যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

হজ পালনে পূর্ণতা পায় আল্লাহপ্রেম

পবিত্র কোরআনে আল্লাহর গুণ ও কর্ম, নিয়ামত ও নিদর্শন বিষয়ক বিবরণ বারবার এসেছে। এসব বিবরণ অন্তরে প্রেম ও ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে। কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর গুণবাচক বিবরণগুলো না থাকলে এই দ্বিন ও ধর্ম কেবল জড় পদার্থের মতো হয়ে পড়ত। তখন দ্বিনের অনুসারীদের ওপর এর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকত না। দ্বিনের প্রতি তাদের অন্তরে থাকত না আবেগ-অনুভূতি ও প্রেম-ভালোবাসার ঝড়। নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত, বিনম্র অন্তর, অশ্রুসিক্ত চোখ, কান্নাভরা দোয়া, আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা এর কোনো কিছুই থাকত না। রবের সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক হয়ে পড়ত নিষ্প্রাণ আনুষ্ঠানিকতানির্ভর। তাতে থাকত না কোনো প্রাণসঞ্জীবনী শক্তি। থাকত না আবেগ ও অনুভূতির আবেশ এবং প্রাণবন্ত সম্পর্কের পরশ। তখন হারিয়ে যেত জীবনের বর্ণিল রূপ। হারিয়ে যেত জীবন ও মৃত্যুর সুবিশাল পার্থক্য। মানুষ ও জড় পদার্থের মধ্যে তফাত কী হতো তখন?

তাই মহান আল্লাহর ভালোবাসায় পূর্ণ থাকে মুসলিমের অন্তর। আর তা সজীব রাখতে কিছু দিন পরপর প্রয়োজন হয় অন্তরের আহার ও আবেগের পাথেয়। অন্তরে প্রেম ও ভালোবাসার পাত্র পূর্ণ রাখতে দরকার হয় এমন কিছুর, যা মানুষের মনের প্রেমের তৃষ্ণা নিবারণে সহায়ক হবে। মূলত প্রেম সুস্থ মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। মানুষ সব সময় এমন কিছু খোঁজে যার মাধ্যমে নিজের প্রয়োজন ও তৃষ্ণা মেটানো যায়। আর পবিত্র বাইতুল্লাহ ও এর আশপাশের নিদর্শন, হজ ও এর পুরো কার্যক্রম মানুষের আগ্রহকে বাস্তবায়ন করে এবং প্রেম ও আবেগকে প্রশান্ত করে।হজ পালন প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন, স্মরণ করুন, যখন আমি ইবরাহিমের জন্য সেই ঘরের স্থান নির্মান করেছি তখন বলেছিলাম, আমার সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না এবং আমার ঘরকে পবিত্র রাখো তাওয়াফকারী, নামাজ আদায়কারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য। আর আপনি মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দিন, তারা আপনার কাছে আসবে হেঁটে, সব ধরনের ক্ষীণকায় উটের পিঠে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। যেন তারা কল্যাণের স্থানগুলো প্রত্যক্ষ করে এবং তিনি তাদের রিজিক হিসেবে যে চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর ওপর তারা যেন নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে, অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কোরো এবং দুস্থ ও অভাবগ্রস্তকে আহার করাও। অতঃপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাদের মানব পূর্ণ করে এবং প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করে। (সুরা হজ, আয়াত : ২৬-২৮)

রবের প্রেমের সূক্ষ্ম বিষয়টি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ভাষায় তুলে ধরেছেন হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজালি (রহ.)। তিনি লিখেছেন, আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের অনুরাগ মানুষকে নানা উপায় খুঁজতে বাধ্য করে। কারণ স্বভাবগতভাবেই প্রেমিকার কাছে পৌঁছে দেয় এমন সব উপায়ের প্রতি মানুষ খবুই আগ্রহবোধ করে। যেহেতু পবিত্র কাবাঘর আল্লাহর নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহপ্রেমিকরা এই ঘরের প্রতি প্রবল আকর্ষণবোধ করবে। তা ছাড়া এই ঘর দর্শনের জন্য অফুরন্ত সওয়াবের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। (ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন, ২৪/১)

শায়খুল ইসলাম শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবি (রহ.) একই কথা উল্লেখ করে এটিকে হজের মৌলিক রহস্য হিসেবে বলেছেন। তিনি লিখেছেন, অনেক সময় মহান রবের প্রতি মানুষের প্রেম অনেক গভীর হয়ে থাকে। তখন তার এমন কিছুর প্রয়োজন হয়, যার মাধ্যমে তার প্রেমের পূর্ণতা পায়। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ৫৯/১)