২১৫ বছর আগের মসজিদ রংপুরের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যবসায়িক পণ্যের জাকাত ইবাদত পালনকারীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত মসজিদে নববীমৃত বাবা-মাকে স্বপ্নে দেখলে যা করবেনযেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় না
No icon

সদ্য হজ সম্পন্নকারীদের বিশেষ আমল ও দোয়া

হজ উচ্চ মর্যাদার ইবাদত। যার বিনিময় নিশ্চিত জান্নাত। এ হজ সম্পন্ন করার পর করণীয় বা আমল কী হবে, সে সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কী সেই দিকনির্দেশনা?

হজের পর জীবনের বাকি সময়গুলোতে করণীয় আমল সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
فَاِذَا قَضَیۡتُمۡ مَّنَاسِکَکُمۡ فَاذۡکُرُوا اللّٰهَ کَذِکۡرِکُمۡ اٰبَآءَکُمۡ اَوۡ اَشَدَّ ذِکۡرًا ؕ فَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّقُوۡلُ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا وَ مَا لَهٗ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنۡ خَلَاقٍ তারপর যখন তোমরা তোমাদের হজের কাজসমূহ শেষ করবে, তখন তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করো, যেভাবে তোমরা স্মরণ করতে তোমাদের বাবা-দাদাদের, এমনকি তার চেয়েও অধিক স্মরণ করো। আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যে বলে, হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতেই দিয়ে দিন। বস্তুত আখেরাতে তার জন্য কোনো অংশ নেই। (সুরা বাকারা: আয়াত ২০০)
একটি দোয়ার দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে এভাবে-
وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ یَّقُوۡلُ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ পক্ষান্তরে তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে দোজখের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর।(সুরা বাকারা: আয়াত ২০১)
উল্লেখ্য, ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের লোকেরা হজ সম্পাদন করেই মিনায় মেলার আয়োজন করতো। তাই আল্লাহ তাআলা জাহেলি যুগের সে রীতির পরিবর্তন করে মানুষকে নির্দেশ দেন যে, হজের পর মেলা নয় বরং আল্লাহর স্মরণই সর্বোত্তম। আর তা মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত রাখা আবশ্যক।

নিজ নিজ দেশে ফিরে হাজিদের করণীয় হজ পালনকারীরা নিজ নিজ দেশে গিয়ে কী আমল করবেন, তা বর্ণনা করেছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-

১. হজরত কাব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদে (নফল) নামাজ আদায় করতেন।(বুখারি)

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে দীর্ঘ সফর শেষে যখন কোনো মানুষ নিজ বাড়িতে ফিরবে; তার উচিত নিজ মহল্লার মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেওয়া। তারপর ঘরে ফেরা। এ নামাজ আদায় করা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণীয় সুন্নাত আমল।

২. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে, তখন দুই রাকাত নামাজ পড়বে। এ নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করবে। আর যখন ঘরে ফিরবে, তখনও দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। এ নামাজ তোমাকে ঘরের অভ্যন্তরীণ বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করবে। (মুসনাদে বাজ্জার)

নিরাপদে হজ করে দেশে ফিরে আসার পর শুকরিয়াস্বরূপ গরিব-মিসকিন ও আত্মীয়স্বজনকে খাবারের দাওয়াত দেয়াও বৈধ। হাদিসে এসেছে-
৩. হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় এসেছেন, তখন একটি পশু জবাইয়ের নির্দেশ দেন। জবাইয়ের পর সাহাবায়ে কেরাম তা থেকে আহার করেছেন। (বুখারি)

হজের পর বেশি বেশি পড়ার দোয়া رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ উচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখেরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার। অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে দোজখের যন্ত্রণাদায়ক আগুণ থেকে রক্ষা কর। মনে রাখতে হবে হজের পর লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বিশাল আয়োজনের ব্যবস্থা করা ইসলাম সমর্থন করে না। যেখানে সমাজের উঁচু থেকে নিচু সব শ্রেণির মানুষ আসবে আর হজ করা ব্যক্তিকে বাহবা দেবে। এমনটি যেন না হয়। মূল কথা হলো- হজ পালনকারীর প্রতিটি কাজই হবে আল্লাহ সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।

হজ করে আসার সময় যদি জমজমের পানি নিয়ে আসেন তবে তা লোকদেরকে পান করানো মোস্তাহাব। অসুস্থ ব্যক্তিদের আরোগ্য পাওয়ার নিয়তেও এ পানি পান করানো বৈধ। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (বাইতুল্লাহ জেয়ারত করে আসার সময়) জমজমের পানি সঙ্গে নিয়ে আসতেন। (তিরমিজি)