অজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর
No icon

প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীবাসীর প্রতি সতর্কবার্তা

বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো তথা যাবতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীবাসীর প্রতি সতর্কবার্তা নিয়ে আসে। আল্লাহ তায়ালা এসবের মাধ্যমে জগতবাসীকে পরীক্ষা করে থাকেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্বিপাকে বিপর্যস্ত মানুষের প্রতি সচ্ছল নিরাপদ মানুষের কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে যাওয়া প্রতিটি বিবেকবান মানুষের অবশ্য কর্তব্য। মানবতার অপূর্ব শিক্ষালয় ইসলামে রয়েছে এ ক্ষেত্রে অসাধারণ কার্যকরী দিকনির্দেশনা।
আর্তমানবতার সেবায় ইসলামের ভূমিকা সর্বাগ্রে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে জোর তাগিদ ও উৎসাহ দিয়েছে। বিপদগ্রস্তের সাহায্য ও অসহায়ের সহযোগিতা করা ইসলামের মহৎ ও মৌলিক শিক্ষা। মানবতাবোধ, সহমর্মিতা, স্বার্থহীন পরোপকার ও সহানুভূতি ইত্যাদি ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা। সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও মানবজাতির পথপ্রদর্শক প্রিয়নবী সা:-কে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির করুণাস্বরূপ পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি ’ (সূরা আম্বিয়া-১০৭)।

বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা সর্বোচ্চ প্রতিদান দেবেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ। প্রতিটি শীষে রয়েছে ১০০ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ’ (সূরা বাকারা-২৬১)।
অসহায়দের সাহায্য করলে জিহাদের নেকি
দরিদ্রক্লিষ্ট বনি আদম ও অসহায় নারীদের সাহায্য করতে প্রিয়নবী সা: অনেক বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবং সে ওই নামাজ আদায়কারীর মতো যার ক্লান্তি নেই এবং ওই রোজা পালনকারীর মতো, যার রোজায় বিরাম নেই’ (বুখারি-৬০০৭)।
অসহায়কে সহযোগিতা করলে বিনিময় দেবেন আল্লাহ
অসহায়, পীড়িত, ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত ও বিপদাক্রান্ত মানুষকে সহযোগিতা করলে আল্লাহ উভয় জগতে প্রতিদান দেবেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে মুমিন কোনো মুমিনের ক্ষুধা নিবারণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে মুমিন কোনো মুমিনের তৃষ্ণা দূর করেছে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন মোহরাঙ্কিত জান্নাতি সুধা থেকে পান করাবেন। যে মুমিন কোনো মুমিনকে বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের উন্নতমানের সবুজ কাপড় পরাবেন’ (তিরমিজি-২৩৮৬)।
মানবসেবা, দুস্থদের সাহায্য ও অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ইসলামের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘কিয়ামতের দিন নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রƒষা করোনি। ’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব। আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কিভাবে আমি আপনার শুশ্রƒষা করব? তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তুমি তার সেবা করোনি। তুমি কি জান না, যদি তুমি তার শুশ্রƒষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে? ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কিভাবে আপনাকে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানো না যে, তুমি যদি তাকে খাবার খাওয়াতে আজ তা পেতে? হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, আপনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক, কিভাবে আপনাকে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে, তবে নিশ্চয়ই আজ তা পেতে’ (মুসলিম-৬৭২১)।