যে কোনো সফরের রয়েছে নির্ধারিত কিছু নিয়ম-পদ্ধতি ও আদব। কিন্তু এ সফর যদি হয় হজ কিংবা ইবাদতের উদ্দেশে তবে সফরকারীর জন্য রয়েছে বেশ কিছু আদব-নিয়ম ও করণীয়। কী সেই সব আদব-নিয়ম ও করণীয়?
পরিবার-পরিজন ও জন্মভূমি ত্যাগ করে দূরে কোথায় যাওয়ার নাম সফর। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যভেদে সফর অনেক রকমের হতে পারে। তা হতে পারে দ্বীনের জন্য আবার হতে পারে দুনিয়ার জন্য। তাই মানুষের সফরের উদ্দেশ্য যেমন হবে, তার সফরের হুকুম-বিধান এবং সফরের প্রাপ্তি ও প্রতিদানও সে রকম হবে।
< অবস্থাভেদে সফর হয় ৩ ধরনের। তাহলো- সাওয়াবের সফর, বৈধ সফর এবং অবৈধ সফর। যেমন-
১. সফর যদি ইবাদতের উদ্দেশে হয়; তবে তা সাওয়াব হিসেবে পরিগণিত হবে। তাহলো- হজ, ওমরাহ কিংবা আল্লাহর কাজে জেহাদ বা কল্যাণের কাজে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার সফর।
২. সফর যদি বৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য হয়; তবে তা বৈধ সফর হিসেবে গণ্য হবে। আর বৈধ ব্যবসার কাজে সফর করা বৈধ।
৩. যে কোনো হারাম কাজের উদ্দেশে সফর করাও হারাম বা অবৈধ। যেমন যে কোনো পাপ বা অন্যায় বা জুলুম করার উদ্দেশে সফর।
হজ বা ইবাদতের সফরের করণীয়
হজ, ওমরাহ কিংবা ইবাদতের সফরে রয়েছে কিছু করণীয়। যা মেনে সফর করার নির্দেশ দেয় ইসলাম। তাহলো-
১. সফরের নিয়তের বিশুদ্ধতা
হজ, ওমরাহ কিংবা ইবাদতের উদ্দেশে সফর আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে বিশুদ্ধ নিয়তে হতে হবে। এ সফরের যাবতীয় কথা, কাজ এবং ব্যয় সব কিছুতেই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য থাকতে হবে। নিয়তে বিশুদ্ধতা থাকলে ওই ব্যক্তির জন্য থাকবে-
সাওয়াব বা নেকির নিশ্চয়তা।
গোনাহ মাফের নিশ্চয়তা এবং
মর্যাদা বৃদ্ধির নিশ্চয়তা।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিসের দিকে লক্ষ্য করলেই তা বুঝা যায়। তাহলো-
হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দেশ্য করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
وَإِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا أُجِرْتَ بِهَا، حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِي فِي امْرَأَتِكَ তুমি যে কোনো খরচে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা কর; তবে তাতে তোমাকে তার নেকি বা প্রতিদান দেওয়া হবে। এমন কি যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেবে তাতেও নেকি বা প্রতিদান রয়েছে। (বুখারি ও মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা যেসব কথা ও কাজ হালাল করেছেন তা মেনে চলা এবং যেসব কথা ও কাজ হারাম করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। চাই তা ঘরে অবস্থানের সময় হোক কিংবা সফরে। যেমন-
সফরের সময় যেখানে নামাজের সময় হবে, সেখানে (সম্ভব হলে) জামাআতে (৫ ওয়াক্ত) নামাজ আদায় করা।
সফরের সময় নিজ নিজ সফরসঙ্গীদের কল্যাণ কামনা করা।সফরের সময় অবস্থা ও অবস্থানভেদে সৎ কাজের উপদেশ এবং অন্যায় কাজে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি কৌশলের সঙ্গে উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা।হারাম কথা ও হারাম কাজ হতে বিরত থাকা। তা হতে পারে মিথ্যা, গীবত (পরনিন্দা), চুগোলখোরী, প্রতারণা এবং বিশ্বাসঘাতকতাসহ আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণের অন্যান্য সব কাজ থেকে বেঁচে থাকা।