কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

রমজানের শিক্ষা

মাহে রমজান একটি ঈমানী পাঠশালা, সারা বছরের পাথেয় উপার্জন, সারা জীবনের মাকসাদকে শানিত করার জন্যে এটি একটি রুহানি ময়দান। যে ব্যক্তি মাহে রমজানে নিজেকে সংশোধন করতে পারল না সে আর কখন নিজের জীবন গঠন করবে ?

মাহে রমজানই এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাতে আমরা নিজেদের আমল, শরিয়ত পরিপন্থী আচার ব্যবহার পরিত্যাগ ও চরিত্র সংশোধন করে নিতে পারি। আল্লাহ তাআলা বলেন :

إِনিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ পর্যন্ত কোন জাতির পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদেরকে পরিবর্তন করে নেয়। (রাদ: ১১)

যদি তুমি সত্যিকার অর্থে রমজান পেয়ে লাভবান হয়ে থাক আর মোত্তাকিদের গুনাবলী অর্জন করে রোজা, তারাবির নামাজ সম্পাদন করে থাক, তাহলে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা কর। তার শোকর আদায় কর এবং তার কাছে মৃত্যু পর্যন্ত অটল থাকার তাওফীক কামনা কর।

তুমি ঐ নারীর মত হয়ও না, যে নাকি সুতা দিয়ে সুন্দর করে সুয়াটার বুনল, যখন তা তাকে আকৃষ্ট করল, তখন একটি একটি করে সুতা খুলে ফেলতে লাগল। মানুষ তার সম্পর্কে কী মন্তব্য করবে? রমজান শেষে যে পুনরায় গুনাহের দিকে ফিরে গিয়ে নেক আমল ছেড়ে দেয়, তার অবস্থাতো ঐ নারীর মতই। আনুগত্য ও মুনাজাতের স্বাদ পাওয়ার পরেও পুনরায় গুনাহ ও অপরাধের দিকে কীভাবে ফিরে যায়?

সুহৃদয় পাঠক বর্গ !আমরা রমজানে আল্লাহর সাথে যে ওয়াদা করেছি তা ভঙ্গ করার অনেক চিত্র সমাজে ফুটে উঠেছে। যেমন :

১।ঈদের দিনেই জামাতে নামাজ আদায় ছেড়ে দেয়া। তারাবির মত সুন্নত নামাজে মসজিদ ভরা মুসল্লি থাকার পর এখন ফরজ নামাজের সময়ই মুসল্লির সংখ্যা খুব কমে যাওয়া।

গান-বাদ্য ও সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া।

বেহায়া ও বেলেল্লাপনার সাথে হাট-বাজারে ও পার্কে ছেলে- মেয়েদের সহাবস্থান—ইত্যাদি।

তাহলে কি এভাবেই আমরা মাহে রমজানকে বিদায় জানাব ?

এত বড় নেয়ামতের এটাই কি শোকর আদায়, এটাই কি আমল কবুল হওয়ার নিদর্শন ? নিশ্চয় নয়। বরং এটা আমল কবুল না হওয়ার আলামত। কেননা প্রকৃত রোজাদার ঈদের দিন রোজা ছেড়ে দিয়ে আনন্দিত হবে এবং রোজা পূর্ণ করার তাওফীক পাওয়ার দরুন তার প্রতিপালকের প্রশংসা করবে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। সাথে সাথে এই ভয়ে কাঁদবে যে, না জানি আমার রোজা কবুল হয়নি। আমাদের পূর্বসূরীগণ মাহে রমজানের পর ছয় মাস পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে রোজা কবুল হওয়ার দোয়া করতেন। আমল কবুল হওয়ার 

আলামত হল, পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে বর্তমান অবস্থা উন্নত হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন :

মৃত্যু পর্যন্ত তোমার রবের এবাদত কর। (সূরা আল-হিজর:৯৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

বল বিশ্বাস স্থাপন করলাম আল্লাহর প্রতি, এবং অবিচল থাক। (মুসলিম)

সত্যিকার মোমিন বান্দা সর্বদাই আল্লাহর এবাদত করবে। কোন নির্দিষ্ট মাস, জায়গা অথবা জাতির সাথে মিলে আমল করবে না, বরং সর্বদা সে এবাদত করবে। মোমিন বান্দা মনে করবে যিনি রমজানের প্রভু তিনি অন্যান্য সকল মাসেরও প্রভু। তিনি সকল কাল ও স্থানের প্রভু। রমজান শেষ হয়ে গেলেও শাওয়ালের ছয় রোজা, আশুরা, আরাফা, সোমবার, বৃহস্পতিবার ইত্যাদি নফল রোজা রয়েছে। তারাবীহের নামাজ শেষ হয়ে গেলেও তাহাজ্জুদ নামাজ বাকি আছে সারা বছর। অতএব নেক আমল সব সময় সব জায়গাতেই করা যায়। হে ভাই ! তুমি নেক আমলের চেষ্টা করতে থাক। অলসতা কর না। যদি তুমি নফল আদায় করতে না চাও, তাহলে কমপক্ষে ফরজ ওয়াজিব ছেড়ে দিয়ো না। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের উপর অটল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন!