর্থাৎ তুমি তোমার বাড়িতে অবস্থান করো) এবং তোমার গুনাহের জন্য ক্রন্দন করো (সুনানে তিরমিজি-২৪০৬)।
অন্য হাদিসে হজরত আবু সাইদ খুদরি থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: ইরশাদ করেন, মানুষ সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় তার সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহ্বাকে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। আমরা তো তোমার সাথে সম্পৃক্ত। তুমি যদি সোজা পথে দৃঢ় থাকো তাহলে আমরাও দৃঢ় থাকতে পারি। আর তুমি যদি বাঁকা পথে যাও তাহলে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য (সুনানে তিরমিজি-২৪০৭)।
জবানের হিফাজতে জান্নাতের জিম্মাদারি : হজরত সাহল ইবনে সাদ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দুই রানের মাঝের বস্তুর (লজ্জাস্থান) জামানত আমাকে দেবে, আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার (সহিহ বুখারি-৬৪৭৪)।
দুনিয়াতে যত ফিতনা ফাসাদ সংঘটিত হয় তার অধিকাংশই হয়ে থাকে জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের মাধ্যমে। তাই এ দুটোকে যে সংযত করবে আল্লাহর রাসূল সা: তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদারি নেবেন। চিন্তা করুন, কিয়ামত দিবসের সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে যখন মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে, ঠিক ওই মুহূর্তে আপনি নিশ্চিন্ত ও পেরেশানমুক্ত থাকবেন যদি এ দুটো অঙ্গের হিফাজত করতে পারেন। এ থেকেই বোঝা যায়, এ দুটো অঙ্গকে সংযত রাখা কতটা জরুরি, যার মাধ্যমে মুক্তির ফয়সালা হয়ে যাবে।