ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন জাপানি তারকা রায়ে লিল ব্ল্যাকজাহান্নামীদের শয্যা ও পোশাকঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার দোয়াআল্লাহর জিকির মুমিনকে শক্তিশালী করেপবিত্র কাবাঘরে ১২০ কেজি স্বর্ণের নতুন গিলাফ
No icon

মানব কল্যাণে নবী-রাসুলদের অনন্য অবদান

নবী-রাসুলগণ হলেন আল্লাহর প্রেরিত দূত, যাঁরা মানুষের কাছে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পৌঁছে দেন। তাঁরা একদিকে আনুগত্যকারীদের জন্য সুসংবাদ দেন জান্নাতের, অন্যদিকে অবাধ্যদের সতর্ক করেন জাহান্নামের শাস্তি থেকে। পূর্ববর্তী জাতির ইতিহাসও তাঁরা বর্ণনা করেন, যারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। তাঁরা মানবজাতির কাছে তাঁদের মহান স্রষ্টার বিধি-বিধান পৌঁছান।

যেন তারা তা মান্য করে দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য অর্জন করতে পারে। শুধু মানুষের বিবেক দিয়ে এসব বিধান সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। আল্লাহ শরিয়তের মাধ্যমে তাঁর আদেশ-নিষেধ আবশ্যক করেছেন, যাতে মানুষ নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে পথভ্রষ্ট না হয় এবং একে অপরের অধিকার লঙ্ঘন না করে।

ইমাম মাওয়ার্দি (রহ.) বলেন, ‘রাসুলদের প্রেরণ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই এবং সত্য প্রতিষ্ঠায় তাঁদের কোনো বিকল্প নেই।’ (আলামুন নুবুওয়াহ, পৃষ্ঠা ৩৩)

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘রিসালাত ছাড়া বান্দার ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনে কোনো কল্যাণ নেই। শরিয়ত হলো আল্লাহর আলো এবং বান্দাদের মাঝে তাঁর ইনসাফ। এটি আল্লাহর সেই দুর্গ, যেখানে প্রবেশ করলে মানুষ নিরাপদ থাকে।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া : ১৯/৯৯)

তিনি আরো বলেন, শরিয়তের উদ্দেশ্য শুধু ইন্দ্রিয়গত উপকার-অপকার চেনানো নয়, বরং ঈমান, ইনসাফ, সদাচরণ, তাওহিদ, জ্ঞান, ধৈর্য, সৎকাজের আদেশ, মন্দ থেকে নিষেধ, আত্মীয়তার সম্পর্ক ইত্যাদি, যা দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ বয়ে আনে তা নির্ধারণ করা শরিয়তের উদ্দেশ্য।

রিসালাত না থাকলে মানুষ সত্যিকারের কল্যাণ ও ক্ষতির পার্থক্য জানতে পারত না। আল্লাহ মানুষের ওপর অনন্ত কৃপা করে নবী-রাসুলদের (আ.) প্রেরণ করেছেন, কিতাব নাজিল করেছেন এবং সঠিক পথ দেখিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) হলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল। আল্লাহ তাঁকে জগত্বাসীর জন্য রহমত, জান্নাতের পথচারীদের জন্য দলিল এবং সৃষ্টিকুলের জন্য প্রমাণ হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তাঁর আনুগত্য করা, তাঁকে ভালোবাসা, তাঁকে সম্মান করা ও তাঁর হক আদায় করা বান্দাদের ওপর ফরজ করেছেন।

তিনি তাঁকে কিয়ামতের পূর্বে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে, আল্লাহর অনুমতিতে তাঁর দিকে আহবানকারী এবং আলোকবর্তিকা হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাঁর মাধ্যমে রিসালাতের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন, বিভ্রান্তি থেকে সুপথ দেখিয়েছেন, অজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের দিশা দিয়েছেন। অন্ধকার জমিন তাঁর রিসালাতে আলোকিত হয়েছে। বিক্ষিপ্ত থাকার পর তাঁর মাধ্যমে অন্তরগুলোর মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্য তৈরি হয়েছে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ বক্র মতাদর্শকে সোজা করেছেন এবং শুভ্র সঠিক পথকে স্পষ্ট করেছেন। তিনি তার অন্তরকে প্রসন্ন করে দিয়েছেন এবং অন্তরের ভার অপসারণ করে দিয়েছেন।

মানবজাতির জন্য আসমানি হিদায়াতের অপরিহার্যতার কিছু দিক তুলে ধরা হলো—

১. মানুষ সৃষ্ট ও প্রতিপালিত প্রাণী। তাকে অবশ্যই নিজ স্রষ্টাকে জানতে হবে। তাকে জানতে হবে স্রষ্টা তার কাছে কী চান। নবী-রাসুলদের মাধ্যমে শুধু তা সম্ভব।

২. মানুষ শরীর ও আত্মার সমন্বয়ে সৃষ্ট। শরীরের খাদ্য হলো খাবার-পানীয়। আর আত্মার খাদ্য হলো সঠিক দ্বিন ও নেক আমল। নবী-রাসুলরাই দ্বিন ও নেক আমলের দিশা দেন।

৩. মানুষ সহজাতভাবে কোনো না কোনো ধর্মের অনুসরণ করতে চায়। আর সঠিক ধর্মাবলম্বন শুধু নবী-রাসুলদের অনুসরণের মাধ্যমে সম্ভব।

৪. মানুষের এমন পথ প্রয়োজন, যা তাকে দুনিয়ায় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতে জান্নাত লাভে সাহায্য করবে। এই পথ শুধু নবী-রাসুলরাই দেখাতে পারেন।

৫. মানুষ দুর্বল। শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করতে চায়, খারাপ সঙ্গীরা তাকে বিভ্রান্ত করতে চায়, প্রবৃত্তি তাকে খারাপের প্রতি ধাবিত করে। নবী-রাসুলদের প্রদর্শিত পথ-পদ্ধতির মাধ্যমে সে আল্লাহর সাহায্য লাভ করে এবং শত্রুদের পরাজিত করে।

৬. মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীব। মানুষের পারস্পরিক মেলামেশার জন্য অবশ্যই আইন প্রয়োজন; যাতে তাদের মধ্যকার বিষয়গুলো ন্যায়সংগতভাবে পরিচালিত হয়। নতুবা তাদের জীবন বনজঙ্গলের জীবনের অনুরূপ হবে। আর এ আইন এমন হওয়া আবশ্যক যেন কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি না থাকে। এমন পরিপূর্ণ আইন শুধু নবী-রাসুলরাই নিয়ে আসতে পারেন।

৭. মানুষের জন্য এমন কিছু প্রয়োজন, যা তাকে আত্মিক প্রশান্তি ও মানসিক নিরাপত্তা দেবে, প্রকৃত সুখের উপায়-উপকরণের পথ দেখাবে। নবী-রাসুলরা সেই পথ দেখান।