আল্লাহ তাআলা বরকতময় রমজান মাসকে মুসলিম উম্মাহর জন্য রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের উসিলা বানিয়েছেন। রমজান মাসে প্রত্যেক রোজাদার বিশেষ গুণের অধিকারী হবে। বিশেষ গুণগুলো কী?
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর কোরআন নাজিলের পবিত্র মাস রমজান। এ মাসেই মানুষের জন্য জীবন বিধান হিসেবে কোরআন নাজিল করা হয়েছে। এ মাসে রোজাদার তিনটি বিশেষ গুণের অধিকারী হয়ে থাকেন। তাহলো-
১. বছরজুড়ে মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার মাস রমজান
রমজানেই মসজিদে সঙ্গে রোজাদারের সম্পর্ক স্থায়ী হয়। কোনো মুমিন মুসলমানের জন্য এমনটি হওয়া উচিত নয় যে, সে শুধু রমজানেই নামাজ পড়তে মসজিদে যাবে। বরং বছরজুড়ে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করার সম্পর্ক তৈরি হবে। যেন মুমিনের জন্য দুনিয়াতেই মসজিদ হবে জান্নাতের সর্বোত্তম নমুনা।
২. বিশুদ্ধভাবে কোরআন শেখার মাস রমজান
বরকতময় রমজান কোরআন নাজিলের মাস। মাসটি কোরআন শেখার জন্য বিশেষ সহায়ক। রমজানে কোরআনের সঙ্গে তৈরি হোক স্থায়ী সম্পর্ক। কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক যেন রমজান কেন্দ্রিক না হয়। রমজানে কোনো ইসলামিক স্কলার কিংবা কোনো ব্যক্তির উপদেশ যেন এমন না হয়-
কোরআন তেলাওয়াত করতে না পারলে বা না জানলে কুল হুওয়াল্লাহ সুরা কিংবা কোনো দোয়া-জিকিরের অজিফা দুই শত বার কিংবা চার শত বার পড়ুন!
বরং তাদের বক্তব্য যেন হয় এমন যে, রমজান মাস হলো কোরআন শেখার সর্বোত্তম মাস। কোরআন পড়তে না জানলে ২/৪/৬ কিবাং হাজার বার কোনো সুরা, দোয়া পড়ার তালিম নয়; বরং আউজুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ থেকে শুরু করে এক আয়াত, দুই আয়াত, একটি সুরা, দুই সুরা, এক পারা, দুই পারা- এভাবে কোরআন শেখানো বা শেখার উপদেশই সর্বোত্তম। কোরআন নাজিলের মাস রমজানেই মুমিন মুসলমানের জন্য তেলাওয়াত শেখার সর্বোত্তম সুযোগ।
মনে রাখতে হবে
কেউ যদি কোরআন পড়তে না পারেন তবে জোড় দিয়ে এ কথা বলতে হবে। আপনি কোরআন শিখুন। আপনাকে কোরআন পড়তে হবে। কোরআন শিখতে হবে। কোরআন পড়তে পারেন না এমন অনেকেই রমজান মাসে তারাবিতে কোরআন তেলাওয়াত শোনেন। তারাবির নামাজে কোরআন তেলাওয়াত শোনা কোনো মুমিনের শান নয়। বরং মুমিনকে কোরআন তেলাওয়াত শোনানোর যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। কোরআন পড়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
৩. নাজাত পাওয়ার মাস
রমজান মাসে দেখে দেখে পুরো কোরআন পড়ার যোগ্যতা অর্জন করার মাধ্যমে রমজানের রহমত মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার চেষ্টা করা। তাই রমজানের শুরু থেকেই কোরআন শেখার মেহনত করা জরুরি। প্রয়োজনে আরবি ২৯ হরফ শেখার মাধ্যমে তা শুরু করা যেতে পারে।
কোরআন শেখার হুকুম হচ্ছে ফরজ। বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত শেখা সবার উপর ফরজ। কোরআন শেখার জন্য কোনো অজুহাত-ওজরের প্রয়োজন নেই। আর কোনো ওজর দিয়ে পার পাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। কোরআন শেখার মাধ্যমে রমজান মাসে আল্লাহর কাছে নাজাত পাওয়ার চেষ্টা করাই হবে সর্বোত্তম নেক আমল ও ইবাদত।
কোরআন শেখার কাজে শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সবার জন্য সমান গুরুত্ব বহন করে। তাই সবার জন্য পুরো কোরআন তথা সুরা ফাতেহা থেকে নাস পর্যন্ত দেখে দেখে বিশুদ্ধভাবে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করা জরুরি। আর রমজানই হোক সবার জন্য কোরআন শেখার সর্বোত্তম সময়।
৪. কোরআনের অভিশাপ থেকে বেঁচে থাকার মাস
রমজান হোক কোরআনের অভিশাপ থেকে বেঁচে থাকার মাস। এমন অনেক মানুষ আছে, যারা কোরআন তেলাওয়াত করে আর কোরআন তাদের লানত করে। অভিশাপ দেয়। কোরআনের ভাষায় নিজেকে নিজে লানত করে চলেছে। বিষয়টি এমন-
কোনো লোক নিজে মিথ্যাবাদী। কথা ও কাজে মিথ্যা ত্যাগ করে না অথচ সে তেলাওয়াত করছে- فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ
মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত বা অভিশাপ।
কোনো লোক নিজে অন্যের উপর অত্যাচারী। মানুষের উপর যুলম করে। হয়ত সে পড়ছে- أَلَا لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الظَّالِمِينَ
অত্যাচারীদের উপর আল্লাহর লানত।
এভাবে কোরআন তেলাওয়াতকারী নিজেই নিজের ধ্বংসের জন্য আল্লাহর কাছে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ধ্বংস প্রার্থনা করে। তাই কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।
মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজানে মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া, কোরআন তেলাওয়াত শেখা, নাজাত পাওয়া এবং কোরআনের লানত থেকে নিজেদের মুক্ত রাখা। নিজেদের মিথ্যা ও অত্যাচার থেকে মুক্ত থাকাও জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের রোজায় মসজিদমুখী হওয়ার অভ্যাস গঠন করার তাওফিক দান করুন। বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত শেখার সুযোগ দান করুন। কোরআনের অভিশাপ থেকে বেঁচে থাকতে বদগুণগুলো থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।