জিলহজ মাসের প্রথম ১০-১২ দিনের মধ্যে হজ, ঈদুল আজহা, কোরবানির মতো মহান ইবাদত অনুষ্ঠিত হয়। এসব ইবাদতে মানুষ মহান আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণায় উজ্জীবিত থাকে। সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের এ চেতনা কমতে থাকে। এ জন্য কোরবানি পরবর্তী সময়ে এ চেতনা ধরে রাখতে তাকবির, তালবিয়া, দোয়া ও জিকির-আজকের নিয়োজিত থাকা জরুরি।
হজ পালনকারীরা, কোরবানি দাতা ও সাধারণ মুসলিম তালবিয়া ও তাকবিরে তাশরিক পড়েন। ঈদুল আজহা ও কোরবানি শেষ হলেও এ ধারা অব্যাহত থাকা জরুরি। আর তাতে মানুষের মনে মহান রবের একত্ববাদের গুণগান চলতে থাকবে।
তাকবিরে তাশরিক পড়া মুমিন মুসলমান ১৩ জিলহজ (এবার তা ২ জুলাই আসর) পর্যন্ত তাওহিদের এ ঘোষণা দিতে থাকে-
اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَ اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر وَ للهِ الْحَمْد উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার; ওয়া লিল্লাহিল হামদ। অর্থ : আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য। জিকির-আজকার করা ৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একবার এ তাকবির পড়া মুমিন মুসলমানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক। তবে হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিলহজ মাসে বেশি বেশি জিকির-আজকার করার তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশকে তোমরা বেশি বেশি তাকবির (আল্লাহু আকবার), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) বলবে। (মুসনাদে আহমাদ
তালবিয়া পড়া হজে অংশগ্রহণকারীরা তালবিয়া পড়ে মহান রবের দরবারে উপস্থিত হওয়ার কথা জানাবেন। আপন মনে হজের তালবিয়া পড়বেন-
তালবিয়ার উচ্চারণ লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক,
লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক,
ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্ক,
লা শারিকা লাক।
তালবিয়ার অর্থ আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত!
আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোনো অংশীদার নেই।
নিঃসন্দেহে সব প্রশংসা ও সম্পদরাজি তথা নেয়ামত আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্যও আপনার।
আপনার কোনো অংশীদার নেই।
বেশি বেশি দোয়া পড়া رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ উচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখেরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার। অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে দোজখের যন্ত্রণাদায়ক আগুণ থেকে রক্ষা কর। (সুরা বাকারা: আয়াত ২০১)
জিলহজ মাস শুরু হওয়ার পর থেকে ইয়াওমে আরাফা (হজ), ঈদ ও কোরবানি শেষ হলেও চলতে থাকে তাকবিরে তাশরিক, জিকির-আজকার, তালবিয়া ও দোয়া। যা মুসলিম উম্মাহর ঈমান ও আমলে উজ্জীবিত হওয়ারই অংশ। যে যতবেশি এ আমলগুলো করবে, তার ঈমানি চেতনা ও মূল্যবোধে ততবেশি অগ্রসহর হবে।মুমিন মুসলমানের উচিত, জিলহজ মাসের বাকি দিনগুলোও তাকবির, জিকির-আজকার, তালবিয়া ও দোয়া পড়ার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে একত্ববাদের চেতনাকে আরও বেশি উজ্জীবিত রাখা। শিরক ও কুফরের সব চিহ্ন থেকে পরিচ্ছন্ন থাকা। ব্যক্তি পরিবার সমাজ তথা সর্বস্তরে শিরকমুক্ত চেতনায় তাকবির ও তালবিয়ার আমল বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেদের উজ্জীবিত রাখা ঈমানের একান্ত দাবি।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিলহজ মাসের এ দিনগুলোতে তাকবির-তালবিয়া পাঠের চেতনায় মজবুত ঈমানের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।