কোরআন মহান আল্লাহর বাণী। কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সান্নিধ্যের সৌরভ লাভ করতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিতে কোরআন তিলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, এর (কোরআন) দ্বারা তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদের সরল পথে পরিচালিত করেন। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১৬)
এ ছাড়া কোরআন চর্চায় মুমিনের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তার ধর্মীয় জীবনের উন্নতি হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যখনই কোনো সুরা অবতীর্ণ হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করল? যারা মুমিন এটা তাদেরই ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারাই আনন্দিত হয়। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২৪)
ব্যস্ত জীবনে কোরআন চর্চার উপায় : আধুনিক জীবনব্যবস্থায় মানুষ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি ব্যস্ত। ফলে বহু মানুষের কোরআন তিলাওয়াত ও কোরআনের জ্ঞান অর্জনের ইচ্ছা থাকলেও তারা তা অর্জন করতে পারে না। ব্যস্ততার মধ্যেও কিভাবে কোরআন চর্চা করা যায় সে বিষয়টি এখানে তুলে ধরা হলো।
১. চলতি কোরআন পাঠ : প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের সময় আমাদের প্রচুর সময় নষ্ট হয়, বিশেষত শহরের যানজটের কারণে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়। এ সময় ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক মাধ্যমে ব্যয় না করে কোরআন, কোরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা পাঠ করা যায়। আধুনিক মোবাইল ফোনে ব্যবহার উপযোগী অসংখ্য কোরআনভিত্তিক গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যায়।
২. চলতি পথে কোরআন শ্রবণ :কোরআন দেখে পাঠ করতে ইচ্ছা না করলে চলাচলের পথে কোরআন তিলাওয়াতও শোনা যেতে পারে। শায়খ হুজায়ফি, শায়খ সুদাইসি, শায়খ মিশয়ারির মতো আরব বিশ্বের খ্যাতিমান কারিদের তিলাওয়াতের পাশাপাশি বাংলাদেশি বহু কারির তিলাওয়াত অনলাইনে পাওয়া যায়, বিশেষত আরবের বিখ্যাত কারিদের তিলাওয়াতের অ্যাপসও গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যায়।
৩. পাঁচ ওয়াক্তে ২৫ মিনিট :পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে বা পরে যদি পঁাচ মিনিট করে কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, তবে দৈনিক পাঁচ থেকে আট পৃষ্ঠা কোরআন তিলাওয়াত করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনেও কোরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে। এমনও হতে পারে যে তিন ওয়াক্ত নামাজের পর তিলাওয়াত করা হলো এবং বাকি দুই ওয়াক্তের এক ওয়াক্তে ৫ থেকে ১০টি আয়াতের অর্থ এবং অপর ওয়াক্তে এক থেকে তিনটি আয়াতের ব্যাখ্যা পাঠ করা হলো।
৪. খাবার টেবিলে আলোচনা :দুপুরে বা রাতে যখন খাবারের টেবিলে বা দস্তরখানে পরিবারের সদস্যরা তুলনামূলক বেশি উপস্থিত থাকে, তখন কোরআনের বিভিন্ন আয়াত, আয়াতের বিধান, আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিত ও আয়াতের শিক্ষা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আলেমরা বলেন, খাওয়ার সময় একেবারে চুপ থাকার চেয়ে দ্বিনি বিষয়ে আলোচনা করা উত্তম। এ ক্ষেত্রে বড়দের আলোচনা ছোটরা শুনতে পারে আবার ছোটদের আলোচনা বড়রাও শুনতে পারেন।
৫. ঘুমের আগে ১০ মিনিট :ঘুমের সময় অজু করে ঘুমানো মুস্তাহাব। বিশুদ্ধ হাদিসে ঘুমানোর আগে ইখলাস, ফালাক, নাস, মুলক ইত্যাদি সুরা পাঠ করার কথা এসেছে। তবে যারা সারা দিন কোরআন তিলাওয়াতের সুযোগ পান না, তারা রাতে ঘুমানোর আগে উল্লিখিত সুরার সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অন্যান্য সুরাও তিলাওয়াত করে নিতে পারেন।
৬. নামাজে তিলাওয়াত :যারা কোরআনে হাফেজ, কিন্তু নিয়মিত তিলাওয়াতের সুযোগ হয় না, তাঁরা পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ ও সুন্নত নামাজে নিয়মিত ও ধারাবাহিকভাবে তিলাওয়াত করতে পারেন। যাঁরা হাফেজ নন, কিন্তু কোরআনের বিভিন্ন অংশ মুখস্থ করেছেন, তাঁরাও তা ঠিক রাখতে ধারাবাহিকভাবে নামাজে তিলাওয়াত করতে পারেন।
৭. কর্মস্থলে কোরআন শরিফ :কখনো কখনো কর্মস্থলে অল্প সময়ের জন্য হলেও অবসর মেলে। তখন করার মতো ঠিক কোনো কাজ থাকে না। টুকরা টুকরা এসব অবসরেও কোরআন চর্চা করা যেতে পারে। এ জন্য কর্মস্থলেও একটি কোরআন শরিফ বা এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ রাখা যেতে পারে।