কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

ইতেকাফের সময় করণীয় ও বর্জনীয়

ইতেকাফ রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই ইতেকাফ করতেন। সাহাবায়ে কেরামও ইতেকাফ করতেন। ইতেকাফের মাধ্যমে মুসলমানগণ আল্লাহর জিকির ও ইবাদতের মাধ্যমে শবে কদর তালাশ করে। সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করে থাকে।

ইতেকাফ কী

ইতেকাফ শব্দটি আরবি। এর অর্থ- অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায় ইতেকাফ হলো- পুরুষের জন্য নিয়তসহ এমন মসজিদে অবস্থান করা, যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আর নারীর ইতেকাফ হলো, নিয়তসহ ঘরের ভেতরে নামাজের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা।

ইতেকাফের ধরন

ইতেকাফ তিন ধরনের। যথা

১. ওয়াজিব

ওয়াজিব ইতেকাফ হলো, মানতের ইতেকাফ; অর্থাৎ কেউ যদি মানত করে, আমার কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন হলে আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ইতেকাফ করব। কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়ে গেলে অবশ্যই ইতেকাফ করতে হবে। এই ইতেকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। রোজা ছাড়া এই ইতেকাফ আদায় হবে না।

২. সুন্নতে মুয়াক্কাদা

সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতেকাফ হলো, মাহে রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফ। এটি মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে কমপক্ষে একজন মানুষ হলেও আদায় করতে হবে। নতুবা সবাই গোনাহগার হবে।

৩. মোস্তাহাব

মোস্তাহাব ইতেকাফ হলো, কিছুক্ষণের জন্য ইতেকাফের নিয়ত করে মসজিদে অবস্থান করা। এটা অত্যন্ত বরকতময় ও সওয়াবের কাজ। স্বাভাবিকভাবে সবাই মসজিদে প্রবেশ করার সময় ইতেকাফের নিয়ত করলে ইতেকাফও আদায় হবে, সওয়াব পাওয়া যাবে।

রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফ

মাহে রমজানের শেষ দশকে অর্থাৎ বিশ রমজান নিয়তসহ সূর্যাস্তের আগে মসজিদে প্রবেশ করে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করা বা ইতেকাফ করাই হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে একজন ব্যক্তি ইতেকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। মহল্লাবাসীর কেউ যদি ইতেকাফ না করে, তাহলে সবাই গোনাহগার হবে।

ইতেকাফের শর্ত

১. নিয়ত করা। নিয়ত ছাড়া সারাজীবন মসজিদে অবস্থান করলেও ইতেকাফ হবে না।

২. এমন মসজিদে ইতেকাফ করা, যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়মিত জামাত হয়। জাওয়াহিরুল ফিকহ গ্রন্থে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট ইমাম ও মুয়াজ্জিন যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে, এমন মসজিদ ছাড়া ইতেকাফ শুদ্ধ হবে না।

ইতেকাফ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত

১. মুসলমান হওয়া।

২. অপবিত্রতা ও হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া।

ইতেকাফ অবস্থায় করণীয়

১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়া।

২. কোরআনুল কারিম তেলাওয়াত করা।

৩. দুরুদ শরিফ পাঠ করা।

৪. জিকির-আজকার করা।

৫. দ্বীনি কিতাবাদি পড়া।

৬. দ্বীনি কিতাবাদি রচনা করা।

৭. ফিকহ-ফতোয়া নিয়ে গবেষণা করা।

৮. কোরআন ও হাদিসের দরস প্রদান করা।

৯. দ্বীনি ইলম অর্জন করা।

১০. দ্বীনি ইলম অর্জনে সময় ব্যয় করা ।

ইতেকাফ অবস্থায় বর্জনীয়

১. ওজর ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছেড়ে দেওয়া।

২. অনর্থক কথাবার্তা বলা।

৩. দুনিয়াবি কথা বলা।

৪. ব্যবসা-বাণিজ্য করা।

৫. প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া।

৬. পারিবারিক কাজ-কর্ম করা।

৭. অহেতুক সময় নষ্ট করা।

৮. ইবাদত-বন্দেগি না করে চুপচাপ বসে থাকা।

৯. মোবাইলে কারও সঙ্গে দুনিয়াবি কথা বলা।

১০. ইবাদত-বন্দেগি না করে ঘুমিয়ে থাকা।