কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

রমজানের শেষ দশকে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সুন্নত। নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর তাহাজ্জুদ ফরজ ছিল। তিনি আবশ্যিকভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হলে তাহাজ্জুদের ফরজিয়্যাত বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল পর্যন্ত এই নামাজ নিয়মিতভাবে আদায় করেছিলেন। এ ধারাবাহিকতায় তাহাজ্জুদের বিধান এখনও সুন্নত হিসেবে বহাল আছে।

তাহাজ্জুদ নামাজ অত্যন্ত বরকত ও ফজিলতপূর্ণ। তাহাজ্জুদের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন এবং নৈকট্য লাভ করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ مِنَ الَّیۡلِ فَتَهَجَّدۡ بِهٖ نَافِلَۃً لَّکَ ٭ۖ عَسٰۤی اَنۡ یَّبۡعَثَکَ رَبُّکَ مَقَامًا مَّحۡمُوۡدًا

হে রাসুল! আপনি রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ পড়ুন। এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সুরা বনি ইসরাইল : ৭৯)

আল্লাহ তাআলা এ আয়াতের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার বিধান নাজিল করেন।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে সুরা মুজ্জাম্মিলের প্রথম আয়াতাংশ দ্বারা তাহাজ্জুদের নামাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়, তখন তাহাজ্জুদের নামাজের ফরজিয়্যাত বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত হিসেবে আদায় করার বিধান ছিল, যা এখনও আছে এবং উম্মতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ হিসেবে কেয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাজে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতেন। চলছে রমজানের শেষ দশক। অনেকে মসজিদে ইতেকাফে আছেন। রমজানের বাকি দিনগুলোতে হজরত মুগিরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাজে এত দীর্ঘক্ষণ যাবৎ দাঁড়ালেন যে, তার পাদ্বয় ফুলে গেল। যখন তাকে বলা হলো, আপনি এরূপ কেন করেন? আল্লাহ তাআলা তো আপনার আগের ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। উত্তরে তিনি বললেন- أفلا أكُونُ عَبْدًا شَكُورًا আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? (মুসলিম ১১৪৯)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন। কোনো কারণে তিনি এই নামাজ আদায় করতে না পারলে ফজর ও জোহরের মধ্যবর্তী সময়ে এর পরিবর্তে বারো রাকাত নামাজ পড়ে নিতেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যথা বা অন্য কোনো কারণে যদি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে না পারতেন, তবে তিনি দিনে বারো রাকাত নামাজ আদায় করে নিতেন। (মুসলিম ১৬৪০) এছাড়া তাহাজ্জুদের আরও অনেক ফজিলত বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজকে আবশ্যক করে নেবে। কেননা, এটা হচ্ছে তোমাদের আগের সৎলোকের নিয়ম। তোমাদের জন্য প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের পন্থা, গুনাহ মাফের উপায় এবং অপরাধ থেকে বাধাদানকারী। (তিরমিজি ৩৫৪৯) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, তিন ব্যক্তির ওপর আল্লাহ খুশি হন, যখন সে রাতে (তাহাজ্জুদের) নামাজ আদায় করার জন্য ওঠে, মুসল্লিরা যখন নামাজের জন্য কাতার বাঁধে এবং সৈন্যদল যখন শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধ হয়। (শরহুস সুন্নাহ ১১৫৭)

হাদিসের আলোকে এ কথা প্রমাণিত যে, তাহাজ্জুদ নামাজ আগের সৎলোকের তথা মুত্তাকিদের নিদর্শন এবং এর মাধ্যমে গুনাহ মাফের কারণ হয়। ভবিষ্যতে তাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে গুনাহমুক্ত থাকার বিশেষ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং নৈকট্য লাভ করা যায়।

রমজান মাস বান্দার জন্য শ্রেষ্ঠ একটি মাস। আবার এ মাসের শেষ দশক আরও গুরুত্বপূর্ণ। এ মাস ও শেষ দশকের ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব অন্য যে কোনো মাস ও সময়ের চেয়ে বহুগুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্য মাসের তাহাজ্জুদ নামাজ আর রমজান মাসের তাহাজ্জুদেরে নামাজের মধ্যে বিস্তর ফারাক। রমজানে নফল নামাজ আদায় করলে অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য সওয়াব। আর রমজান মাসে রোজাদারগণ যেহেতু সেহরি গ্রহণ করার জন্য ওঠেন, একটু আগেভাগেই উঠে এই ফজিলতপূর্ণ নামাজ আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং ক্ষমাপ্রার্থনার সুবর্ণ সুযোগকে কাজ লাগিয়ে অশেষ কল্যাণ লাভ করতে পারেন।

ফরজ নামাজ যেমন পাঁচ ওয়াক্ত আদায় করে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব পাওয়া যায়, অনুরূপ তাহাজ্জুদ নফল বা সুন্নত হলেও এতে ফরজের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। নফল নামাজের ক্ষেত্রে দিনের চেয়ে রাতে সওয়াব বেশি। আর তাহাজ্জুদ নামাজ যেহেতু শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়া হয়, সেহেতু এর সওয়াব অন্যান্য নফল নামাজের চেয়ে বহুগুণ বেশি। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ফরজ নামাজের পর সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ নামাজ রাতের নামাজ। আর এখানে রাতের নামাজ বলতে তাহাজ্জুদই উদ্দেশ্য। (মুখতাসারুল আহকাম ২/৩৯৩) রমজান মাসে যারা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার উদ্দেশে রাতের বেলায় জাগ্রত থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে, তাহাজ্জুদ নামাজ কেয়ামতের ময়দানে তার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। নামাজ বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি এই ব্যক্তিকে রাতের বেলায় ঘুমাতে দেইনি। এই ব্যক্তি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছে। সুতরাং তার পক্ষে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতএব, তাহাজ্জুদ নামাজের সুপারিশ কবুল করা হবে। (তিরমিজি ২/১০৮)

সুতরাং রোজাদার মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজানের শেষ দশকের বাকি রোজাগুলো যথাযথভাবে পালনের পাশাপাশি রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার প্রতি মনোযোগী হওয়া জরুরি। সেহরি খাওয়ার আগে কিংবা পরে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার চেষ্টায় নিয়োজিত হওয়াই হবে মুমিন মুসলমান রোজাদারের অন্যতম কাজ। আল্লাহ তাআলা সবাইকে কবুল করুন। আমিন।