যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

সব নবি-রাসুলের (আ.) যুগে কি রোজার বিধান ছিল?

রোজার বিধান শুধু উম্মতে মুহাম্মাদির জন্যই নয়, বরং এ বিধান ছিল সব যুগের মানুষের জন্য। তবে রোজার এ বিধান সবার প্রতি একরকম ছিল না। বিভিন্ন জাতির প্রতি রোজার বিধান ছিল বিভন্ন রকম। সব নবি-রাসুল আলাইহিমুস সালামের জন্য রোজার বিধান ছিল। তাদের রোজার বিধান কেমন ছিল?

মুসলিম উম্মাহর প্রতি রোজা ফরজ হওয়ার নির্দেশটি একটি বিশেষ অনুগ্রহ। তাদের প্রতি রমজানের রোজা পালনের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, রোজা শুধু তোমাদের উপরই ফরজ করা হয়নি, বরং তোমাদের আগের সব নবি-রাসুলের উম্মতের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। কোরআনুল কারিমের ঘোষণা থেকে তা প্রমাণিত। এ রোজা পালনের বিধান তাদের জন্যও ফরজ ছিল। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ < হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববতীদের দেওয়া হয়েছিল যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পারো। সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

এ নির্দেশ দ্বারা যেমন রোজার বিশেষ গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে; তেমনি মুসলিমদের এ মর্মে একটি সান্ত্বনাও দেয়া হয়েছে যে, রোজা একটা কষ্টকর ইবাদাত সত্য, তবে তা শুধু তোমাদের উপরই ফরজ করা হয়নি, যুগে যুগে তোমাদের আগের জাতিগুলোর উপরও ফরজ করা হয়েছিল। কিন্তু যুগে যুগে রোজার বিধান ও ইতিহাস কেমন ছিল?

যুগে যুগে রোজার বিধান

সব নবি ও রাসুলের যুগে রোজার বিধান ও ইতিহাস কেমন ছিল; তা কোরআন-সুন্নাহ ও প্রাগৈতিহাসিক বর্ণনায় এভাবে ফুটে ওঠছে-

১. পৃথিবীর প্রথম রোজা পালন

পৃথিবীতে প্রথম রোজা কে রেখেছিলেন? এ প্রশ্নের উত্তরেই ওঠে এসেছে হজরত আদম আলাইহিস সালামের নাম। কিন্তু দুনিয়ায় প্রথম কে রোজা রেখেছিলেন বা এর সংখ্যা কত ছিল? সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট দলিলভিত্তিক নির্দেশনা অস্পষ্ট হলেও কোরআনের নির্দেশনা এমন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ হে ঈমাদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমারে আগের লোকদের (নবি-রাসুল ও তাদের উম্মত) ওপর। যাতে তোমরা পরহেজগার হতে পার। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, রোজা হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগের সব নবি-রাসুলের জন্যও ফরজ ছিল। সে হিসেবে প্রথম নবি ও প্রথম মানুষ হজরত আদম আলাইহিস সালামই হবেন প্রথম রোজা পালনকারী। কিন্তু প্রথম রোজা রাখা এবং এর সংখ্যা কয়টি ছিল এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দলিলভিত্তিক ঘোষণা না থাকলেও হজরত আব্দুল কাদের জিলানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহিসহ সুফি-সাধকরা কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন। তাহলো-

সুফি-সাধকদের মতে, হজরত আদম আলাইহিস সালাম যখন নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিলেন এবং তারপর তওবা করছিলেন, তখন ৩০ দিন পর্যন্ত তার তওবা কবুল হয়নি। কারণ তাঁর দেহে নিষিদ্ধ ফলের নির্যাস রয়ে গিয়েছিল। এরপর তাঁর দেহ যখন তা থেকে পাক-পবিত্র হয়ে যায়, তখন তাঁর তওবা কবুল হয়। তারপর তাঁর সন্তানদের ওপরে ৩০ রোজা ফরজ করে দেওয়া হয়।

হজরত ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ বর্ণনার প্রমাণে সনদ নেই। এর কোনো দলীল পাওয়াও কঠিন ব্যাপার। (ফতহুল বারি)

তবে দুনিয়ায় প্রথম রোজা পালন সম্পর্কে হজরত আব্দুল কাদের জিলানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হজরত যির ইবনে হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আইয়্যামে বিজ (চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালামকে একটি ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু আদম আলাইহিস সালাম সেই ফল খেয়ে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় নেমে আসতে বাধ্য হন। সে সময় তাঁর শরীরের রং কালো হয়ে যায়। ফলে তাঁর দুর্দশা দেখে ফেরেশতারা কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন-

হে আল্লাহ! আদম আপনার প্রিয় সৃষ্টি। আপনি তাঁকে জান্নাতে দিয়েছিলেন। আমাদের দ্বারা তাঁকে সেজদাও করিয়েছেন। আর একটি মাত্র ভুলের জন্য তার দেহের রং কালো করে দিলেন

তাদের এ আবেদনে আল্লাহ তাআলা হজরত আদাম আলাইহিস সালামের কাছে ওহি পাঠালেন- তুমি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখ। আদম আলাইহিস সালাম তাই করলেন। ফলে তাঁর দেহের রং আবার উজ্জ্বল হয়ে যায়। এ জন্যই এ তিনটি দিনকে আইয়্যামে বিজ বা উজ্জ্বল দিন বলা হয়। (গুনইয়াতুত ত্বলিবিন)

এ ঘটনায়ও কোরআন-সুন্নাহর কোনো ব্যাখ্যা বা মতামত সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়নি। তবে হাদিসে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে কিংবা সফরে থাকাকালীন সময়ে আইয়্যামে বিজ-এর রোজা রাখা থেকে বিরত থাকতেন না। (নাসাঈ, মিশকাত)

তবে এ কথা সুস্পষ্ট যে, রোজা শুধু উম্মতে মুহাম্মাদির ওপরই ফরজ হয়নি বরং আগের নবি-রাসুলদের ওপরও রোজার বিধান ছিল। কোরআনুল কারিমের ঘোষণাই এর প্রমাণ।