কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

ফরজ রোজা ভাঙা কবিরা গোনাহ

নামাজ রোজা জাকাতের মতো রমজানের রোজা রাখা ফরজ ইবাদত। সঙ্গত কারণ ছাড়া যে কোনো ফরজ রোজা ভাঙা বা নষ্ট করা কবিরা গোনাহ। ইচ্ছাকৃত ফরজ রোজা নষ্ট করলে কাজা ও কাফফারা উভয়টিই আদায় করতে হয়।

রোজা ভাঙা কবিরা গোনাহ
রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। রোজা রাখা আল্লাহর বিধান। আর আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘন কবিরা গোনাহ। বিনা কারণে রোজা না রাখলে ওই রোজার কাজা ও কাফফার উভয়টি আদায় করার বিধান দিয়েছে ইসলাম। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিনা কারণে রোজা ভঙ্গকারীর জন্য শাস্তি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-

– হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে (পা উপরে আর মাথা নিচের দিকে) ঝুলছে। তাদের গাল কাঁটা। আর তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এরা কারা? (প্রশ্নের উত্তরে) বলা হলো- এরা সেসব ব্যক্তি যারা বিনা কারণে রমজান মাসের রোজা নষ্ট করেছে।’ (ইবনে খুযায়মাহ)

রমজানের রোজা ভাঙার ক্ষতি
বিনা কারণে যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শুধু একটি রোজা না রাখে এবং পরে যদি ওই রোজার পরিবর্তে সারা বছরও রোজা রাখে, তবু সে ততটুকু সওয়াব পাবে না, যতটুকু মাহে রমজানে ওই একটি রোজার কারণে পেত। অতএব যারা রমজান পেলো কিন্তু রোজা রাখতে পারল না তার চেয়ে আর হতভাগা কেউ নেই। অন্য বর্ণনা এসেছে-
– হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, অমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমার কাছে দুই ব্যক্তি আসলো। তারা আমার দুই বাহুতে ধরে এক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে এল। তারপর আমাকে বলল, আপনি পাহাড়ের উপর উঠুন। আমি বললাম, আমি তো উঠতে পারব না। তারা বলল, আমরা আপনাকে সহজ করে দেব। আমি উপরে উঠলাম। যখন পাহাড়ের সমতলে পৌছালাম, হঠাৎ ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পেলাম। অমি বললাম, এ সব কিসের আওয়াজ? তারা বলল, এটা জাহান্নামীদের আর্তনাদ। তারপর তারা আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল। হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের মাংসপেশী দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, যারা ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোজা নষ্ট করে ফেলেছে।’ (ইবনে খাযায়মাহ, ইবনে হিব্বান)

– যারা রমজানের রোজা পেয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পারলো না তারা দুর্ভাগা। হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের এ পবিত্র মাসে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পারলো না, সে বড়ই দুর্ভাগা।’ (ইবনে হিব্বান)

– অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি শরিয়তে উল্লেখিত কারণ ছাড়া এ (রমজান) মাসে একটি রোযাও ছেড়ে দেবে, সে যদি এর বদলা বা পরিবর্তে সারা জীবনও রোজা পালন করে, তবুও তার পাপের খেসারত হবে না।’ (বুখারি)

যেসব ক্ষেত্রে রোজা ভাঙা যাবে
যদি উপযুক্ত কারণ থাকে তবে রমজানের ফরজ রোজা ভাঙা যাবে। এ সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে দিকনির্দেশনা দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে-
‘রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে (পরবর্তীতে) অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

মনে রাখতে হবে
কুরআন সুন্নাহর আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, বিনা কারণে রোজা ভাঙা আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘন। আর আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘন কবিরা গোনাহ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ রোজা আদায়ের তাওফিক দান করুন। রোজা নষ্টের কবিরা গোনাহ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।