যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন

মান-অভিমান নিয়েই মানুষের জীবন। সব সময় একজন মানুষের মনোভুবন এক রকম থাকে না, সেখানে আসে কালবৈশাখী ঝড়, মনোমালিন্যের তুমুল বৃষ্টি। আবার কখনো উদিত হয় সুখের রংধনু। মনোজগতের খারাপ সময় থেকে উত্তরণের জন্য একজন মানুষের প্রয়োজন হয় অন্যের সহানুভূতি ও ভালোবাসার।  ইসলাম ভালোবাসাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখে, মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও ভালোবাসার প্রতি প্রবলভাবে উৎসাহিত করে।

ইসলামে নিষিদ্ধ হলো নানা দুর্ঘটনার জন্ম দেওয়া ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিবাহবহির্ভূত তথাকথিত প্রেম-ভালোবাসা। এ ছাড়া ইসলামে মুসলমানদের পারস্পরিক ভালোবাসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে নানাভাবে। এই ভালোবাসা হয় শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যারা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য পরস্পরের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক রাখে, একে অপরের সঙ্গে বসে, একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং একে অপরের জন্য খরচ করে; তাদের জন্য আমার মহব্বত ও ভালোবাসা ওয়াজিব হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২০৩০, তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯০)

এ জন্য মুসলিম নারীরা পরস্পরে এবং মুসলিম পুরুষরা একে অন্যকে সাহায্যপূর্ণ ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা মুমিন হিসেবে কর্তব্য। ঈমানের অপার্থিব স্বাদ পেতে হলেও এই ভালোবাসার প্রয়োজন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি গুণ যার মাঝে বিদ্যমান সে ঈমানের স্বাদ পায়। 

১. যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অন্য সব বস্তু থেকে বেশি প্রিয়। ২. যে একমাত্র আল্লাহর জন্যই কোনো বান্দাকে ভালোবাসে। ৩. আল্লাহ তাআলা কুফর থেকে মুক্তি প্রদানের পর যে কুফরে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতোই অপছন্দ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ২১)

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্যই শত্রুতা পোষণ করে, আল্লাহর জন্যই কাউকে কিছু প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্যই কিছু প্রদান করা থেকে বিরত থাকে; সে ব্যক্তি তার ঈমান পরিপূর্ণ করল।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৭)

একজন মুসলিমের পরম আরাধ্য এই ভালোবাসা সে কিভাবে অর্জন করতে পারে, এ বিষয়ের দিকনির্দেশনাও রয়েছে হদিসে। নিচে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হলো—

সালাম প্রদান

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানদার ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের বলে দেব না যে কী করলে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা তোমাদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯৮)

হাদিয়া বা উপহার প্রদান

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা একজন অন্যজনকে উপহার দাও। উপহার মনের ময়লা দূর করে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২১৩০)

তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বা উপহার আদান-প্রদান করো, তাহলে তোমাদের পারস্পরিক মহব্বত সৃষ্টি হবে।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৯৭)

হাদিয়া ছোট কোনো বস্তু দিয়েও হতে পারে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীকে বকরির পায়ের এক টুকরা ক্ষুর হলেও তা উপহার দিতে যেন অবহেলা ও তুচ্ছ মনে না করে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২১৩০)

ক্ষমা করা

মানবীয় মহৎ গুণাবলির অন্যতম হলো ক্ষমা করা। এর মাধ্যমে ক্ষমাকারী ব্যক্তি যেমন আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করে, পাশাপাশি মানবকুল ও মহান রবের প্রিয় বান্দা হয়ে ওঠে। ক্ষমার ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘বস্তুত ক্ষমা করাই তাকওয়ার বেশি নিকটবর্তী।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৭)

যিনি আল্লাহর ভালোবাসা পেয়ে গেলেন, তিনি যে মানবকুলের ভালোবাসা পাবেন, এটা তো বলাই বাহুল্য। এর সপক্ষে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৬)