ছোট বাচ্চাকে আকৃষ্ট করতে যেভাবে নসিহত করা হয়; প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জবানের হেফাজতের নসিহত পেশ করেছেন। কেননা শান্তি ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি মানুষের জবানের নিয়ন্ত্রণ। এটি অনেক বড় আমল। যে ব্যক্তি জবানের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবে স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছেন, হে মুয়াজ! নিজের জবানকে নিয়ন্ত্রণ কর। এটাই আমার পুরো শরিয়ত। আর এতেই রয়েছে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন।বর্তমান সময়ে জবানের হেফাজতের গুরুত্ব অনেক বেশি। সমাজের প্রতিটি স্তরে যতবেশি সমস্যা হচ্ছে, তার বেশির ভাগই হচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীন বেফাস কথাবার্তার জন্য। কথার সামঞ্জস্যতা না থাকার জন্য। দুনিয়া ও পরকালের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য জবাবের হেফাজতের বিকল্প নেই।
আর মুমিনের জন্য দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন কাজই হলো- জবানের হেফাজত বা নিয়ন্ত্রণ করা। এ কারণেই শিশুর কচি অন্তরে গেঁথে থাকতে যেভাবে নসিহত করা হয়, সেভাবেই প্রিয় নবি তাঁর সাহাবিকে ছোট শিশুকে নসিহত করার মতো করেই জবানের হেফাজতের নসিহত করে পুরো উম্মতে মুহাম্মাদিকে জবানের হেফাজতের শিক্ষা দিয়েছেন, জবান নিয়ন্ত্রণে উৎসাহিত করেছেন।অসংযত কথাবার্তার কারণেই সমাজের প্রতিটি স্তরে অশান্তির আগুন জ্বলছে। সে কারণে প্রত্যেক মানুষের জবানের হেফাজত করা খুবই জরুরি। আর তাতে মিলবে দুনিয়া ও পরকালের শান্তি ও নিরাপত্তা।কথাবার্তায় সবাই সংযত হলে ঘরে-বাইরে, স্বামী-স্ত্রী, বউ-শাশুরি, শ্রমিক-মালিক, প্রতিবেশি কিংবা গ্রামবাসী- কারো মাঝেই কোনো অশান্তি ও কলহ-বিবাদ থাবে না। ঝগড়া-বাকবিতণ্ডার মাঝে দুটি পক্ষের মধ্যে যে কোনো একজন জবানের নিয়ন্ত্রণ করলেই খুব দ্রুত শান্তি বিরাজ করবে।তাই একজন জবানের নিয়ন্ত্রণহীন হলে পড়লে শান্তির জন্য অন্য জনের জন্য চুপ থেকে জবানের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। তবেই প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ ভুবনে, ঘরে, পরিবারে জান্নাতি পরিবেশ বিরাজ করবে।
জবানের হেফাজতের করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে ছোট্ট এ আমলটির কথা বার বার তুলে ধরেছেন। হাদিসে এসেছে-
১. রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,সেই ব্যক্তিই তো প্রকৃত মুসলমান, যার নিজের হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ। অর্থাৎ মুখ ও হাত দ্বারা কেউ কাউকে কষ্ট দেয় না।
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, আল্লাহর কসম! ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয় এ কথা তিনি তিনবার বললেন। তিনি বললেন, যেই ব্যক্তি নিজের পাড়া-প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়, সে ঈমানদার নয়। যেই ব্যক্তি নিজের সাথী-সঙ্গীকে কষ্ট দেয়, সে ঈমানদার নয়।
এখানে মদপান করা, নামাজ ছেড়ে দেয়া, জিনা ব্যভিচারকারি ও জুয়া খেলা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করা হয়নি। বরং মুখের অনিষ্টা ছড়ানো ব্যক্তির ব্যাপারে এ কথা বলা হয়েছে।
সুতরাং মুমিন মুসলমানরে জন্য সতর্কা হলো- কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না, গালিগালাজ করা যাবে না। কটু কথা বলা যাবে না। মন্দ কথা বলা যাবে না। এক কথায় মুখ দ্বারা কষ্ট দেয়া যাবে না। সে জন্য প্রয়োজন্য নিজ নিজ জবানের হেফাজত করা। তবেই জান্নাতের হেফাজতের দায়িত্বে থাকবে স্বয়ং বিশ্বনবি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিহ্বা বা জবানের হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। জবানের নিয়ন্ত্রণের ছোট্ট আমলটি নিজেরে মধ্যে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। নিজেকে প্রকৃত ঈমানদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে জান্নাতের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।